ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

কবিতায় পুরনো শব্দকে ফিরিয়ে আনতে হবে: জুয়েল মাজহার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২১
কবিতায় পুরনো শব্দকে ফিরিয়ে আনতে হবে: জুয়েল মাজহার

ঢাকা: আমরা আমাদের পূর্বপুরুষের অনেক জিনকে যেমন বহন করি, তেমনি পূর্বপুরুষের অনেক শব্দকেও আমরা বহন করি। কিন্তু আমরা আমাদের ভাষার শরীর থেকে অনেক শব্দকে ঝেড়ে ফেলে দিচ্ছি, এটা আত্মধ্বংসী।

তাই নবীন কবিদের কবিতার মাধ্যমে পুরনো শব্দকে নতুন করে ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন, বাংলানিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক কবি জুয়েল মাজহার।

শনিবার (২৭ মার্চ) সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে অবস্থিত বাতিঘরে কবি মারুফ রায়হান সম্পাদিত একুশের সংকলনের প্রথম ‘কবি-অভিষেক’অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, আমরা ভাষার শরীর থেকে অনেক শব্দকে ঝেড়ে ফেলে দিচ্ছি, এটি আত্মধ্বংসী। বাইরের পৃথিবীর শব্দ যেমন আছে, আবার ঐতিহ্যের মধ্যে নতুন নতুন অনেক শব্দ যুক্ত হবে, গঠিত হবে। কিন্তু আমার অনেক শব্দকে বাতিল বলে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছি। আমাদের অতীতের গহ্বরে তলিয়ে গেছে অনেক শব্দের জাহাজ। আমি মনে করি, শব্দ কখনও পুরনো হয় না। সুধীন্দ্রনাথ দত্তের একটি কথা আছে, 'শব্দকে নতুন টাকার মতো বাজিয়ে দেখতে হবে’; পুরনো শব্দকেও। পূর্বপুরুষের উচ্চারিত অনেক শব্দ আমরা ফেলে দিয়েছি আধুনিকতার সম্মুলে। আমি মনে করি, ঐতিহ্যের ভেতর থেকে ঐতিহ্যের ভেতরে আগুন দিয়ে পুরনো শব্দকে আবার নতুন করে প্রাণ দেওয়ার যে কাজ সেটি আমাদের করতে হবে। আমি সেই দাবিটুকুই জানাবো।

তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি, শুধু সাম্প্রতিকতার হাত ধরে কবিতার যাত্রা সমাপ্ত হয় না, আমি সেটা বলব, এবং জোর গলায় বলবো সেদিকেই সবাইকে মনোযোগি হতে হবে। তাই আশা করি, নবীন কবিরা সেটি করবে। তারা শব্দের তাৎপর্য-ব্যঞ্জনা এবং নতুন নতুন উপমার জগত তৈরি করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।  

জুয়েল মাজহার বলেন, চিত্রা প্রকাশনীকে আমি ধন্যবাদ জানাই। সাধুবাদ জানাই, তারা এরকম একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন কবিতাহীন যুগে, যেখানে কবিতা নির্বাসিত। শিল্পের অন্যান্যের সঙ্গে কোথাও সক্রিয় নয়, আমাদের সমাজে, অর্থনীতিতে কোথাও কিন্তু কবিকে অভিনন্দিত করা হয় না। কবির জন্য কোনো নরেন গুচ্ছ নেই। এই সময়ে একজন পুরোনো কবি পঠিত কবিতায় আয়োজনে একজন তরুণ কবিকে অভিষেক করা হয়েছে, এজন্য তাকে অভিনন্দন জানাই।  

প্রধান অতিথি সাব্বির নাসির বলেন, অনুভবের কবিতা সত্যি আমাদের অনুভব জাগ্রত করেছে। এজন্য তাকে সাধুবাদ জানাই।  

তিনি বলেন, সামাজিক-প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে এবং পারিবারিকভাবে অনুপ্রেরণা দেওয়ার প্রয়াস ‘স্বপ্ন’ সব সময় করে থাকে। আরও যারা নবীন কবি রয়েছেন তারাও এগিয়ে আসুক। স্বপ্নের এই প্রয়াস অব্যাহত থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক কবি কামরুল হাসান বলেন, কবি মারুফ রায়হান দীর্ঘকাল ধরে বইমেলায় হাজার হাজার বই থেকে সেরা ৫০টি বই নির্বাচিত করে প্রকাশ করে চলেছেন। এটি একটি ব্যতিক্রমী কাজ। তিনি আজকে একটি নতুন কবিকে অভিষিক্ত করেছেন। পঁচিশটি পান্ডুলিপি পড়েছে, এটি আশার কথা। প্রযুক্তির অগ্রগামী সময়ে এটি হারিয়ে যাবে না, এটাই তার প্রমাণ।

