বান্দরবান থেকে ফিরে: সামনের খাড়া রাস্তাটা দেখে বুক শুকিয়ে গেলো। ডানে খাড়া পাহাড়ের নিরেট দেয়াল তো বাঁয়ে হাজার কি দেড় হাজার ফুট খাদ।
এভাবে আকাশ আর মেঘের সঙ্গে লুকোচুরি খেলে বলেই এ গাড়িগুলোর নাম চাঁদের গাড়ি। ল্যান্ড ক্রুজার ব্যান্ডের শক্তিশালী ইঞ্জিন।
আমাদের চাঁদের গাড়ির মিটার রিডারে চোখ পড়তেই চমকে উঠি। গতি নির্দেশক কাঁটাটা ৮০ কিলোমিটারের ঘরে তির তির করে কাঁপছে। সোজা যেন চাঁদেই উঠে যাচ্ছে আমাদের চাঁদের গাড়ি।
নিজের অজান্তেই হাত আরো চেপে বসে গাড়ির হাতলে। এমন ভীতিকর উত্থানে বাম হাতে স্টিয়ারিং ধরে অন্য হাত জানালা দিয়ে বাইরে গলিয়ে নাড়তে শুরু করে ড্রাইভার শাহাবুদ্দিন। চিৎকার দিয়ে বলে, সবাই সামনে তাকান।
এতো উঁচু রাস্তায় ড্রাইভারের এক হাতের এমন ভেলকিতে মেরুদণ্ডজুড়ে ভয়ের প্রবাহ নেমে এলেও সহসাই যেন তা কেটে যায় তারই চিৎকারে। তার নির্দেশনা মেনে সামনে তাকাই। সোজো যেন আকাশে উঠছি আমরা।
কিছুক্ষণের মধ্যেই চাঁদের গাড়ি উঠে যায় পিক-৬৯ নাইনে। এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু রাস্তা। পরপর তিনটি চাঁদের গাড়ির বহর আমাদের। শাহাবুদ্দিন উচ্চস্বরে রেকর্ড বাজিয়ে দিয়েছে। অদ্ভূত একটা গানই ঘুরেফিরে বাজাচ্ছে সে। গানটির কথায় ঘুরেফিরে আসছে, ‘লুঙ্গি ড্যান্স, লুঙ্গি ড্যান্স, লুঙ্গি ড্যান্স’ শব্দমালা।
এ লুঙ্গি ড্যান্স গানেরই যেন আছর পড়লো সবার ভেতর। হই-হল্লা করে লুঙ্গি ড্যান্সের কোরাস গাইতে লাগলো সবাই। কেউ গলা ছাড়লো। কেউবা ফাঁকি দিলো লিপসিং করে।
সমানে গলা ছাড়লেন চ্যানেল আই এর নিউজ এডিটর জাহিদ নেওয়াজ খান, বাংলাভিশনের নিউজ এডিটর শারমীন রিনভী, বিডিনিউজের নিউজ এডিটর গাজী নাসির উদ্দিন খোকন, সকালের খবরের ডেপুটি চিফ রিপোর্টার তৌহিদুর রহমান, গাজী টিভির অ্যাসিসট্যান্ট নিউজ এডিটর সালাম ফারুক প্রমুখ।
এটিএন বাংলার নিউজ এডিটর শাহনাজ মুন্নি আর মাছরাঙা টেলিভিশনের নিউজ এডিটর হামিদুল হক তো রীতিমতো ওই পাহাড়ি পথে গাড়ির ঝাঁকুনি উপেক্ষা করে আকাশে ওড়ারই চেষ্টা করলেন দু’হাত উঁচিয়ে।
বুদ্ধি করে সামনে ড্রাইভারের পাশে বসেছিলাম বলে এবার নিজেই যেন খুশি হলাম নিজের ওপর। কোন পাহাড়ের কি নাম, কোন দিকে কোন পাড়া, কোন পাড়ায় কোন আদিবাসী থাকে, কোন ফলের কি নাম সব জানা হয়ে যাচ্ছিলো পাহাড়ে পাহাড়ে গাড়ি চালিয়ে এখানকার মানুষ ও ভূ-গোল বিষয়ে অভিজ্ঞ হয়ে ওঠা শাহাবুদ্দিনের কল্যাণে।
সিনিয়র সাংবাদিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের নিউজ এডিটর মহিদুল ইসলাম রাজুও সম্ভবত আমার মতো কিছু ভেবে থাকবেন। তিনিও বসেছেন চালকের পাশে। আমাদের পেছনে শাহাবুদ্দিনের ছোট ভাই শাহজাহানের গাড়িতে সওয়ার তিনি।
ল্যান্ড ক্রুজার ব্র্যান্ডের জিপগুলোতে চালকের পাশের আসনে বসার পর থেকেই পুলিশের ওসি ওসি একটা ভাব চলে এসেছে তার ভেতর। শেষ পর্যন্ত নিজেকে ওসি ঘোষণা করে ওসির ভাবভঙ্গী অনুকরণও করার চেষ্টা করছেন কখনো সখনো। তার ওসিত্ব মেনে নিলাম সবাই।
