ঢাকা: সাহিত্যের সামগ্রিক অবদানের জন্য এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ পুরস্কার পেয়েছেন প্রবীণ কথাশিল্পী হাসনাত আবদুল হাই। একই সঙ্গে তরুণ সাহিত্য শ্রেণিতে এ পুরস্কার পেয়েছেন গল্পকার নাহিদা নাহিদ।
বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে বিজয়ীদের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। ক্রেস্ট, সনদপত্রের পাশাপাশি হাসনাত আবদুল হাই ও নাহিদা নাহিদ যথাক্রমে পাঁচ লাখ ও এক লাখ করে সম্মানী পেয়েছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অন্যদিন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম।
ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন বিচারকমণ্ডলীর প্রধান অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। বিচারকমণ্ডলীর অন্যান্য সদস্য ছিলেন সদ্য প্রয়াত কালি ও কলম সম্পাদক আবুল হাসনাত, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিশ্বজিৎ ঘোষ এবং কথাশিল্পী হরিশংকর জলদাস।
পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি ব্যক্ত করে হাসনাত আবদুল হাই বলেন, আমি প্রায় ১৫০টি বই লিখেছি। এগুলোর মধ্যে বড় মাপের কোনো বই নেই। কারণ, এত বইয়ের মধ্যে পাঠক কেবলমাত্র তিন-চারটি বইয়ের প্রশংসা করেন। যাতে আমি তৃপ্ত না। আমি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় লিখেছি। বলতে গেলে অনাধিকার চর্চা করেছি। যদি আমি বিশেষ কোনো শাখায় ধারাবাহিকভাবে লিখতাম তাহলে হয়তো ভালো লিখতে পারতাম।
তিনি বলেন, সম্প্রতি আমি উইলিয়াম শেকসপিয়রের ‘হ্যামলেট’ ও ‘ম্যাকবেথ’ এ দুই নাটককে এক করে ‘হ্যাম-বেথ’ নামে একটি নাটক লিখেছি। আমার আগে আর কেউ দুটি নাটককে এক করে লেখেনি। আমি বলতে চাই, এটাই আমার জীবনের সেরা লেখা।
নাহিদা নাহিদ বলেন, আমি উচ্ছ্বসিত, আপ্লুত। এ মঞ্চে দাঁড়াতে পেরে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। এ পুরস্কার আমাকে সাহস জোগাবে। মুকুট যেহেতু পড়েছি, সেটা ধরে রাখার চেষ্টা করব।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, হুমায়ূনকে আমরা শুধুই একভাবে দেখার চেষ্টা করি। তিনি ‘বাকের ভাই’ লিখেছেন, জনপ্রিয় নাটক লিখেছেন। কিন্তু এখানেই শেষ কথা না। তাকে নিয়ে সত্যিকার অর্থে বিচার বিশ্লেষণ এখনও হয়নি। তাকে জনপ্রিয় লেখক বলা হয়। হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয়তার পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। সেগুলো বিশ্লেষণ করা উচিৎ। তার মূল্যায়ন যথাযথভাবে এখনও হয়নি। যদিও আমাদের দেশে সবকিছু অনেক দেরিতে হয়।
কে এম খালিদ বলেন, হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের সবচেয়ে বড় দিক হলো, তা শেষ না করে ওঠা যায় না। মানুষ যত খারাপই হোক না কেন, প্রতিটি মানুষের মধ্যে কিছু ভালো দিক আছে, সেটা হুমায়ূন আহমেদ তার বইয়ের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।
মেহের আফরোজ শাওন বলেন, যারা এ সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন তাদের হুমায়ূন আহমেদ পরিবারে স্বাগত। এ পুরস্কার যারা সাহিত্যাঙ্গনে রয়েছেন তাদের অনুপ্রাণিত করবে।
২০১৫ সালে এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ পুরস্কার প্রবর্তিত হয়। প্রথম বছর দুই শাখায় এ পুরস্কার পেয়েছিলেন শওকত আলী ও সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম। ২০১৬ সালে পুরস্কৃত হয়েছিলেন হাসান আজিজুল হক ও স্বকৃত নোমান। ২০১৭ সালে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়েছিল জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত ও মোজাফ্ফর হোসেনের হাতে। ২০১৮ সালে পুরস্কৃত হয়েছিলেন রিজিয়া রহমান ও ফাতিমা রুমি। ২০১৯ সালে পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল রাবেয়া খাতুন ও সাদাত হোসাইনকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২০
ডিএন/এমজেএফ