সিলেট: ‘বসন্ত বাতাসে সইগো, বসন্ত বাতাসে/বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ/ আমার বাড়ি আসে…’ শাহ্ আবদুল করিমের এই গান আবার মনে পড়বে হেনরি বাবুর বাগানে গেলে। মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড় সারির যে অংশ বাংলাদেশে, তার চূড়ায় খাসিয়া আদিবাসী হেনরি লামিন গড়ে তুলেছেন ফুলের বাগান।
ভারত-বাংলাদেশের শতাধিক প্রজাতির ফুলের সমারোহ মোকামপুঞ্জির এই চূড়ায়। জাফলং বেড়াতে আসা পর্যটকরা নিয়ে যাচ্ছেন ফুলের গন্ধ।
তামাবিল স্থলবন্দরের অদূরে শত শত প্রজাতির ফুলেল এই বাড়ি খাসিয়া ‘হেনরি বাবুর বাগান বাড়ি’ নামে পরিচিত। বাগানের পেছনে মোকামপুঞ্জি খাসিয়া ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বসবাস। তার পেছনে ভারতের মেঘালয়।
হেনরি বাবুর বাগানের শত শত ফুলের সমরোহ নিসর্গপ্রেমীদের আনন্দ দিচ্ছে। বছরের সবদিন ফুল ফোটে এই বাগানে। সবার জন্যই বাগানটি উন্মুক্ত। খাসিয়াদের ঐতিহ্য পান-সুপারি দিয়ে দর্শনার্থীদের আতিথেয়তা করেন হেনরি লামিন। মানুষকে ফুলের সৌন্দর্য দেখিয়ে আনন্দ পান তিনি।
পহেলা ফাল্গুন প্রাক্কালে একজন প্রকৃতিপ্রেমী হিসেবে হেনরি লামিন কথা বলেন বাংলানিউজের সঙ্গে।
৮০ বিঘা আয়তনের বাগান ঘুরে দেখিয়ে তিনি জানান, ১২ বছর থেকে বাগানের পরিচর্যা করছেন। আর প্রায় ৫ বছরের পরিচর্যায় শতাধিক প্রজতির বাংলাদেশি ও ভারতীয় ফুল ফুটিয়েছেন তিনি।
প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার কারণে যদিও তিনি ফুল বাগান গড়ে তুলেছেন তবুও পর্যটন এলাকা হওয়ায় সবার জন্য বাড়িটি উন্মুক্ত করে রেখেছেন।
৮০ বিঘা আয়তনে বাগানের প্রায় ৫০ বিঘা জুড়েই ফুল আর ফুল। ১০ বিঘায় আছে ১০ হাজার আগর গাছ। আর বাকি অংশে লেচু-সুপারি-কমলালেবু, পান গাছ ও দেড়হাজার দেশি-বিদেশি ফুল গাছ। কয়েকটি নাইটকুইন হয়েছে এখানে।
বাড়িটিতে প্রবেশ করতেই যে ফুলগুলো নজর কাড়ে তার মধ্যে রয়েছে সেলভিয়া। এখানে ৪০০টি সেলভিয়া গাছ আছে, ভারতীয় জবা ২০টি, ভারতীয় রঙ্গন ৩০টি, ভারতীয় ডালিয়া ৪০০টি, গোলাপ ৫০টি, চন্দ্রমল্লিকা ২০০টি, ১০ জাতের বাগান বিলাস ১০০টি, ১০টি পদ্মফুল, ক্রিমমাস ১০টি, কাঠমালতি ৪টি, সন্ধ্যামালতি ৪টি, ঝাউ মন্দির ৫টি, শেফালী ৩টি, হাসনাহেনা ২টি, ফায়ার বল ফুল, কামিনী ৬টি, কাঠগোলাপ আছে কয়েকটি, বেগুনি ও হলুদ আলমেন্ডা ৫০টি, ভারতীয় পাথরকুচি ২টি, পাতাবাহার দিয়ে ঘিরে বাড়ির ভেতরে হেনরি বাবুর কটেজ।
বাগানের পরিচর্যাকারী মো. সেলিম বাংলানিউজকে জানান, এখানে এমন সব ফুল আছে যা ভারতীয় পাহাড়ি অঞ্চলে দেখা যায়। আর সচরাচর আমাদের চোখে পড়ে না এমন ফুলও আছে।
ফুল বাগানের পাশেই রয়েছে কমলা বাগান। আছে বারো মাসি আম গাছ। দুই বছর থেকে মাল্টা গাছে মাল্টা ধরেছে। এছাড়া বাগানে অর্ধশতাধিক লেচু গাছও আছে।
মো. সেলিম জানান, আগর গাছ ৫ বছর আগে লাগনো হয়েছে। আরও ৪ বছর পেরুলেই আগর সংগ্রহ শুরু হবে।
দর্শনার্থীর অজানা থাকায় এখানে ভিড় তেমন না জমে উঠলেও নাগরিক জীবনে এক ঝলক স্নিগ্ধতার ফুলেল পরশ নিতে কেউ কেউ ছুটে আসছেন এখানে।
হেনরি বাবুর বাগানেই কথা হয় সিলেটের নর্থ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ফয়সল খাঁন-এর সঙ্গে।
তিনি জানান, হেনরি বাবুর শখের বশে গড়ে তোলা এই বাগান যে কারও মন কাড়বে। যারা এরকম বাগান করবে তাদের সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া উচিৎ।
তার সঙ্গেই বাগান ঘুরতে আসা লিডিং ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগ থেকে সদ্য পাশ করা আব্দুল্লাহ চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, এক বাগানে বাংলাদেশ-ভারতে এতো ফুলের সমারোহ সত্যিই মনোমুগ্ধকর। তবে বাগনে ফুলের বর্ণনা দিয়ে একটি তালিকা থাকলে পর্যটকদের ঘুরে দেখতে আরও সুবিধা হবে।
শহরের ইট-কাঠ-পাথরের জীবন থেকে পাহাড়ি আবেশে দিন কাটাতে যে কেউ ঘুরে যেতে পারেন হেনরি বাবুর ফুল বাগানে। নিসর্গপ্রেমীদের কাছে এই ফুল বাগান সীমাহীন আনন্দ দেবে।
যেভাবে যাবেন: সিলেট থেকে বাসে ও লেগুনা ছেড়ে যায় জাফলংয়ের উদ্দেশে। তামাবিল স্থল বন্দরের প্রায় এক কিলোমিটার আগেই মোকমপুঞ্জির রাস্তায় নামলেই চোখে পড়বে খাসিয়া আদিবাসী হেনরি লামিনের ফুল বাগান।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৪