এরই মাঝে কোন ফাঁকে যেন ঘণ্টা গড়িয়ে গেলো ঠাহর করা গেলো না। উত্তর থেকে দক্ষিণে ছুটছে চাঁদের গাড়ি। মিলনছড়ি থেকে চিম্বুক ২৪ কিলোমিটার, নীলগিরি ৪৮। পাহাড়ি পথে এ দূরত্ব নেহায়েত কম নয়। এমনিতেই পাহাড় পেঁচিয়ে চলা রাস্তাগুলোর প্রতিটি বাঁককেই বিপদজনক মনে হচ্ছে, তারওপর হঠাৎ হঠাৎ চোখে পড়ছে ‘বিপদজনক বাঁক’ লেখা সাইনবোর্ড। এর মানে সামনের রাস্তা আরো বেশিই ঝুঁকিপূর্ণ।
মিলনছড়ি ছাড়ার পর গায়ে গায়ে ছোঁয়া ছোট-বড় পাহাড় সারির ওপাশে আজদাহা শরীর নিয়ে পর্যটন কেন্দ্র নীলাচল পড়ে রইলে ডানে। এঁকেবেঁকে ছ’কিলোমিটার এগুলে শৈলপ্রপাত।
কখনো পাহাড়ের চূড়া কেটে, কখনো পাহাড়ের ঘাড় কেটে তৈরি করা রাস্তা। এই উঠছে তো খানিকটা নেমে ফের উঠছে। একদিকে ঝপ করে পাহাড় নেমেছে, তো অন্যদিকে হাঁ করে আছে ঝুলে থাকা পাহাড়ের গভীর খাদ। কোথাওবা দু’দিকেই খাড়া নেমে যাওয়া পাহাড়ের নিচে ছোট ছোট আদিবাসী গ্রাম।
রাস্তার পাশেই লম্বা লম্বা সেগুন গাছ। ঝাড়ু তৈরির চিকন কঞ্চির ঝোপ। পাহাড়ের শরীর জুড়ে আনারস, কলা, পেঁপে ইত্যাদি মিশ্র ফলের ক্ষেত।
বান্দরবান থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে ৭ মাইল নামক জায়গায় বেতেনি পাড়া, বমদের পল্লী। আরো দেড় কিলোমিটার এগুলে গ্যাচমনিপাড়া নামে আরো এক বম পল্লী। কাঁচা আম, বেল, ছোট কাঠাল, পেঁপে আর আনারস সাজিয়ে বসেছে বম দোকানি।
আমগুলোর বোঁটা যেন একটু বেশিই মোটা, বড়ও। খোঁজ নিয়ে জানা গেলো-মায়ানমার থেকে আনা এ প্রজাতির আম খেতে বেশ মিষ্টি। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে মিশ্র ফলের বাগানে এখন এই আমও জায়গা করে নিয়েছে বেশ। এগুলো এখন বান্দরবানের অর্থকরি ফসল হয়ে উঠেছে।
৯ মাইল নামক স্থানে মুরংদের বসতি মুরাপাড়া।
খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে রাস্তার ওপর গলা বাড়িয়ে এগিয়ে এসেছে এক ঝাঁকড়া রক্তজবার গাছ। গাছটির ভাঁজে ভাঁজে টকটকে রক্তজবা যেন নীলগিরির পথে লাল সালাম দিলো আমাদের।
এরপরই ছাতংপাড়া। এখান থেকে দেড় হাজার ফুট উঁচু চিম্বুকের দূরত্ব ৬ কিলোমিটার। সুর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দু’টাই ভালো দেখা যায় চিম্বুক থেকে।
ওয়াই জংশন আর্মি ক্যাম্প এর কাছে এক লাফে ফুট দশেক উপরে উঠে গেছে নীলগিরির রাস্তা। বাঁয়ের রাস্তা চলে গেছে রুমার দিকে।
এখান থেকে নীলগিরি ১৯ কিলোমিটার। একটি মসজিদ ও ইসলামী পাঠাগারও আছে এখানে। একটু এগুলেই ডানে কিছুটা নিচের পাহাড়ে রামোইপাড়া মুরং স্কুল, রোদের আলোয় যেন উজ্জ্বলতা ছড়াচ্ছে।
এরপর পাবলা পাড়া পেরিয়ে পিক-৬৯। বাংলাদেশের এই সবচেয়ে উঁচু রাস্তা ধরে কিছুটা এগিয়ে এম্পুপাড়া পার হতেই হাতের ডানে দু’টো ভাঙ্গা পিলার দেখালো শাহাবুদ্দিন। পিলারের ওপাশে ছাল উঠে গেছে গাছের। ওখান দিয়ে ১৫ এপ্রিল গড়িয়ে কয়েকশ’ ফুট নিচে পড়েছে এক ট্রাক। মৃত্যু হয়েছে চালকের। তামাক নিতে থানচি যাচ্ছিলো ট্রাকটি।
