ভরা রোদ্দুরের তীব্র দুপুরে অলস
শুয়ে শুয়ে কান পেতে থাকি
দূর বাতাসের বুকে সে কোন সুরের আশা
আসে ফেরিঅলা
হ্যামিলনের বাঁশির মতো
সুর করে ডেকে যায়
টেনে আনে নারী ও শিশুকে
লেইস ফিতা, লেইস....
কোনো শাড়িটির পাড় লাগানোর
অথবা কামিজ কতো ধরনের জামা
লেইস লাগানো বড় প্রয়োজন
এমনকি বিনোদনে বেহুদা ঔৎসুক্যে
রিনিঝিনি কাঁকনের মধুর ঝঙ্কারে
ছুটে আসে ফেরিঅলা, হাঁকে
লেইস ফিতা, লেইস...
চুলের বিনুনি বাঁধা
নীল ফিতা বহুদিন হয়ে গেছে
এবার ক’দিন তবে
লাল ফিতা বাঁধা যাক চুলে
আর চাই উকুনের কাঁকুই একখানি
প্রেরিত শিশুটি ছোটে
দূর থেকে ধরে আনবে
দুপুর উজাড় করা
মোহন কণ্ঠের সেই ফেরিঅলা
লেইস ফিতা, লেইস...
ওড়াই অগ্রাহ্য করে——মাথায় সূর্যের তেজ——
নানান রঙের ঘুড়ি——ছাদ থেকে——মাঠ থেকে
বাড়ির উঠোন, মায় পুকুরের পাড় থেকে
এমনকী মসজিদের মিনারের উঁচু থেকে উড়িয়েছি
শাদা লাল নীল ঘুড়ি——পঙ্খিরাজ ঘুড়ির বাহার
রঙিন লেজের ঘুড়ি উড়িয়েছি জড়িয়ে মায়ের ফিতা
চুল থেকে যখন আপসে নেমে গেছে
সেই লেজ আরেক ঘুড়ির লেজে প্যাঁচ কষে
আর যত মাঞ্জা দেওয়া সুতো
হড় হড় করে ছেড়ে যাই
মায়ের চুলের মতো
তারপর শুরু হলে গুতোগুতি
বোকাট্টা ঘুড়ির পিছে
পিছে পিছে দৌড়ানোর দুরন্ত উদ্যম,
আশৈশব ঘোরলাগা স্মৃতির উচ্ছাস——
লেইস ফিতা, লেইস...
ইস্কুলের ঘণ্টা বেজে গেলে
যে হুল্লোড় ঝম ঝম করে নামে
নেমে আসে বিষণ্ন ঘাসের ‘পরে
তারপর আচার আর বর্মাইয়া পিঠা
শোন পাপড়ির সাথে বাদামি কটকটি
সবকিছু ছাপিয়ে দুপুরে নামে অবিশ্রান্ত সুর
লেইস ফিতা, লেইস...
ফিতার দৌরাত্ম্য সেই
শৈশবের ঘর্মাক্ত দুপুর থেকে কোনো একদিন
জেঁকে বসে ছোট বড় ফাইলের পাতার ওপর
তারপর সেই লাল ফিতা
বের করে আনে সব
জীবনের যতো লাল সুতো
কেবল ঘোরের মধ্যে অনর্থক জপে যাই——
লেইস ফিতা, লেইস...
এখন জীবন সেই ফিতাটির মতো
টেনে টেনে বহু দীর্ঘ করে
চলেছি অনন্ত পথ যাত্রার দিকেই
কেবল সে লাল নীল ফিতাদের রং আজ
মলিন হলুদ হয়ে
ফাটা-ফাটা বয়সের ছাপ বুকে নিয়ে জপে
লেইস ফিতা, লেইস...
লেইস ফিতা, লেইস...
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২১
এএ