খাগড়াছড়ি: দেশের এক আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র হচ্ছে খাগড়াছড়ি। চারদিকে চোখ জুড়ানো পাহাড় আর পাহাড়।
হাজার হাজার ফুট উঁচু পাহাড়গুলো যেন ঢেউ খেলানো শাড়ি। আকাশের মেঘ ছুঁয়ে যায় পাহাড়ের বুক। শরৎ, হেমন্ত এবং শীতে শুভ্র মেঘের খেলাও চলে সবুজ পাহাড়ের ভাজে ভাজে।
সুন্দরের সমারোহে খাগড়াছড়ি অঞ্চল পরিণত হয়েছে প্রকৃতির এক অপরূপ লীলাভূমিতে। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য একে করেছে আরো নয়নাভিরাম।
এ ঈদে ঘুরে আসতে পারেন অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি খাগড়াছড়ি।
আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র
এটি খাগড়াছড়ির ঐতিহ্যবাহী সবচেয়ে আকর্ষণীয় সুদৃশ্য নয়নাভিরাম পর্যটন স্পট। সূর্যাস্তের পর আলুটিলা থেকে খাগড়াছড়ি দেখা অর্থাৎ রাতের খাগড়াছড়ি শহর আর এক মনোলোভা দৃশ্য। দূর থেকে দেখা যায় ঘন কালো অন্ধকারে লাখো বাতির মিটি মিটি আলো। যেন কোনো শিল্পীর তুলিতে অাঁকা কল্পচিত্র। বলা যায়, বিনোদনপ্রেমী একজন পর্যটকের মনোআকর্ষণ উপকরণে ভরপুর আলুটিলা। পর্যটকদের জন্য বসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।
রহস্যময় সুড়ঙ্গ
আলুটিলার রহস্যময় সুড়ঙ্গ পর্যটকদের আরেকটি আকর্ষণ। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এ সুড়ঙ্গের এক প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে অন্য প্রান্ত দিয়ে বের হওয়া যায়। পাহাড়ের চোরা এ সুড়ঙ্গ দিয়ে একা ভ্রমণ যে কোনো পর্যটকের শরীর শিউরে উঠবে। সুড়ঙ্গ পেরিয়ে নিজেকে দুঃসাহসী ভাবতে ভালো লাগবে। তবে ভয়ের কোনো কারণ নেই। সুড়ঙ্গে ঢোকার জন্য মশাল পাওয়া যায়।
রিছাং ঝরনা
আলুটিলার পাদদেশে এ ঝরনাটি অবস্থিত। স্থানীয় মারমারা ঝরনাটিকে ‘রিছাং ঝরণা’ নাম দিয়েছেন। এ ঝরনা থেকে কিছু দূরে প্রায় ৩০ হাত উচ্চতার আরো একটি ঝরনার দেখা মিলবে। পাহাড় আর সবুজের বুক চিড়ে পড়া ঠাণ্ডা পানি অনবরত দুই ঝরনার বুক দিয়ে ছুটে চলছে।
দেবতা পুকুর
জেলা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে মাইসছড়ির নুনছড়িতে ৭৫০ ফুট ওপরে অবস্থিত একটি ভিন্ন প্রকৃতির স্বচ্ছ পানির অপূর্ব প্রাকৃতিক পুকুর। স্থানীয় আদিবাসী ত্রিপুরাদের মতে, পাহাড়ের ওপরের এ পুকুরের পানি কখনো কমে না এবং পানি পরিষ্কার করতে হয় না। তাই তারা এর নাম দিয়েছেন মাতাই পুখুরি, অর্থাৎ দেবতা পুকুর। বছরের অধিকাংশ সময় পর্যটকদের আনাগোনা দেখা যায় এ পুকুরে। তবে বিশেষ করে নববর্ষে বা বৈসাবির দিনগুলোতে হাজার হাজার পর্যটকের দেখা মেলে এখানে।
অরণ্য কুঠির
খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায় অবস্থিত এ বৌদ্ধ মন্দির। এখানে দেখা যাবে দেশের অন্যতম বৃহত্তম বুদ্ধ মূর্তির। অরণ্য কুঠিরে রয়েছে ৪৮ ফুট উচ্চতার বাংলাদেশের বৃহত্তম বুদ্ধ মূর্তি। বিশাল এলাকাজুড়ে সবুজের পাশাপাশি এ মূর্তি ছাড়াও আরো অনেক মূর্তির দেখা মিলবে।
তৈদু ছড়া ঝরণা