বিশাল এক বটগাছ পাশ কাটিয়ে কুরাইনপাড়া পার হতেই চোখের সামনে চলে এলো নীলগিরি। চিম্বুক রোড থেকে গাড়ি উঠে গেলো নীলগিরির ল্যান্ডিংয়ে।
ক্যাফে স্বপ্নচূড়া আর সুভ্যেনিয়রের দোকান পাশ কাটিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেলাম গিরির চূড়ায়। সমতল থেকে ২ হাজার ৪শ’ ফুট উঁচুতে।
একসময় সেনাবাহিনীর পর্যবেক্ষণ চৌকি হিসেবে ব্যবহৃত হতো নীলগিরি। পরে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এটিকে পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করা হয়।
এখানে একটি কনফারেন্স রুম। দু’টি ভিআইপি রিসোর্ট। এর একটির নাম ‘মেঘদূত‘। ২০০৬ সালের ১৫ জানুয়ারি এটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন সেনা প্রধান মইন উ আহমেদ। একই দিন ‘আকাশনীলা’ নামে অপর রিসোর্টটি উদ্বোধন করেন তার স্ত্রী নাজনীন মইন।
দুই রিসোর্টের মাঝে দু’টো ক্রিসমাস ট্রি। বান্দরবানের এই উর্বর পাহাড়ের চূড়ায় ক্রিসমাস ট্রি’র মতো বিদেশি গাছ এতো গুরুত্বের সঙ্গে লাগিয়ে বাড়িয়ে তোলার কারণ বুঝা গেলো না।
বর্ষাকালে এখানে মেঘের সঙ্গে মিতালি হয় মানুষের। ভেসে আসা মেঘে শরীর ভিজে শান্ত হয় মন। আকাশের পটভূমিতে একদম হাতের কাছেই যখন তখন রংধনু ভেসে ওঠে বাংলার দার্জিলিং খ্যাত নীরগিরিতে।
কিন্তু এখন শুকনো মৌসুম। তাই নীলগিরির সবচে’ বড় আকর্ষণ মেঘের দেখা পাওয়া গেলো না। সুযোগ হলো না মেঘ গায়ে মাখার। তবুও খুশি। প্রখর রোদকে পাহাড়ি বাতাস যেন শরীরে বসতে দেবে না বলেই পণ করেছিলো।
নীলগিরি ছাড়িয়ে থানচি রোড ধরে দক্ষিণে এগুলে জীবননগর। নতুন রিসোর্ট হচ্ছে ওখানে। জীবননগর পেরিয়ে যেতে হয় থানচি, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়িতে। পশ্চিমে পাহাড়সারির ওপাশে চকরিয়া, কক্সবাজার। উত্তরে হেলিপ্যাডের ওপাশে বান্দরবানের রাস্তা। পূর্ব-দক্ষিণে বলিপাড়া।
ওই বলিপাড়া ছুঁয়ে সাঙ্গু নদী দক্ষিণ থেকে উত্তরে বয়ে গেছে। এই এতো দূর থেকেও সাঙ্গুর কোর্সটা ঠিকই বুঝা গেলো। মন ছুটে গেলো ৪৪ কিলোমিটার পেছনে, মিলনছড়ির পাহাড়ে। আমরা যে রিসোর্টটাতে আছি, সেটাও এই সাঙ্গুর তীরে। রিসোর্টের সঙ্গে তাই অদ্ভূত একটা মিল খুঁজে পেলাম নীলগিরির। পার্বত্য এলাকার সবচেয়ে দীর্ঘ নদী সাঙ্গু যেন এক পলকে বান্দরবানের রিসোর্টের কাছে নিয়ে গেলো নীলগিরিকে। দূর পাহাড়ের এই চূড়াকে মনে হলো খুব কাছের প্রতিবেশী।
গিরিচূড়ার উত্তর বাহুর ওপরে কাঁচঘেরা ঘরে শক্তিশালী এক টেলিস্কোপ। এ টেলিস্কোপ দিয়ে নাকি চট্টগ্রাম পর্যন্ত দেখা যায়। কিন্তু কাঁচঘেরা ঘরে তালা ঝুলছে। সেটাকে এখন দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়নি বলে জানা গেলো।
