গত ৬ মে (শনিবার) নগরীর স্ট্যাফোর্ডের কিওং পার্কে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ইন ব্রিজবেন ইনক. (ব্যাব) আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় বৈশাখী মেলা। গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর্শক উপস্থিতির এ মেলার মূল আকর্ষণ ছিল বিখ্যাত উইনিং ব্যান্ড্যের লিড ভোকলিস্ট চন্দন’র ওপেন এয়ার কনসার্ট।
কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদমন্ত্রী ড. অ্যান্থিনী লিনহাম এমপি মেলার উদ্ভোধন করে আনন্দ শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন। এরপর তিনি মেলার ১৮টি স্টল ঘুরে দেখেন। খাবারের স্টলে থাকা সিঙ্গারা, সমুচাসহ নানা ধরনের মুখরোচক খাবারের স্বাদের প্রশংসা করেন।
ড. লিনহাম তাকে এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ব্যাবকে ধন্যবাদ দিয়ে ভবিষ্যতে প্রয়োজনে সবধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। কর্মস্থলে বাংলাদেশিদের দক্ষতার ভূয়সী প্রশংসাও করেন তিনি। পরে শিশুদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। এছাড়া রাজনীতিবিদের মধ্যে গ্রিন পার্টির স্থানীয় প্রতিনিধি ও পরবর্তী মেয়র নির্বাচনের প্রার্থী জন ম্যায়ার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
কোরাস সংগীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া দু’পর্বের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল ‘ব্রিজবেন বাংলা স্কুলে’র শিশু শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা। প্রথমে ছয়জন শিশুর কবিতা উপস্থাপনায় ষড়ঋতুর অবহমান বাংলার প্রাকৃতিক রুপ পরিবেশন ছিল অসাধারণ। এরপর বাংলাদেশের পরিচিত বেশ কিছু গান, কবিতা, নাচ পরিবেশন করে শিশুরা। বেলা গড়ানোর সঙ্গে মেলায় বাড়ছিলো লোক সমাগম, সে সঙ্গে বিক্রি বাড়ছিল স্টলগুলোতে। মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের সাজ আর রঙিন আটপৌরে শাড়ি যেমন মেলার শোভা বাড়াচ্ছিল তেমনি ছেলেদের হরেক পাঞ্জাবি আবহমান বাংলাকে ফুটিয়ে তুলেছিল মেলাজুড়ে। এরইমধ্যে শুরু হয় বড়দের পর্ব। বিগত বছরের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে সাজানো এ পর্বের শুরু হয় ‘সুন্দরী কমলা নাচেরে’ গানের সঙ্গে নাচ পরিবেশনা করেন লাজ, ঝুমা, কান্তা, দিপ্তী।
রবীন্দ্র সংগীতের মধ্য দিয়ে একক সংগীতে আসেন অবনী মাহবুব। এরপর গান করেন জেডি, মাহবুব, এলিন শারমিন, কুশল, সূচরিতা, মাইশা ও শোভন। এরই ফাঁকে লাজ-পারিশা ও রিশা-সূচরিতার দ্বৈত নাচ আর মিথুন চক্রবর্তী ও নন্দীতা চক্রবর্তীর দ্বৈত গান দর্শক মনে আনন্দের দোলা দেয়। বৈচিত্র্য আনতে ফ্যাশন-শোতে মঞ্চে আসেন মারুফ, পারভেজ, অরুপ, পাশা, ওহী ও রনি।
প্রিন্স’র দরাজ কণ্ঠের আবৃত্তি ‘কেউ কথা রাখেনি’ মেলাজুড়ে ভিন্ন আবহ তৈরি করলেও স্বাগতা দাসের চমৎকার উচ্চারণ শৈলীতে আবৃত্তি মহাভারতের ‘দ্রৌপদী কথা’ উপস্থিত দর্শকদের বিমুগ্ধ করে। অজয়ের কণ্ঠে কবিতার পরেই ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ গানের তালে অসাধারণ নাচ পরিবেশন করেন ইমন চৌধুরী।
গোধূলীর আধারি আলোয় মেলার উজ্বলতা একটু মলিন হলেও মঞ্চে ‘তাঁরার’ উপস্থিতি মেলাজুড়ে এনে দেয় বর্ণালী আলো। মেলায় উপস্থিত দর্শকের স্বাগত চিৎকারে মঞ্চে আসেন ৯০ দশকের তুমুল জনপ্রিয় শিল্পী চন্দন। ‘ইচ্ছা করে যাই চলে যাই অচিনপুর...’, ‘সোনার মেয়ে’, ‘মন কি যে চাই বল’সহ আরো জনপ্রিয় সব গান গেয়ে দর্শক মাতিয়ে রাখেন চন্দন।
সদ্য প্রায়ত লাকী আকন্দের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার জনপ্রিয় ‘এই নীল মণিহার’, ‘আমায় ডেকোনা ফেরানো যাবে না’সহ বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় গান গেয়ে শোনান দর্শকদের। একে একে ১৪টি গানে দর্শক মাতিয়ে বিদায় বেলায় ব্রিজবেনবাসী ও ব্যাবকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৭
জেডএস