ঢাকা: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার প্রত্যক্ষ পরিকল্পনাকারী রাজনৈতিক ও সামরিক বেনিয়াদের অংশগ্রহণ ও কার্যকারণ। আর তার সবটুকুই যেন উন্মোচিত হয়েছে একটি নাটকে।
এমন এক কাহিনী নিয়েই মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের প্রযোজনা মহাপ্রয়াণের শোক আখ্যান ‘শ্রাবণ ট্র্যাজেডি’।
শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) নাটকটি মঞ্চায়িত হয় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে। বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা নাট্যোৎসবের অংশ হিসেবে মঞ্চায়িত এই প্রযোজনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের নৃশংস হত্যাকাণ্ড নিয়ে।
কাহিনীতে দেখা যায়, ১৪ আগষ্ট ১৯৭৫ বালুঘাট নির্মাণাধীন বিমানবন্দর। তখন শহরটির মাথার ওপর একটি কালো রঙের চাঁদ ঝুলছিল। আর তা থেকে বৃষ্টিবিন্দুর মতো ফোটা ফোটা রাত্রি গড়িয়ে পড়ছিল খুনিদের চিবুকে। প্যারেডের নাম করে তাড়িয়ে আনা অপেক্ষ্যমান শতাধিক সেনার মুখোমুখি দাঁড়ায় দীঘল কালো ছায়াগুলো। ভয়ংকর জাতি বিনাশী শব্দে খুনি মেজরদের চোয়াল নড়ে উঠে। উচ্চারিত হয় ষড়যন্ত্রের সেই অংশটি- মাকড়ের জাল পেতে যার প্রতিটি শব্দ ধৃত হয়েছে। তাদের কেনা বেনিয়া আর ভাড়াটে এজেন্ট রচনা করে দিয়ে গেছে যাদুময় কথার ইন্দ্রজাল। এক মুঠো মার্বেল চালানোর মতো কথাগুলো পূর্বেই ক্যান্টনমেন্টে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
ষড়যন্ত্র পাঠ শেষে শুরু হয় খুনিদের অভিযাত্রা। ভোর তখন রাত্রির পেটেপীঠে লেগে থাকা ভ্রুণ। দোজখের দেয়াল সরে গিয়ে হিম অথচ অগ্নিময় আভায় উম্মোচিত হয় খুনিদের নড়াচড়া। দোজখের দেয়ালে আঁকা শাস্তিচিত্রের পাপীরা আড়মোড়া ভেঙে চেয়ে আছে তারই প্রতিছায়ার দিকে। খুনি মেজর আর বিভ্রমে ভরা সেনারা হত্যার হাতিয়ার নিয়ে ছুটে চলেছে ধানমণ্ডি অভিমুখে। তাদের লক্ষ মানচিত্রের কাধে চাপিয়ে দেবে ইতিহাসের সবচেয়ে ভারী লাশের বোঝা।
নাটকের দৃশ্যপটে দেখা যায়, শ্রাবণ ট্রাজেডির কাহিনি বয়ানে সরাসরি ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট ব্যবহার না করে ইতিহাসের চরিত্র সব ও ঘটনার বর্তমান ব্যাখ্যামূলক প্রতিভঙ্গি রচিত হয়েছে। খুনিদের দাঁড় করানো হয়েছে রঙ্গমঞ্চের কাঠগড়ায়। এই অনুভব ব্যক্ত হয়েছে- প্রাণ হরণ করা যায় চেতনা নয়।
নাটকটি নিয়ে দর্শকদেরও মতামত একই রকম। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার ঘটনা উপজীব্য করে নাটক ‘শ্রাবণ ট্র্যাজেডি’ নিয়ে দর্শকরা বলেন, এ নাটকের শুরুতেই আমরা এই ভাবনায় স্থিত হই, বঙ্গবন্ধু কোনো দলের নন, কোনো গোষ্ঠীর নন। তিনি সমগ্র জাতির, পুরো দুনিয়ার স্বাধীনতাকামী মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। এমনই এক মহিরুহ ব্যক্তিত্বের জীবন নিয়ে লেখা নাটক এটি। একদিকে যেমন আনন্দের, অন্যদিকে ইতিহাসের দায় পূরণের অংশও বটে।
মহাকাল নাট্যসম্প্রদায়ের সভাপতি মীর জাহিদ হাসান বলেন, অসাম্প্রদায়িকতার মূর্ত প্রতিক- মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার নিবীড় সম্পর্ক, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও রাষ্ট্র গঠনে তার সত্যনিষ্ট দুর্বার প্রচেষ্টা রচিত হয়েছে এ পান্ডুলিপিতে। মহান নেতার হত্যাকারী রাজনৈতিক ও সামরিক বেনিয়া আর খুনিদের মুখোশ উন্মোচনের মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মকে সতর্ক করা এবং খুনিদের ও তাদের অনুসারীদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করার প্রত্যয় তৈরিতে ভূমিকা রাখবে এ নাট্য প্রযোজনা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আনন জামান রচিত এই নাটকের পরিকল্পনা করেছেন এবং নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আশিক রহমান লিয়ন। নাটকটির নেপথ্য শিল্পীরা হলেন- মঞ্চ, আলো, পোষাক ও আবহসঙ্গীত পরিকল্পনায় আশিক রহমান লিয়ন, অ্যানিমেশন ও আবহসঙ্গীত সম্পাদনায় কাজী মোহাইমিনুল হক, কোরিওগ্রাফী আমিনুল আশরাফ, পোস্টার ডিজাইন দেব্যেন্দু উদাস, রূপসজ্জা শিল্পী শুভাশীষ দত্ত তন্ময়, টিকেট ব্যবস্থাপনায় সৈয়দ লুৎফর রহমান, প্রচার ব্যবস্থাপনায় সৈকত নাসির ও কাজী সাইফ আহমেদ, প্রকাশনা ব্যবস্থাপনায় কানাই চক্রবর্তী ও বুলবুল আহমেদ, সেট ও প্রপস ব্যবস্থাপক রাজিব হোসেন, প্রযোজনা ব্যবস্থাপক ইকবাল চৌধুরী, মঞ্চ অধিকর্তা কবির আহামেদ, প্রযোজনা সমন্বয়ক মো. শাহনেওয়াজ, প্রযোজনা অধিকর্তা মীর জাহিদ হাসান ও সামগ্রিক তত্ত্বাবধানে আফজাল হোসেন।
নাটকটিতে অভিনয় করছেন কবির আহামেদ, ফারুক আহমেদ সেন্টু, মো. শাহনেওয়াজ, মনিরুল আলম কাজল, পলি বিশ্বাস, সামিউল জীবন, শিবলী সরকার, শাহরিয়ার হোসেন পলিন, তারেকেশ্বর তারোক, আহাদুজ্জামান কলিন্স, সুমাইয়া তাইয়ুম নিশা, আরাফাত আশরাফ, স্বপ্নিল, কানিজ ফাতেমা লিসা, কাজী তারিফ, রেদোয়ান হোসেন, নূর আকতার মায়া, রিফাত হোসেন জুয়েল, তোফাজ্জল ফয়সাল, রিয়াদ আকাশ, জাহিদ হোসেন অনিক, নাসিম রানা, সোহেল আহমেদ, ইকবাল চৌধুরী ও মীর জাহিদ হাসান।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২১
এইচএমএস/এমআরএ