ওই কাঁচঘরের পাশের ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকা ৩০ আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্য লুৎফর রহমান বেশ রসিক মানুষ। পাশেই ছবি তোলায় ব্যস্ত ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এর প্রোগ্রাম সাপোর্ট অফিসার সেলিনা আক্তার ও প্রজ্ঞার প্রোগ্রাম অফিসার ফারজানা ববিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আপনারা ওই চেয়ারে বসে ছবি তোলেন। রানী রানী লাগবে।
তাকিয়ে দেখি চূড়ার কিনারায় এক পাথুরে চেয়ার। কিন্তু প্রখর রোদে গরম হয়ে আছে। সেলিনা ও ববি তাতে বসলেন না ঠিকই, কিন্তু কিছুটা নেমে পাহাড়ের ভাঁজে আর একটা একইরকম চেয়ারে গিয়ে বসে ছবি তুলতে লাগলেন রানীর পোঁজে।
চূড়ায় বসানো নির্দেশক বলছে, থানচি এখান থেকে ৩৩, বান্দরবান ৪৮, চিম্বুক ১৮, রুমা ৪৯ ও ক্রেওক্রাডং ৬২ কিলোমিটার দূরে।
উত্তরে পাহাড়ের ঘাড়ের কিনারায় গড়া হেলিপ্যাডে সিটিএফকের কান্ট্রি ডিরেক্টর তাইফুর রহমানের নেতৃত্বে ছবি তোলায় ব্যস্ত অধিকাংশ সফর সঙ্গী। যে যার মতো গিরিচূড়ার বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে উপভোগ করছেন অসংখ্য পাহাড় আর উপত্যকার সৌন্দর্য।
বেলা পড়ে আসছে। নামার তাগাদা দিতে হা হা করে ছুটে এলেন মহিদুল হক রাজু। সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেন, ছ’টার পর এসব রাস্তায় গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ। তাড়াতাড়ি ফিরে যেতে হবে। মনে রাখবা, আমি একজন সামান্য ওসি। সব কিছু সামলাতে পারবো না।
তার ওসিগিরিও আনন্দের খোরাক হয়ে থাকলো পুরোটা সময়।
ফেরার পথে অ্যাক্সিডেন্টের জায়াগাটায় গাড়ি থামালো শাহাবুদ্দিন। গাড়ি থেকে নেমে ভয়ে ভয়ে উঁকি দিলাম রাস্তার কিনারার খাদে। দুমড়ে মুচড়ে পড়ে থাকা গাড়িটিকে অনেক ছোট দেখাচ্ছে।
মিনিট তিন পর ফের পাহাড়ের ঢাল বেয়ে গড়াতে শুরু করলো চাঁদের গাড়ি। থামলো এসে সীতার পাহাড়ের কাছে জোড়া বটগাছের নিচে।
দারুণ টাইমিং। দিগন্তে পাহাড়ের গাছগাছালি ছুঁয়ে থাকা মেঘপুঞ্জের ওপরে ঝুলছে সূর্যটা। টকটকে লাল। কয়েক মিনিটের মধ্যেই হারিয়ে গেলো মেঘের আড়ালে। পাহাড়ের পটভূমিতে এমন সূর্যাস্ত বিরলই বটে।
জোড়া বটগাছ ছাড়িয়ে আবার পাহাড় গড়ানো শুরু করতেই ঝপ করে আঁধার নামলো। সামনে রাস্তার ওপর ঝুলে থাকা পাহাড়ের শরীরে আগুন জ্বলছে। আগুনের কিছুটা আঁচ গায়ে লাগিয়ে দ্রুত রাস্তাটুকু পার হলো চাঁদের গাড়ি। ডানে-বাঁয়ে দূরের পাহাড়ে হুট করে দেখা মিলছে অগ্নিশিখার। জুমের আগুনে এখন পুড়ছে বান্দরবানের পাহাড়। আসছে বর্ষায় নতুন ফল ও ফসলের চাষ হবে আগুনে পোড়া পাহাড়ের শরীরে।
এই রাতেও স্থানে স্থানে রাস্তা মেরামতের কাজ করছেন ১৯ ইসিবি’র (ইঞ্জিনিয়ার্স কনসট্রাকশন ব্যাটালিয়ন) সদস্যরা। পার্বত্য এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তাগুলো ইসিবি’র তত্ত্বাবধানেই নির্মিত।
