ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

কংক্রিটের শহরে ছড়িয়ে পড়লো লোকগানের সুর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৯
কংক্রিটের শহরে ছড়িয়ে পড়লো লোকগানের সুর গান পরিবেশন করছেন দালের মেহেন্দি। ছবি: রাজীন চৌধুরী

আর্মি স্টেডিয়াম থেকে: বছরের অপেক্ষা শেষ। কংক্রিটের শহরে আবারও ছড়িয়ে পড়লো লোকগানের সুর। কখনও সিলেটের বিচ্ছেদি সুর, কখনও আবার জর্জিয়ার মেঠো পথের। সুরে সুরে ছিল বন্ধুর প্রতি আবেগের কথা। ভাঙড়ার সুরে নেচে উঠলো মন-প্রাণ।

এসব নিয়েই বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত উৎসবের প্রথম দিনের ইতি ঘটলো। আসছে দু’দিনের আমন্ত্রণ জানিয়েই শেষ হলো প্রথম দিনের আয়োজন।

বৃহস্পতিবার বিকেল গড়াতেই উৎসব প্রাঙ্গণ বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে ভিড় জমাতে শুরু করেন সঙ্গীতপ্রেমীরা। তাদেরকে সাক্ষী রেখে সন্ধ্যায় নূপুরের ছন্দে শুরু হয় ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত উৎসবের পঞ্চম আসর।

গেলো চার বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও এ উৎসবের আয়োজন করেছে সান কমিউনিকেশন। বাংলাদেশসহ ছয় দেশের দুই শতাধিক শিল্পী ও কলাকুশলী অংশ নিচ্ছেন।

নৃত্যদল ভাবনার পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রথম দিনের আনুষ্ঠানিকতা। সামিনা হোসেন প্রেমার পরিচালনায় দলটি পরিবেশন করে সিলেট অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ধামাইল নৃত্য। শুরুতেই দলটি ‘বন্ধু বিনে প্রাণ বাঁচে না’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে। এরপর একে একে আরও বেশ কয়েকটি নাচের মধ্য দিয়ে নিজেদের পরিবেশনা শেষ করে নৃত্যদলটি।

এরপর জর্জিয়ার মেঠোপথের সুর রাজধানীর বুকে নিয়ে হাজির হয় জর্জিয়ার লোকসঙ্গীতদল শেভেনেবুরেবি। ভাঙা ভাঙা বাংলায় দলটি শুরুতেই দর্শককের উদ্দেশ্যে বলে উঠে- ‘তোমরা কেমন আছো? আমরা ভালোবাসি বাংলাদেশ। ’ সংক্ষিপ্ত আলাপন সেরে আট সদস্যের দলটি আঙুল ছুঁইয়ে দেয় জর্জিয়ার লোকজ বাদ্যযন্ত্রে। ৪০ মিনিটের পরিবেশনা পুরোটা জুড়েই তাদের পাশে ছিলেন দর্শকরা। মুর্হুমুর্হু করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠে চারপাশ। গান পরিবেশন করছেন দালের মেহেন্দি।  ছবি: রাজীন চৌধুরীএরপর শুরু হয় উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা। উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, ঢাকা ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার এবং সান কমিউনিকেশনের চেয়ারম্যান অঞ্জন চৌধুরী।

উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে মঞ্চে আসেন বাংলাদেশের লোকগানের শিল্পী শাহ আলম সরকার। শুরুতেই তিনি গানে গানে হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক বাংলার বার্তা ছড়িয়ে দেন চারপাশে। এরপর তিনি গেয়ে শোনান ‘বিয়ে করা মানে জ্যান্ত প্রাণে মরা’, ‘এত যে নিঠুর বন্ধু জানা ছিলো না’, ‘পিরিত যতন পিরিত যতন’। ‘আমি তো মরে যাবো, চলে যাবো, রেখে যাবো সবই’- এ গানটির মধ্য দিয়ে নিজের পরিবেশনা শেষ করেন শাহ আলম সরকার।