তিনি আরও বলেন, গত দু’দিন আগে এক তরুণ কবির কবিতা পড়ে আমি খুব হতাশ হয়েছি। প্রতি বছর বইমেলা হাজার হাজার বই বের হচ্ছে। এগুলোতে কবিতার ভাষা বদলে গেছে। এখন প্রযুক্তি দিয়ে যে কোনো  বই প্রকাশ করতে পারে। এগুলোতে কোনো সম্পাদনা নেই। অনেক নিম্নমানের বই প্রকাশিত হয় বইমেলায়। তাই কবিতা প্রকাশে মানের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।

অনুষ্ঠানে কবি অনুভব আহমেদ বলেন, এই উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। যারা এই উদ্যোগের সঙ্গে ছিলেন সবার প্রতি ভালোবাসা রইলো। ‘মৃৎফুলের নকশা’ এই বইটা আমার শুরু থেকে শেষ অব্দি গত ১০ বছরে আমি যা যা লিখেছি সেখান থেকে বাছাই করে এখানে নিয়েছি। সেই বাছাই থেকে যা হয়েছে আমি কিছু কবিতাকে নির্লজ্জের মতো এখানে স্থান দিয়েছি। এটার আসলে মায়া কাটাতে পারিনি। আমি জানি, এই কবিতাগুলো হয়তো দূর্বল। তারপরও মায়া কাটাতে পারিনি। এই কবিতাগুলোর জন্যই আমি আজকে অনুভব।

তিনি বলেন, আমি প্রেমের কবি। আমি প্রেমের কবিতা লিখতে চাই। প্রেম আমার কাছে রাজনীতি, সমাজ, অর্থনীতি প্রেম দিয়েই আমি সবকিছু ব্যাখ্যা করতে চাই।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন একুশের সংকলনের সম্পাদক কবি মারুফ রায়হান।

‘কবি-অভিষেক’আয়োজনের জন্য দেশের নবীন কবিদের কাছ থেকে পাণ্ডুলিপি আহ্বান করা হয়।  

প্রাপ্ত পাণ্ডুলিপিগুলো থেকে বিচারকমণ্ডলী ‘মৃৎফুলের নকশা’কে নির্বাচন করেন। যেটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হলো অমর একুশে গ্রন্থমেলায়।

অনুষ্ঠানে অভিষেক ঘটে ওই গ্রন্থেরই কবি অনুভব আহমেদের। তাকে শুভেচ্ছা স্মারক ও অর্থ উপহার দেওয়া হয়।  

অনুষ্ঠানে কবি অনুভব আহমেদের কবিতা-আবৃত্তি করেন লিজা চৌধুরী।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে গান পরিবেশন করেন শিল্পী অর্পা বনিক, লুইজা মিলিতা সরকার, মরিয়ম সুলতানা মম, ড. অনুপম কুমার পাল ও আরিফ চৌধুরী পলাশ।  

কবি মারুফ রায়হানের সম্পাদনায় প্রায় দুই দশক ধরে একুশে ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়ে আসছে মহান একুশে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সিক্ত ‘একুশের সংকলন’। এক যুগ আগে ভাষার মাসে আয়োজিত মাসব্যাপী বইমেলার হাজার হাজার নতুন বই থেকে মানসম্পন্ন গ্রন্থ বাছাইয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করে একুশের সংকলন। এর ফলস্বরূপ দেশে নির্বাচিত ৫০টি বইয়ের পরিচিতিমূলক রঙিন ক্রোড়পত্রের প্রকাশনা শুরু হয়, প্রতিবছর যা গ্রন্থপ্রেমীদের নতুন বই বাছাইয়ে সহায়ক ভূমিকা রেখে চলেছে।  

নবীন কবিদের জন্য ‘কবি-অভিষেক’শীর্ষক ব্যতিক্রমী আয়োজনটি চলতি বছর থেকে শুরু করেছে একুশের সংকলন।

কবি-অভিষেক আয়োজনটি স্পন্সর করে সুপার শপ ‘স্বপ্ন’।

অনুষ্ঠানে কবি অনুভব আহমেদকে সম্মাননা ও শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেন কবি জুয়েল মাজহার ও সাব্বির নাসির।

বাংলাদেশ সময়: ০২৩৪ ঘন্টা, মার্চ ২৮, ২০২১
এসএমএকে/ইউবি 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।