ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

জামালের কূটচালে হাতছাড়া হচ্ছে লাভজনক গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৪
জামালের কূটচালে হাতছাড়া হচ্ছে লাভজনক গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং

ঢাকা: বছরের পর বছর লোকসান, অনিয়ম, দুর্নীতির রাহুগ্রাসে আক্রান্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।

এসব থেকে বিমানকে রক্ষা করতে কোনো উদ্যোগ না নিলেও প্রতিষ্ঠানটির লাভজনক গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং বিভাগটি বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।



 
বিমানের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদের কূটচালেই লাভজনক এ বিভাগটি অচিরেই বেসরকারি খাতে চলে যাচ্ছে। এ সংক্রান্ত সব নীল নকশা ইতোমধ্যে চ‍ূড়ান্ত করেছেন বিমানের এই শীর্ষ কর্তা।  

লাভজনক গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং বিভাগটি প্রতি বছর কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকা নিট মুনাফা অর্জন করছে। আর ‘সবেধন নীলমনি’ এই খাতটির দিকে কুনজর পড়েছে খোদ বিমান চেয়ারম্যানের।  

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই বিভাগটি পার্টনারশিপের নামে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিতে পারলে বিমানকে ডুবানোর ষোলকলা পূর্ণ হবে জামাল উদ্দিন আহমেদের। বিমান গত চার বছরে লোকসান দিয়েছে এক হাজার কোটি টাকার ওপরে। এরমধ্যে এক বছরেই ৬০০ কোটি টাকা লোকসান দেওয়ার নজির রয়েছে। আর এর পুরোটা সময়ই সংস্থাটির চেয়ারম্যান ছিলেন জামাল উদ্দিন আহমেদ।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর আগে এ বিষয়ে তথ্য চেয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছিল বিমান। ওই প্রক্রিয়া কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই সম্পন্ন করেন জামাল উদ্দিন আহমেদ। এ বিষয়ে বিমানের ভেতর ও বাইরে থেকে কোনো বাধা না আসায় বেশ সাহসী হয়ে ওঠেন তিনি।

এবার তাই লাভজনক খাতটি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের হাতে তুলে দিতে রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল দেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছেন তিনি। খুব শিগগিরই এই প্রপোজাল ছাড়া হচ্ছে।  

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিমানের লাভজনক এই খাতটি পেতে অনেক দিন ধরেই দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা ওঁত পেতে আছেন। বিগত বিএনপি সরকারের আমল থেকেই তাদের নজরে পড়ে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং ব্যবসার ওপর।

মূলত তখন থেকেই তারা উঠে পড়ে লাগেন এই ব্যবসাটি পেতে। তৎকালীন বিএনপি সরকারের এক মন্ত্রী পুত্রের মাধ্যমে ব্যবসাটি নেওয়ার তোড়জোড় চালায় মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান।

এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন বাংলাদেশের এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীও। এসব তোড়জোড়ের মধ্যেই বিএনপি সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর ১/১১ এর পরিবর্তিত পটভূমিতে এই চক্রের হোতারা চুপ মেরে যান।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর সুবিধাবাদী এই চক্রটি আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু বিমানের শীর্ষ পর্যায়ের লোকজনকে ম্যানেজ করার চেয়ে বড় বাধা হয়ে দাড়ায় বিমানের শ্রমিকদের বাগে আনা।

তবে এবার সেই প্রক্রিয়াতেও অনেকটা এগিয়েছে চক্রটি। এবারও দেশের এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর মাধ্যমে কাজটি নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে তারা জানান।

বিমান সংশ্লিষ্টরা বলেন, এই প্রভাবশালী চক্র বিমানের শ্রমিকদের নিজেদের বাগে আনার দায়িত্ব দিয়েছেন বিমানের চেয়ারম্যানকে। সম্প্রতি বিমান শ্রমিকরা সংস্থার অর্গানোগ্রাম প্রবর্তন, ইউনিফর্ম ভাতা চালুসহ ১৪ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।

এসব দাবিতে গত বছর বিমানের শ্রমিকরা ধর্মঘটের মতো কঠোর আন্দোলনেও গিয়েছিলেন। বিগত দুই বছর ধরে এসব দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করলেও এর কোনো সুরাহা হয়নি।

তবে হঠাৎ করেই বিমান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের কয়েকটি দাবি মেনে নেয় এবং বাকি দাবিগুলোও মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেয় বলে বিমানের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানায়।

সূত্র জানায়, বাকি দাবি মানার ক্ষেত্রে বিমানের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদ কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের পার্টনারশিপের ব্যাপারে কোনো ধরনের বিরোধিতা না করলে সব দাবি মেনে নেওয়া হবে।

এদিকে গত ৫ জুলাই বিমানের পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংস্থার পরিচালনা পর্ষদকে খুশি করতে ওই প্রভাবশালী ব্যবসায়ী পাঁচ তারকা হোটেলে সভা আয়োজনের সব ব্যয় বহন করেছেন বলেও একটি সূত্রে জানায়।

সূত্রটি বলছে, আগামীতে অভিজাত হোটেলে পর্ষদ সভা আয়োজনের খরচ দিতেও রাজি হয়েছেন ওই ব্যবসায়ী।

এছাড়া বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং মানসম্মত নয়-সরকারের বিভিন্ন মহলে এ বিষয়টি নেতিবাচকভাবে উত্থাপন করছে বিমান কর্তৃপক্ষ।

বিমান সূত্র জানায়, লাভজনক এ খাতটি বেসরকারি খাতে দেওয়ার জন্য বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কয়েকজন কর্মকর্তাও হাত মিলিয়েছেন তাদের সঙ্গে। তারাও সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করছে বিমানের হাতে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং থাকা উচিত নয়।
 
কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত বিগত ৫ বছরেও বিমানের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদ এই খাতের মানোন্নয়নে কোনো ব্যবস্থা নেননি। গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতির যথেষ্ট অভাব রয়েছে।

অথচ এসব যন্ত্রপাতির কেনার উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো লাভজনক খাতটি বেসরকারি খাতে দিয়ে এর মান বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।

এদিকে শ্রমিকদের ম্যানেজ করার বিষয়টি শ্রমিক নেতারা অস্বীকার করেছেন।

এ প্রসঙ্গে বিমান শ্রমিক লীগের সভাপতি মশিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ম্যানেজ করার কোনো সুযোগ নেই। বিমানের একমাত্র লাভজনক খাতটি বেসরকারি খাতে যেতে দেবো না। যদি লোকসান কিংবা মানোন্নয়নের জন্য কোনো বিভাগকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে হয় তাহলে সবার আগে বিমানকেই বেসরকারি ছেড়ে দিতে হবে। আর দায়িত্ব ছাড়তে হবে বিমানের চেয়ারম্যানকেও। কিন্তু বিমানের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদ সেটি না করে লাভজনক প্রতিষ্ঠানটিই অন্যের হাতে তুলে দিয়ে বিমানকে ধ্বংসের চক্রান্ত করছেন।    

বাংলাদেশ সময়: ১৩১২ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।