ঢাকা: বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত ২৪তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী ২০২১ এ আলোকচিত্র বিভাগে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার অর্জন করেছেন আলোকচিত্রী আল ইয়াছা ইরফান। শখের এই আলোকচিত্রী জড়িত আছেন লেখালেখি এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গেও।
সম্প্রতি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ থেকে জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীর সমাপনী আয়োজনে আলোকচিত্রী আল ইয়াছা ইরফান হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। গত ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। পুরস্কার বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান।
প্রদর্শনীতে আলোকচিত্রী আল ইয়াছা ইরফানের ‘আর কত?’ শিরোনামের ছবিটি আলোকচিত্র বিভাগের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার অর্জন করে নেয়। ছবিটি সম্পর্কে আলোকচিত্রী বলেন, আমাদের দেশের সামাজিক অবক্ষয়ের মধ্যে ‘ধর্ষণ’ একটি মূল এবং জটিল অবক্ষয়। যার কালো হাতের ছোবল এখন শিশুদের নিষ্পাপ শরীরেও যন্ত্রণার কালো দাগ এঁকে দিচ্ছে। এমন একটি কঠিন সামাজিক অবক্ষয়ের প্রতিবাদে ২০১৯ সালে এই ছবিটি তোলা হয়। পরবর্তীতে এটি ২৪তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীর জন্য পাঠানো হলে তা শ্রেষ্ঠ আলোকচিত্র হিসেবে পুরস্কার অর্জন করে।
আলোকচিত্রী আল ইয়াছা ইরফান পেশায় একজন তরুণ উদ্যোক্তা। বর্তমানে কাজ করছেন ‘শাইন বিডি’ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে। এই প্রতিষ্ঠানটি ফ্যাশনের বিভিন্ন বিষয়ে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। এছাড়া চট্টগ্রামের রাংগুনীয়ায় জন্মগ্রহণ করা এই শিল্পী অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চট্টগ্রামের সরকারি হাজী মোহাম্মদ মহসিন কলেজ থেকে।
এর আগে ২০১৯ সালে তিনি ‘লেখালয়’ ম্যাগাজিনের বর্ষসেরা আলোকচিত্রী সম্মাননা লাভ করেন। ছবির পাশাপাশি লেখালেখি ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণেও রয়েছে তার দখল। সামাজিক অবক্ষয়, জীবনের নানা অধ্যায় এবং প্রেম মিশ্রণের বিভিন্ন পরিক্রমা নিয়ে তার লেখা গল্প ও কবিতা প্রকাশ পেয়েছে ‘শব্দসিঁড়ি’ ও ‘স্নিগ্ধ শিহরণ’ শীর্ষক দু’টি সংকলনে। করোনা মহামারিতে লকডাউনের দিনগুলোতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের কর্মজীবনের চিত্রবর্ণনায় নির্মাণ করেছেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ফেরা’। বর্তমানে কাজ করছেন অপর স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘রিলোড দ্য গান অ্যান্ড ফায়ার’ নিয়ে।
কথা হলে এই আলোকচিত্রী জানান, আলোকচিত্রের প্রতি তার আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। তবে প্রবল আগ্রহ তৈরি হয় একটি পত্রিকায় প্রকাশিত একজন আলোকচিত্রীর জীবনের গল্প পড়ে। এরপর থেকেই শুরু হয় নিজ উদ্যোগে আলোকচিত্রের নানা ব্যাকরণ সম্পর্কে জানা, শেখা এবং তার ব্যবহারিক প্রয়োগের মাধ্যমে চর্চা। প্রথমেই হাতের কাছে ক্যামেরা না পেলেও ২০১৫ সাল থেকেই স্মার্টফোনের মাধ্যমেই ছবির জগতে প্রবেশ করেন তিনি।
আল ইয়াছা ইরফান বলেন, প্রতিটি মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়ন কিংবা জীবনের যেকোনো পর্যায়ে হতাশ না হয়ে ভিন্ন পথ খুঁজে নেওয়া উচিত। মানুষ চাইলে নিজেই নিজের চলার পথে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম। আর শুরুটা যেভাবেই হোক না কেন, নিষ্ঠা এবং আকাঙ্ক্ষা থাকলে সফলতা ধরা দেবেই।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত ২৪তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী ২০২১-এ অন্যান্য বিভাগের মধ্যে স্থাপনাশিল্প, চিত্রকলা, ছাপচিত্র, ভাস্কর্য, প্রাচ্যকলা, কারুশিল্প, মৃৎশিল্প, গ্রাফিক ডিজাইন, পারফরমেন্স আর্ট এবং নিউ মিডিয়া আর্টে যথাক্রমে শিল্পী মো. ইমতিয়াজ ইসলাম, শিল্পী রুহুল করিম রুমী, শিল্পী আনিসুজ্জামান, শিল্পী কনক কুমার পাঠক, শিল্পী সুশান্ত কুমার অধিকারী, শিল্পী সামিয়া আফরিন, শিল্পী মো. রবিউল ইসলাম, শিল্পী আল মঞ্জুর এলাহী, শিল্পী ইফাত রেজোয়ানা রিয়া এবং শিল্পী জিহান করিম শ্রেষ্ঠ পুরস্কার অর্জন করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১
এইচএমএস/এমআরএ