শুনে যে কেউ আশ্চর্য হবেন, এ কেমন কথা— কোনো এসি নাই ফ্যান নাই— আবার তার মান চার তারকা কীভাবে হয়। গত সপ্তাহেও মালয়েশিয়ায় সচরাচর-গরমের-হাত থেকে শীতল কোনো স্থানে যাবার প্লান করলাম— ছেলেদের স্কুল বন্ধ তাই এই পরিকল্পনা।
ক্যামেরন হাইল্যান্ডের নাম অনেকবার অনেকের কাছে শুনেছি। তাই আমার স্ত্রী বললো ওখানে চলো। আমি গুগল সার্চ দিলাম “Best Hotels in Cameron Highland”. পুরো একগাদা হোটেলের লিস্ট এলো, তারমধ্য থেকে দেখলাম চার তারকা বিশিষ্ট একমাত্র হোটেল Century Pine Resorts. অন্যগুলোও দেখলাম— পছন্দ হলো এই চার তারকা হোটেল। বিশেষ প্যাকেজ আছে দেখলাম— মাত্র ৫৬০ রিংগেটে দুইরুম— নাস্তাসহ বুক করলাম। একরাতের জন্য।
পরদিন সকালে রওনা দিলাম— ফোর হুইল ড্রাইভ জিপ নিয়ে। ইপোহ শহরকে ছেড়ে বা দিকে ঢুকেই পাহাড়ে উঠছি। আমাদের পাহাড়ে ওঠার অভ্যাস দীর্ঘ দিনের। জীবনের শুরুর দিকে নেপালে-ভুটানে শতবার গেছি— পাহাড়ে পোখোরা, নাগরকোট, অন্নপূর্ণা অনেক জায়গায় ঘুরেছি। ভুটানের পারো-থিম্পুতেও পাহাড় বেয়েছি। তানজানিয়ার পাহাড়ও গাড়িতে করে উঠেছি। কিন্তু এই ক্যামেরন হাইল্যান্ডে এর বিচিত্র অভিজ্ঞতা হলো, এতো বাঁক কোনো পাহাড়ে আজ অবধি দেখি নাই। রীতিমত— বাচ্চাদের আর স্ত্রীর অবস্থা বড়ই করুণ হলো। শেষমেষ ৭০ কিলোমিটার রাস্তা পার হয়ে পৌঁছলাম হোটেলে। অনেক বড় হোটেল, ১৫০ শয্যার। অন্য সুযোগসুবিধা তো আছেই।
যথারীতি চেকইন করে রুমে ঢুকলাম। অনেক বড় আর সুন্দর রুম— রুমের সামনে সুন্দর লন। রুমে ঢুকে সবাই স্নানে গেলাম। তারপর চা খেয়ে বসলাম। রুমের তাপমাত্রা তখন ১৮ ডিগ্রি। বেশ শীত। কুয়ালালামপুরের ৩৫/৩৫ ডিগ্রি থেকে মাত্র ১৮ ডিগ্রি, মানে বেশ শীত। চা খাওয়াতে একটু উষ্ণ হলো— মনও একটু চাঙ্গা হলো।
একজন হোটেল স্টাফ এলো কিছু লাগবে কিনা, রুম ঠিক আছে কি-না তা জিজ্ঞেস করতে। আমি লক্ষ্য করলাম রুমের কোথাও এসি নাই, ফ্যানও নাই। কোনো রিমোট বা সুইচও নাই— তাই হোটেল স্টাফকে জিজ্ঞেস করলাম— চার তারকা হোটেলে এসিও নাই, ফ্যানও নাই এটা কেমন হোটেল! আর চার তারকাই বা হলো কিভাবে!
বিনয়ের সঙ্গে হোটেল স্টাফ জানালেন ‘জনাব— পাহাড়ে সারা বছরই— আল্লাহর ৩০ দিন— তাপমাত্র ১৫ থেকে ২০ এর মধ্যে থাকে— তাই এসি বা ফ্যানের প্রয়োজন হয়নি গত ২৫ বছর। কিন্তু হোটেলের অন্যান্য সুবিধাসমূহের বিচারে এটি চার তারকা মানের’।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৪