ঢাকা: হাওড়াঞ্চলের সুর সাধক রাধারমণ দত্তের বসতভিটায় সংস্কৃতিকেন্দ্র নির্মাণ প্রক্রিয়া কেন সাত বছর ধরে থমকে আছে, সে নিয়ে প্রশ্ন তুলে ক্ষোভ জানিয়েছেন রাধারমণ গবেষকরা।
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কেশবপুর গ্রামে রাধারমণ দত্তের বসতভিটার জায়গাটি উপজেলা প্রশাসন লিজ দেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ জানান তারা।
শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকার বাংলা একাডেমিতে তিন দিনব্যাপী রাধারমণ লোকসঙ্গীত উৎসবের উদ্বোধনী আয়োজনে লোক গবেষকরা এ খেদোক্তি জানান।
রাধারমণ সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্রের আয়োজনে এ সংগীত উৎসবে সিলেট বিভাগের চার জেলা ছাড়াও ময়মনসিংহ, নেত্রকোণার হাওড়বিধৌত অঞ্চলের শতাধিক লোকসঙ্গীত শিল্পী তথা বাউল সাধকদের নিয়ে আয়োজিত হচ্ছে এবারের উৎসব।
বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে ১২তম রাধারমণ লোকসঙ্গীত উৎসবের উদ্বোধন করেন সুনামগঞ্জের প্রবীণ কীর্তনিয়া যশোদা রাণী সূত্রধর। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাধারমণ সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্রের সভাপতি মাহমুদ সেলিম। কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ড. বিশ্বজিৎ রায়, বিশিষ্ট লোকসংগীতশিল্পী আকরামুল ইসলাম, বাংলাদেশ বেতারের সাবেক মহাপরিচালক নারায়ণ চন্দ্র শীলও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন৷
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। আলোচক হিসেবে ছিলেন সিলেটের লোকগবেষক সুমন কুমার দাস।
অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণে ড. বিশ্বজিৎ রায় বলেন, রাধারমণের স্মৃতিবিজড়িত স্থানটি লিজ দেওয়া হয়েছে স্থানীয়দের৷ সেখানে একটি স্মৃতিকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ থমকে আছে সাত বছর ধরে৷ ফিজিবিলিটি স্টাডির নামে অজ্ঞাত কারণে ফাইল আঁটকে আছে শিল্পকলা একাডেমিতে৷ আমরা সেই স্মৃতিকেন্দ্র নির্মাণের দাবিতে এক লাখ স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছি৷
তার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, রাধারমণ সংস্কৃতি কেন্দ্রের ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ হয়েছে৷ আশা করছি, আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে আমরা রাধারমণ সংস্কৃতি কেন্দ্র প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে পারবো। কেশবপুরে রাধারমণের স্মৃতিবিজড়িত স্থান যদি অবৈধভাবে কাউকে লিজ দেওয়া হয়, তবে সেটা দ্রুত আমরা বাতিল করে দেবো।
লোকগবেষক সুমন কুমার দাস বলেন, সাম্প্রতিক লোকসাহিত্যে বাংলার লোকসাধকদের কথা সেভাবে উঠে আসছে না৷ লালন সাঁইজির পর বাউল শাহ আবদুল করিম, দুরবীন শাহ বা রাধারমণ দত্তের কথা সেভাবে উঠে আসেনি বাংলা সাহিত্যে। গ্রামীণ ইতিহাস, ঐতিহ্য ছাড়া আধুনিক বাংলা সাহিত্য অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
রামেন্দু মজুমদার বলেন, বাংলার লোকজীবনের যে সমৃদ্ধ সম্ভার তা ছড়িয়ে দিতে না পারলে বাংলার আবহমান সংস্কৃতির অবয়ব তুলে ধরতে পারবো না৷
প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে দলীয় সংগীত পরিবেশন করে রাধারমণ চর্চাকারী দল, সৃজনশীল গানের দল নিবেদন। একক শিল্পী হিসেবে গান শোনান অণিমা মুক্তি গোমেজ, আবু বকর সিদ্দিক, তুলিকা ঘোষ চৌধুরী, শুভ বণিক, লাভলী দেব, শাহনাজ বেলী, বাউল হারুন, খায়রুল ওয়াসি, অনামিকা চন্দ কেয়া, মিতালী রায়, পুষ্পিতা সোম, মাধুরী তালুকদার, অনুপম দাস, অর্পিতা দাস, কৃষ্টি রায়, জয়ীতা ঘোষ, প্রাচ্য প্রত্যয়, সুমন মুন্নাম, সংগীতা দাস, সম্পা পাল চৌধুরী, এনামুল হক, নন্দিনী রায়, শিমুল নন্দী, অম্লান ঘোষ, ঈশিতা বড়ুয়া, শুভ্রা জোয়ার্দার, শাহীনা আক্তার পাপিয়া, সৃজ্যোতি রায়, অন্বেষা দাস, মাকসুদুর রহমান দিপু, মনিকা দাস ও পংকজ রায়।
প্রথম দিনের আয়োজনে রাধারমণের গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দন ও সুনামগঞ্জের নিপা সূত্রধর ও তার দল।
২০২০ সালে মে মাসে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে বাউল রণেশ ঠাকুরের গানের খাতা, বাদ্যযন্ত্র পুড়িয়ে দিয়েছিলো দুর্বৃত্তরা। সেই বাউল রণেশ ঠাকুর এবারের রাধারমণ উৎসবে অংশ নেবেন। তিনি গাইবেন দ্বিতীয় দিনের আসরে। শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় শুরু হবে সেই আসর।
দ্বিতীয় দিনের আসরে গাইবেন বাউল আব্দুর রহমান, রণেশ ঠাকুর, চন্দনা মজুমদার, লীনা দাস, বাউল শাহানা আক্তার, সেলিম চৌধুরী, আকরামুল ইসলাম, বাউল গোলাপ মিয়া, সুমনা দাস, এম আর মানিক, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, বাউল যোবায়ের বখত সেবুল, বাউল সিরাজউদ্দিন, মীর ইউসুফ, স্বরূপ দত্ত, দয়াল মুনি, শৈলী সূত্রধর স্বর্ণা। তাদের কেউ রাধারমণ দত্তের গান, কেউ মরমি কবি হাছন রাজা, বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম, কেউ হাওরের সাধক মনমোহন দত্ত, দীনহীন, দুরবীন শাহর গান শোনাবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২২
এইচএমএস/এসএ