ফেরার পথে শৈলপ্রপাতে থামলো চাঁদের গাড়ি। চিম্বুকের দূরত্ব এখান থেকে ১৮ কিলোমিটার। রাস্তার পুব লাগোয়া স্থানে হাতে তৈরি পাহাড়ি পণ্যের পসরা নিয়ে গোটা তিনেক বম দোকান। পশ্চিম ঘেঁষে প্রপাতে নামার সিঁড়ি।
প্রজ্ঞা’র মিডিয়া লিয়াজোঁ অফিসার হাসিবুজ্জামানের টর্চের আলোয় সিঁড়ি বেয়ে দু’তলা সমান নিচে নামলাম। তারপর পাটাতন বেয়ে কিছুটা এগিয়ে আরো একতলা। কুলকুল শব্দে বয়ে যাচ্ছে ঝরনার পানি। এখন শুকনো মৌসুম, তাই পানি কম। কিন্তু কয়েক ধাপের প্রপাত হওয়ায় কম পানিরই তোড় তীব্র।
পিচ্ছিল প্রপাতের একটা ভাঁজে নামলাম কোনোমতে। পা পিছলালেই কয়েক ফুট দূরে যাবো মুহূর্তে। তারপর আরো একধাপ নিচে পড়ে আবার পতন। পড়ে যাতে না যাই তাই পেছন থেকে টেনে ধরে রইলেন হাসিবুজ্জামান। শরীরের ঝুল সামলে মাথা নিচু করে ঝরনার পানি মাখলাম মুখে, ঘাড়ে, গলায়। গিলেও নিলাম দু’ঢোক। আহ, কি শান্তি! এমন গরমেও পানি এতো শীতল কি করে হয়?
পাহাড়ে পানির সঙ্কট তীব্র। তাই শৈলপ্রপাতের মতো ঝরনার জলই ভরসা পাহাড়ের গায়ে বসতি গড়া মানুষের। বর্ষা এলে এসব প্রপাত ফুলেঁফেঁপে ওঠে। শান্ত নালার তিরতিরে পানি পরিণত হয় তীব্র খরস্রোতে। তখন এই শৈলপ্রপাত কতোটা রুদ্র মূর্তি নেয় জানার ইচ্ছা হলো খুব।
এ যাত্রায় আমাদের সফরসঙ্গীদের মধ্যে আরও ছিলেন অর্থনীতি প্রতিদিনের নিউজ এডিটর হুমায়ুন সাদিক চৌধুরী, যুগান্তরের অ্যাসিসট্যান্ট এডিটর সূচি সৈয়দ, বাংলাভিশনের সিনিয়র নিউজ এডিটর ও আত্মা’র আহ্বায়ক রুহুল আমিন রুশদ, সস্ত্রীক এনটিভির চিফ নিউজ এডিটর জহিরুল আলম, সমকালের নিউজ এডিটর সবুজ ইউনূস, দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট এর নিউজ এডিটর সাজ্জাদ হোসেন, আরটিভির ডেপুটি চিফ নিউজ এডিটর রাজিবুল হাসান খান, কালের কণ্ঠ’র সিনিয়র রিপোর্টার তৌফিক মারুফ, ডেসটিনির চিফ রিপোর্টার অনিল সেন প্রমুখ, সিটিএফকে এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার ইভা নাজনীন, প্রজ্ঞা’র প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর হাসান শাহরিয়ার, ইভেন্ট ম্যানেজার ওয়ালি নোমান ও প্রোগ্রাম অফিসার ফারজানা ববি প্রমুখ।
কিন্তু পাহাড়ি পথের ঝক্কি সামলাতে চাইলেন না বলে রিসোর্টেই রয়ে গিয়েছিলেন নয়াদিগন্তের ডেপুটি এডিটর আযম মীর।
১৬ থেকে ১৮ এপ্রিল বান্দরবানের হিলসাইড রিসোর্টে ক্যাম্পেইন ফর ট্যোবাকো কনট্রোল ফ্রি কিডস (সিটিএফকে), প্রজ্ঞা ও অ্যান্টি-ট্যোবাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (আত্মা) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘ট্যোবাকো কনট্রোল ওয়ার্ক শপ ফর সিনিয়র জার্নালিস্ট’ কর্মশালার ফাঁকেই এই নীলগিরি ভ্রমণ।
** পাহাড়ের ভাঁজে পৌনে ৪ দিন
** জীবন পুড়ছে তামাকের আগুনে
** কোম্পানিকে লাভে রেখে তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৪