শাহ আলম সরকারের পরিবেশনা শেষে মঞ্চে আসেন প্রথম দিনের প্রধান আর্কষণ ভারতের দালের মেহেন্দি। পাঞ্জাবের শষ্যের ঘ্রাণ নিয়ে তিনি মঞ্চে গেয়ে শোনান তার জনপ্রিয় সব গান। শুরুতেই  তিনি ‘বাহুবলী-দ্য বিগিনিং’ চলচ্চিত্রের টাইটেল ট্র্যাক ‘বাহুবলী’ গেয়ে শোনান। এরপর তিনি গেয়ে শোনান ‘বলো তানা রারা’, ‘হ্যায়ো রাব্বা হ্যায়ো রাব্বা’, ‘ম্যায় রাব রাব কারদি’, ‘সারি দিল দে দি কুড়িয়া’, ‘ও গোরি নাচেগি’, ‘গোরি নাল ইশক মিঠা’, ‘হোগায়ে তো বাল্লে বাল্লে’সহ তার জনপ্রিয় সব গান। সে সঙ্গে বলিউড চলচ্চিত্রগুলোর জনপ্রিয় গানগুলোর বেশকয়েকটি কোরাস তিনি পরিবেশন করেন।

মঞ্চে দালের মেহেন্দির পরিবেশনার সময় মাঠের দিকে তাকিয়ে দেখা যায় দারুণ এক দৃশ্যের। মাঠভর্তি হাজারও দর্শকের পা মাটি ছেড়ে শূন্যের দিকে। রুনা লায়লার 'মাস্ত কালান্দার' গান গেয়ে শোনান দালের মেহেন্দি এমনকি নিরাপত্তার কঠোর দায়িত্ব পালনকারীরাও ক্ষনিকের ছুটি নিয়েছিলেন। রঙিন পোশাকে মঞ্চে আসা দালের মেহেন্দির রঙিন পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম দিনের আনুষ্ঠানিকতা।

একটা কথা আছে, উৎসব শেষ হয়, তার রেশ থাকে আরও। ঠিক তেমনি ঘরে ফেরার পথে দর্শকদের কণ্ঠে শোনা গেলো দালের মেহেন্দির পরিবেশনার প্রস্তুতি। রুনা লায়লার 'মাস্ত কালান্দার' গান গেয়ে শোনান দালের মেহেন্দি। গান পরিবেশন করছেন দালের মেহেন্দি।  ছবি: রাজীন চৌধুরীশুক্রবার (১৫ নভেম্বর) উৎসবের দ্বিতীয় দিনে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন বাংলাদেশের মালেক কাওয়াল, ফকির শাহাবুদ্দিন, ম্যাজিক বাউলিয়ানার কামরুজ্জামান রাব্বি ও শফিকুল ইসলাম, পাকিস্তানের হিনা নাসরুল্লাহ এবং মালির হাবিব কইটে অ্যান্ড বামাদা।

শনিবার (১৬ নভেম্বর) সমাপনী দিনে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন বাংলাদেশের কাজল দেওয়ান ও চন্দনা মজুমদার এবং পাকিস্তানের ব্যান্ডদল জুনুন এবং রাশিয়ার সাত্তুমা।

আয়োজকরা জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলবে। অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশের জন্য দর্শকদের প্রতিদিন এন্ট্রি পাস দেখাতে হবে। হেডফোন, চার্জার বা পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে আর্মি স্টেডিয়ামে প্রবেশ করা যাবে না।   এছাড়া রাত ১০টার পর অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশদ্বার বন্ধ হয়ে যাবে।

উৎসব প্রাঙ্গণে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকছে না। তবে অনুষ্ঠান শেষে আর্মি স্টেডিয়াম থেকে দর্শকদের জন্য পাঁচটি ভিন্ন রুটে বাসের ব্যবস্থা রেখেছেন আয়োজকরা।

বাংলাদেশ সময়: ০১১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৯
ডিএন/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।