মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে শেষ হয়েছে কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে আয়োজন। সে আয়োজন ছিল জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে।
সন্ধ্যার এ আয়োজনে কবিতা পাঠ করেন প্রায় ৪০ জন কবি। আবৃত্তি করেন বিভিন্ন লেখকের বিশিষ্ট কবিতা। আর এই কবিদের মাঝে কবিদের নিয়ে পৌরহিত্য করেন বিশিষ্ট সংস্কৃতিজন নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু।
প্রথমেই কবিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে মঞ্চে আসেন কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুব বোরহান, মুক্তিযোদ্ধা ও ছড়াকার আলম তালুকদার, কবি ফরিদ কবির, অনুবাদক-কবি ফরিদা মজিদ এবং বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের সম্পাদক কবি জুয়েল মাজহার। এসময় তাঁরা স্মৃতিচারণ, শুভেচ্ছাজ্ঞাপন কবিতা আবৃত্তি এবং পাঠের মধ্য দিয়ে কবিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান।
কবি সঞ্জীব পুরোহিতকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে ড. মাহবুব বোরহান বলেন, কবিতায় সবসময় সব কথা বলা যায়না। বলা না বলা মিলিয়েই থাকে কবিতা। তেমনি আজকের আয়োজন। আর আগস্ট আমাদের শোকের মাস, তাই আগস্টের কোনো আয়োজনে যেতে মন সায় দেয় না। কিন্তু জীবন বেপরোয়া। সে কোনো বাধা মানে না। কবি সঞ্জীবপুরোহিতও ঠিক সেরকম একজন বেপরোয়া মানুষ।
মুক্তিযোদ্ধা ও ছড়াকার আলম তালুকদার বলেন, সঞ্জীব একজন চিরঞ্জীব মানুষ। তার শক্ত কিছু ভিত আছে। নিজস্ব একটা ধারা আছে। আর সেই ধারার মধ্য দিয়েই তাকে আলাদা করে চেনা যায়।
কবি ফরিদ কবির বলেন, আমার মাঝে মাঝে নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে হয় যে, আমি সঞ্জীবের সময় জন্মেছি। কেননা কবিতায় ছোট বড়দের যে ভাগটি আছে, সেটি থাকলে আমি সঞ্জীবকে হয়তো হারিয়ে ফেলতাম। সঞ্জীব একটা কুঁড়েঘরের মতো ছিল, যেটা আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। আর এই বড় হওয়াটা আরও অনেক বেশি বড় হোক।
এসময় তিনি ‘ট্রেন’ নামক কবিতাটিও পাঠ করেন। তার পরেই কথা বলেন ফরিদা মাজিদ।
তিনি বলেন, সঞ্জীবের সংগঠনের নাম দাঁড়কাক। কাকেরা অনেক বছর বাঁচে। সঞ্জীবের সংস্পর্শে আমারও নিজেকে দাঁড়কাক মনে হয়, কেননা আমিও অনেকগুলো দিন বেঁচে আছি।
এরপরই মঞ্চে আসেন বাংলানিউজ-এর সম্পাদক কবি জুয়েল মাজহার। নিজেদের বন্ধুত্বের পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, দীর্ঘ বছরের অটুট বন্ধুত্ব আমাদের। একসময় আমরা প্রচুর আড্ডা দিতাম। আমাদের মধ্যে অনেক অমিল আছে। তবে বন্ধুত্বের জায়গায় মিল ভীষণ। সঞ্জীবের কাছ থেকে প্রেরণা পাই। ওর হাসি কথা, কবিতা ভেতরে আন্দোলিত করে,একটা স্বতঃস্ফূর্ততা জন্ম দেয়।
এসময় তিনি কবি সঞ্জীবকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। পাশাপাশি নিজের লেখা কুট্টি ভাষায় রচিত কবিতাও (চান্নিপশর রাইতে লৌড়) পাঠ করে শোনান কবি জুয়েল মাজহার।
কবি ফারুক মাহমুদ বলেন, সঞ্জীবের কবিতা সচরাচর খুঁজে পাওয়া যায় না। হয়তো লিখেন কিন্তু পাঠকের কাছে আসে না। আমরা আরও বেশি করে তার কবিতা চাই।
