ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

সরকারের কাঁধে বিমানের ৪ হাজার কোটি টাকা

সাইদ আরমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৩
সরকারের কাঁধে বিমানের ৪ হাজার কোটি টাকা

ঢাকা: ৪ হাজার কোটি টাকার দায় সরকারের কাঁধে তুলে দিয়েছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান। সরকারকে জামানত রেখে বিমান ৪৯ কোটি ১০ লাখ ডলার সার্বভৌম গ্যারান্টি নিয়েছে।

এ গ্যারান্টি দেখিয়ে দেশি-বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণও নিয়েছে বিমান। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, ৪৯ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে ৫ কোটি ৩০ লাখ ডলারের (প্রায় ৪০০ কোটি টাকা) নতুন দায় বাড়িয়েছে বিমান। দুটি বোয়িং এয়ারক্রাফট কিনতে কিস্তি পরিশোধে নতুন করে সরকারের কাছ থেকে এ সার্বভৌম গ্যারান্টি নিয়েছে বিমান। আগামী ২০১৫ সাল নাগাদ এয়ারক্রাফট দুটি বিমান বহরে যুক্ত হওয়ার কথা আছে।

একটানা লোকসানে থাকার কারণে বাংলাদেশ বিমানকে দেশি-বিদেশি কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ দিতে আগ্রহী নয়। তাই সরকারের হয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় বিমানের মালিক হিসেবে সার্বভৌম গ্যারান্টি দিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় ৫ কোটি ৩০ লাখ ডলারের সার্বভৌম গ্যারান্টি চুড়ান্ত করেছে। এ গ্যারান্টির বিপরীতে বিমান রাষ্ট্রের কাছে ঋণের দায় বাড়াচ্ছে।

বিমান বাংলাদেশের পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্য বাংলানিউজকে বলেন, সার্বভৌম গ্যারান্টি নেওয়ার জন্য বোর্ড অনুমোদন দিয়েছে। সম্প্রতি এটি বোর্ডেও আনা হয়েছে। বোর্ডে সরকারের প্রতিনিধিও এতে সমর্থন দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের চেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট উপদেষ্টা আল্লাহ মালিক কাজমী বাংলানিউজকে বলেন, সার্বভৌম গ্যারান্টি তখনই দেওয়া হয় যখন কোনো প্রতিষ্ঠান ভালো চলে না। তাকে কেউ ঋণ সহায়তা দিতে চায় না। তখন তার মালিক হিসেবে সরকার গ্যারান্টি দিয়ে থাকে। আর ওই প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট দায়ভার রাষ্ট্রকে বহন করতে হয়।

তিনি বলেন, বিমান যেহেতু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, তাই তাকে সার্বভৌম গ্যারান্টি দেওয়াতে অযৌক্তিক কিছু দেখছি না। তবে দেখতে হবে এয়ারলাইন্সের বিশ্ববাজার পরিস্থিতি কেমন।

আন্তর্জাতিক এয়ার ট্রান্সপোর্ট এসোসিয়েশনের (আইএটিএ) তথ্য মতে, গত বছর এয়ারলাইন্স খাতে যাত্রী প্রতি গড় মুনাফা হয় আড়াই ডলারের কাছাকাছি। গড়ে যাত্রী প্রতি আয় ২২৮ ডলার। আর ব্যয় ২২৫ দশমিক ৫০ ডলার।

এ সময় এ খাতে মুনাফার হার দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ১ শতাংশ। তবে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বিশ্বের অনেক দেশের এয়ারলাইন্স এখন লোকসান গুনছে।

আইএটিএ’র পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রের এয়ারলাইন্সগুলো প্রায় ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার লোকসান গুনেছে। একেবারে দেউলিয়াও হয়েছে বিশ্বের বেশ কিছু এয়ারলাইন্স কোম্পানি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন সারা বিশ্বেই এয়ারলাইন্স ব্যবসা নাজুক। এ খাতের প্রবৃদ্ধিও সন্তোষজনক নয়। তাই এমন পরিস্থিতিতে বিমানকে বড় অঙ্কের গ্যারান্টি দেওয়া কোনোভাবেই সঠিক নয়। উল্টো এতে রাষ্ট্রের দায় আরও বাড়বে।

তবে ৪৯ কোটি ১০ লাখ ডলারের কিছু দায় পরিশোধ করলেও ঠিক তার পরিমাণ কত তা সুনির্দিষ্ট করে জানা যায়নি। সরকার এখনো অবধি মোট সাড়ে চার শ কোটি টাকার সার্বভৌম গ্যারান্টি দিয়েছে। যদিও আন্তজার্তিক দাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) শতকোটি ডলারের বেশি সার্বভৌম গ্যারান্টি দেওয়ার বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, ৭৩৭-৮০০ বোয়িং ক্রাফট দুটি ২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে যুক্ত হতে পারে। এর আগে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালে বিমান যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এয়ারক্রাফট কেনার জন্য দেড়শ কোটি ডলারের চুক্তি করে।

একইভাবে লোকসানের দায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাঁধে চাপাতে ফন্দিফিকির করছিল বিমানের বিদেশি প্রধান নির্বাহী কেভিন স্টিল। তবে এতে কোনোভাবেই সম্মতি দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।

বর্তমানে বিমানের দেনা দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া বোয়িং-৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজের একটি জিই-৯০ ইঞ্জিন কিনতে নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হয়েছে প্রায় ৩০৪ কোটি টাকা।

পদ্মা অয়েল কোম্পানি ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে বিমানের বিপুল পরিমাণ দেনা আছে। তা পরিশোধ করতে না পারলে যেকোনো সময় জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ দেবে পদ্মা অয়েল। অন্যদিকে বোয়িং প্রতিষ্ঠান ‘ইঞ্জিন চেঞ্জ কিট’ সরবরাহ করে দেবে।

প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালের ২৩ জুলাই বিমানকে কোম্পানিতে রূপান্তরের পর তখন দুই অর্থবছরে ২১ কোটি টাকা লাভ করে। এরপর ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৮০ কোটি টাকা, ২০১০-১১ অর্থবছরে ১৭৫ কোটি এবং ২০১১-১২ অর্থবছরে ৬০০ কোটি লোকসান গুনতে হয় রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানটিকে।

সবশেষ ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২০০ কোটি লোকসান গুণেছে বিমান। চলতি অর্থ বছরে এ লোকসান শতকোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকেরা।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৩
সম্পাদনা: খুররম জামান, ডিপ্লোম্যাটিক অ্যাফেয়ার্স এডিটর/সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।