ঢাকা: দক্ষতা কিংবা সক্ষমতা দুইয়ের কোনোটি না থাকলেও দীর্ঘ চার বছর ধরে হযরত শাহজালালসহ দেশের প্রধান তিনটি বিমান ও স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশনের দায়িত্ব নিয়ে বসে আছে ইমিগ্রেশন পুলিশ।
আর ইমিগ্রেশন পুলিশের দক্ষতার অভাবে আকাশপথের যাত্রীদের হয়রানি বেড়েই চলেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিমানবন্দরের দায়িত্ব পালন করা ইমিগ্রেশন পুলিশের একজন সদস্য ৬ মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছর পর্যন্ত দায়িত্বে থাকেন। এরপর বিমানবন্দর থেকে তাদের অন্য বিভাগে বদলি করে দেওয়া হয়। আর এই বদলির মূল কারণ অল্প সময়ে দুর্নীতি-অনিয়মে জড়িয়ে পড়া।
অনুসন্ধানী তথ্য বলছে, বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনের কাউন্টারে কর্মরত ইমিগ্রেশন পুলিশের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসাররা এক বছর এবং ইন্সপেক্টর এবং এএসপি সমমর্যাদার কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ ৬ মাস দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ের মধ্যে একজন পুলিশ দক্ষ হয়ে ওঠার আগেই তাকে বিদায় নিতে হয়। অনিয়ম এবং দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া রোধ করতেই পুলিশ বিভাগ এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। অথচ অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধে তারা পদক্ষেপই নিচ্ছে না।
পুলিশের দুর্নীতির কারণে দ্রুত-বদলির কথা স্বীকার করেন এয়ারপোর্টে কর্মরত পুলিশের সাবেক এক কর্মকর্তা। নাম গোপন রাখার শর্তে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ইমিগ্রেশন পুলিশের অনেককে ৬ মাসের বেশি রাখা হয় না কারণ বিমানবন্দর এমন একটি জায়গা যেখানে অসদুপায়ে আয় করা যায়। এর আগে বেশ কয়েকবার বিমানবন্দরের বিভিন্ন বিভাগে দুর্নীতির কারণে ইমিগ্রেশন পুলিশকে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বদলি করা হয়েছে।
সম্প্রতি ২৬ মে বেনাপোল সীমান্তে মাত্র ৫০০ টাকার চুক্তিতে চোরাচালানের ৩ বস্তা চা খালাসের জন্য একজন ইমিগ্রেশন পুলিশকে আটক করে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)।
এভিয়েশন ও ট্যুরিজম বিশেষজ্ঞ এবং ভ্রমণ বিষয়ক পত্রিকা বাংলাদেশ মনিটরের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, একজন বিদেশি নাগরিক যখন বাংলাদেশে প্রবেশ করেন, প্রথম তিনি ইমি্গ্রেশন পুলিশেরই মুখোমুখি হন। বিমানবন্দর যদি দেশের আয়না হয়ে থাকে, তবে ওই আয়নার প্রধান উপাদান ইমি্গ্রেশন পুলিশ। অথচ এই পুলিশের আচরণ আদৌ বন্ধুত্বপূর্ণ নয়।
তিনি বলেন, যেহেতু পুলিশ দক্ষ নয়, তাই ইমিগ্রেশন কাজ সম্পন্ন করতে অনেক বেশি সময় লাগে। এজন্য দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া উচিত। পুলিশকে ট্যুরিস্ট ফ্রেন্ডলি আচরণের উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ ও হালফিল ধারণা দেওয়া দেওয়া উচিত।
তবে অনিয়ম দুর্নীতির কারণে বদলি করার কথা অস্বীকার করেন বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাকিবুল আখতার। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী তাদের বদলি করা হয়। অন্য কোনো কারণে নয়।
শুধু অনিয়ম নয়, পুলিশের দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিমানবন্দরে নিয়মিত গমনাগমন করা আকাশপথের যাত্রীরা। আহসানুর রহমান নামে এক যাত্রী অভিযোগ করেন, ইমিগ্রেশন চেকিংয়ের সময় কাউন্টারে বসে থাকা পুলিশ সদস্যরা খুব ধীরে-সুস্থে কাজ করেন। যাত্রীদের সঙ্গে তাদের কথা বলার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হয়, যেন সবাই অপরাধী। তাদের দেখলে মনে হয় তারা সবসময় ক্লান্ত আর যাত্রীদের উপর অনেক বিরক্ত।
তবে ইমিগ্রেশন পুলিশের অক্ষমতার কথা মানতে নারাজ বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাকিবুল আখতার। তিনি বলেন, ইমিগ্রেশনে আসার আগে পুলিশদের ২-৩ মাস প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তবে ভিসা নং, বহির্গমন ও আগমনের তারিখ এন্ট্রি এবং ছবি তোলাসহ অন্যান্য ডাটা এন্ট্রি দিতে একটু সময় লেগে যায়। তাছাড়া ইমিগ্রেশনে ১-২ ঘণ্টা অপেক্ষা করা বড় কিছু না। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও একই। ফ্লাইটের প্রেসার বেশি থাকলে ইমিগ্রেশন কাউন্টারে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) এর পরিচালক মাসুদ হোসেনও বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগে যাত্রী হয়রানির জন্য পুলিশের অদক্ষতা, প্রশিক্ষণের অভাব ও অঅচরণগত সমস্যাকেই দায়ী করেন।
তিনি বলেন, ইমিগ্রেশন পুলিশের আচরণ মোটেই সন্তোষজনক নয়। তারা ইংরেজি বোঝে না, কম্পিউটার চালনায় দক্ষ নয়। তাছাড়া ট্যুরিস্ট ফ্রেন্ডলি ব্যবহারও তারা করে না। এসব নেতিবাচক দিক দূর করতেই পারলেই পুলিশের কাছ থেকে আশাব্যঞ্জক সেবা যেতে পারে। এটা করা না গেলে এই হয়রানি ও বিরক্তির বৃত্ত থেকে বের হওয়া সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৪