এরপর কবিকে জানানো হয় ফুলেল শুভেচ্ছা। কবিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান কবির ভাগ্নে জাইম, কবি ও কথাশিল্পী নাসরিন শাম্মী, ফারুক সুমন, আহমেদ শিপলু, কানিজ লাভলী এবং জোনায়ে হোসেন প্রতীক।
শুভেচ্ছার পর কবি বন্ধুরা কবির একটি ম্যুরাল উন্মোচন করেন। যা কবির জীবদ্দশায় তৈরি করে দেন মণীন্দ্র পাল। এরপরে প্রদর্শন করা হয় একটি প্রামাণ্যচিত্র। এতে কবিকে নিয়ে কথা বলেছেন, মন্তব্য করেছেন এবং জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অনেকেই।
এদের মধ্যে ছিলেন- কবি অমিতাভ পাল, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী, সহকারী পরিচালক ফারহান ইশরাক, পদক্ষেপ বাংলাদেশের পরিচালক বাদল চৌধুরী, সাহিত্যসমালোচক ফিরোজ রশীদ বাবু, কবি ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক মাহবুব বোরহান, কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু, অধ্যাপক ড. সন্তোষ ঢালী, আমিনুর রহমান সুলতান,ড. সরকার আমিন, কবি সুমুদ্র গুপ্তসহ আরও অনেকে।
তারা জানান, কবি সঞ্জীব পুরোহিতের একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে। ব্যতিক্রমী কবিসত্তার অধিকারী এই মানুষটির রয়েচে চুম্বকীয় বলয়ের প্রতিভা। তিনি খুব সহজেই অপরিচিতকে আপন করে নিতে পারেন। কাজ করেছেন শিশুদের জন্য। তার কবিতার জীবনবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি অন্যকে জাগিয়ে দেয়। আর সবথেকে বড় কথা তিনি নানা গুণে গুণান্বিত একজন মানুষ।
প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের পরেই আবারও শুরু হয় কবিতা পাঠের আসর। এ পর্যায়ে স্বরচিত কবিতা এবং কবিতা আবৃত্তি করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, কবি ফারুক সুমন, ফরিদ আহমদ দুলাল, আহমেদ নকীব, কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু, গিরিশ গৈরিক, রিফাত বিন্তে ওয়াহিদ, আব্দুর রাজ্জাক, মামুন খান, অভিলাষ দাস, সেঙ্গাল বিপ্লব, রশিদ কামাল, সোহরাব সুমন, অধ্যাপক দেওয়ান মিজান, মনিরা মিমো এবং কবি ফরিদ ভূঁইয়া।
কবিতা পাঠের মাঝেই কবির হাতে বই ও চিত্রকর্ম উপহারস্বরূপ তুলে দেন চিত্রশিল্পী শেখ আসমান এবং কবি সন্তোষ ঢালী। এরপর সবার প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আয়োজনের মধ্যমণি সঞ্জীব পুরোহিত। জানান, সবার ভালোবাসায় সিক্ত তিনি।
আর সবার ভালোবাসায় সিক্ত এই মানুষটিকে শিশুর সঙ্গে তুলনা করেন আয়োজনের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। তিনি বলেন, শিশুদের মনোজগৎ স্বাধীন। তেমনি স্বাধীনভাবে চলাফেরা করেন সঞ্জীব পুরোহিত। শিল্পের বিভিন্ন মাধ্যমে তার বিচরণ। বিশেষ করে চিত্রশিল্পে তার দক্ষতা অনেক। তবে আমার মনে হয় তিনি একজন পুরোদস্তুর কবি। তার আচরণ, চলাফেরা একটি শিশুর মতো। আর এভাবেই যেন তিনি পার করেন তার জীবনের বাকিটা সময়। আয়োজনের এ পর্যায়ে তিনি সঞ্জীব পুরোহিতের একটি কবিতার চুম্বক অংশ পাঠ করেন। কণ্ঠে আনেন ‘এরপর একদিন সত্যি সত্যি বাঘ এলো...’।
বাঘের মতো এই মানুষটিকে নিয়ে যে আয়োজন, তার সঞ্চালনা করেন কবি হাসান মাহমুদ এবং আহমেদ শিপলু। বন্ধুসুলভ ঘরোয়া আয়োজন শেষে সবাই মনে অনাবিল প্রশান্তি নিয়েই ঘরে ফেরেন। সেই প্রশান্তিতে কবিতাকে ভালোবাসা মানুষগুলো কাটিয়ে দেবে আরও অনেকটা সময়, এমনটাই প্রত্যাশা ছিল সবার মুখে।
বাংলাদেশ সময়: ০০১৭ ঘণ্টা, আগষ্ট ২৭, ২০১৯
এইচএমএস/এসএ