শনিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে বরিশাল নগরের রায় রোডে খেয়ালী থিয়েটারের কর্মবীর আবদুল খালেক খান গণপাঠাগারে ‘জীবনানন্দ পুরস্কার-২০১৯’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মত তুলে ধরেন।
বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে কবি জুয়েল মাজহার ও কথাসাহিত্যিক আবদুল মান্নান সরকারকে এবারের জীবনানন্দ পুরস্কার।
প্রধান অতিথি বলেন, ‘জীবনানন্দ পুরস্কার-২০১৯’-এ যে দুই লেখককে পুরস্কৃত করা হয়েছে, তারা তাদের নিমগ্ন সাধনায় নিজের জায়গাকে উজ্জ্বল করার চেষ্টা করেছেন। অনবরত নিজের শ্রম ও মেধা দিয়েছেন এবং সৃজনশীলতার বিকাশের জন্য নিজের জায়গাটা পরিচর্যা করেছেন। আর যারা এ আয়োজন করেছেন তারা সামগ্রিকভাবে কবি জীবনানন্দ দাশকে শুধু স্মরণ করা নয়, তারা এখানে নিজেদের যুক্ত করে সাহিত্যের বলয় তৈরি করেছেন। যে বলয়ের ভেতর দিয়ে তৈরি হবে আমাদের আগামী প্রজন্ম।
পুরস্কারপ্রাপ্ত দু’জনকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে এ কথাসাহিত্যিক বলেন, আমাদের সাহিত্য মানুষে মানুষে সম্প্রীতির জায়গা তৈরি করেছে। আজ যারা পুরস্কৃত হলেন, তারা যেমন আনন্দিত এবং যারা এখানে ভিন্ন দেশ থেকে এসে বাংলা ভাষায় বক্তৃতা করলেন, তারাও আনন্দিত। আবার যারা এ আয়োজনে শ্রম দিয়েছেন তারাও আনন্দিত। আমরা এই আনন্দের মাত্রাটুকু ঘরে নিয়ে ফিরবো। কিন্তু আমাদের ঘরের দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকতে হবে। যে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে সীমান্তহীন সাহিত্যের অনাবিল বাতাস। যে বাতাসে বসন্তের সৌরভ থাকবে। আলোকিত হবে পরবর্তী প্রজন্ম।
পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি জুয়েল মাজহার তার বক্তব্যে বলেন, আমি কবিতা লিখেছি বিধায় বাংলা সাহিত্যের গতিপ্রকৃতি বেড়েছে এমন নয়। মানুষের কথা, বাইরের কবিতা বা লেখা আমাকে আলোড়িত করলে তা কবিতার ভাষায় অনুবাদ করি আমি এবং সেটি আমার ভেতর দিয়ে করি। কবিতা লিখতে লিখতে আমার কাছে মনে হয়েছে- যতদিন গিয়েছে ততদিন লেখাটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমার সৌভাগ্য, আমার পরিবার লেখালেখিতে বাধ সাধে না। সেজন্য তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। যে যোগ্য নয় তাকে যদি গর্বের কিছু ছুড়ে দেওয়া হয়, সেও তা সাদরে গ্রহণ করবে। আমি খুবই আপ্লুত এবং গর্বিত, জীবনানন্দ পুরস্কার সানন্দে গ্রহণ করছি, ভালোবাসার উপহার হিসেবে। কারণ আমি মনে করি, কবিতায় আমার চেয়ে অন্য যোগ্যতর কেউ এই পুরস্কার পেতে পারতেন।
কবি বলেন, আমি যখন ভবঘুরে জীবন কাটিয়েছি, তখন যে কবি আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন সঙ্গ দিয়েছেন, তিনি জীবনানন্দ দাশ। আর এটি কাকতালীয় ব্যাপার, জীবনানন্দ পুরস্কার আমি লাভ করেছি।
আড্ডা ধানসিড়ির আয়োজনে এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নিখিলেশ রায়। সভাপতিত্ব করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক কবি শামীম রেজা।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তফা তারিকুল আহসান, কবি দীপঙ্কর চক্রবর্তী, আসমা চৌধুরী, কবি সন্তোষ সিংহ, কবি গাজী লতিফ, চঞ্চল বাশার, হিজল জোবায়ের, মিছিল খন্দকার প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্ত দু’জনসহ চার মহীরুহ সাহিত্যিকের সাহিত্যকর্মের ওপর বীক্ষণাত্মক প্রবন্ধমালা দিয়ে সাজানো ছোটকাগজ ‘ধানসিড়ি’র অষ্টম সংখ্যার মোড়ক উন্মোচনও করা হয়। জুয়েল মাজহার ও আবদুল মান্নান সরকার ছাড়া বাকি যে দুই সাহিত্যিক এতে স্থান পেয়েছেন, সে দু’জন হলেন ক্লাসিক সাহিত্যিক হিসেবে কবি আহসান হাবীব ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের কথাসাহিত্যিক গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ।
এর আগে, সকালে ‘জীবনানন্দ পুরস্কার-২০১৯’ প্রদান অনুষ্ঠানের দুই পর্বের প্রথমার্ধের আয়োজন হয়। ‘কবিতার আসর’ শিরোনামে স্বরচিত কবিতা পাঠ ও আড্ডার ওই আয়োজন শুরু হয় সকাল ১০টার দিকে। শেষ হয় দুপুর সাড়ে ১২টায়। বিরতি দিয়ে বিকেল ৪টায় শুরু হয় দ্বিতীয় পর্ব অর্থাৎ ‘ধানসিড়ি’র মোড়ক উন্মোচন ও পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৯
এমএস/এইচএ/