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা ও দীঘিনালা উপজেলার সীমান্তস্থল দূর্গম সীমানাপাড়া গ্রামে অবস্থিত তৈদুছড়া ঝরনা। অাঁকা বাকা পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হবে এ ঝরনায়। অ্যাডভেঞ্চারের এ যাত্রায় যেতে যেতে আপনি দেখতে পাবেন ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর জীবন যাত্রা। শেষ পর্যায়ে দেখবেন বিশাল বিশাল হাতির মাথা আকৃতির পাথরের সারি। তার পর বিশাল সেই তৈদুছড়া ঝরণা। ঝরনার সেই পানির প্রবাহ দিয়ে গেলে দেখতে পাবেন আরো একটি সুউচ্চ ঝরনা।
সাজেক উপত্যকা
এমনিতে বাংলাদেশের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে পর্যটকদের আকর্ষণ একটু বেশি। আর সে আকর্ষণকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে ‘সাজেক’ উপত্যকা। আয়তনের দিক দিয়ে দেশের বৃহত্তম ইউনিয়ন পাহাড়িয়া ‘সাজেক’।
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত সাজেক এখন সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে পর্যটকদের হাতের মুঠোয়। রাঙ্গামাটির হলেও এ উপজেলায় যেতে হবে খাগড়াছড়ি হয়ে। কঠিন জীবন সংগ্রামে জয়ী পাংখো-লুসাই আর ত্রিপুরাদের পরিচর্যায় টিকে আছে এখনো অনেক নান্দনিকতা।
জেলা পরিষদ পার্ক
জেলা সদরের জিরো মাইল এলাকায় প্রায় ২২ একর জায়গাজুড়ে এ পার্কটির অবস্থান। দুই পাহাড়ের সংযোগে এখানে রয়েছে একটি ঝুলন্ত ব্রিজ, রয়েছে বাচ্চাদের জন্য কিডস জোন, এলাকাজুড়ে রয়েছে পর্যটনি কটেজ। পার্বত্য জেলা পরিষদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ পার্ক রান্নাবান্নাসহ পিকনিক করার আদর্শ জায়গা।
ক্ষুদ্র নৃ জনগোষ্ঠী
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় বাঙালি ছাড়াও বিভিন্ন নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বসবাস। চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা সম্প্রদায় নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে বসবাস করছে। ভিন্ন ভিন্ন ভাষাভাষী এসব জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন জীবন ধারা, ঐতিহ্যবাহী কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও সভ্যতা রয়েছে, যা সবাইকে মুগ্ধ করবে।
যাতায়াত ব্যবস্থা
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি খাগড়াছড়ি দেখতে যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির উদ্দেশে বিভিন্ন পরিবহনের আরামদায়ক বাস ছাড়ে। যেমন এস আলম, সৌদিয়া, শান্তি, শ্যামলী, স্টার লাইন ইত্যাদি। ঢাকার সায়দাবাদ, কমলাপুর, ফকিরাপুল, গাবতলী, কলাবাগান, টিটিপাড়া থেকে টিকিট সংগ্রহ করে খাগড়াছড়ি আসা যায়। আবার ট্রেনে আসতে চাইলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ট্রেনে এসে চট্টগ্রামের অক্সিজেন থেকে বাসের টিকিট সংগ্রহ করে খাগড়াছড়ি আসা যায়।
কোথায় থাকবেন
খাগড়াছড়িতে থাকার ব্যবস্থা মোটামুটি ভালো। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত পর্যটন মোটেল এবং সদরে ব্যক্তি মালিকানাধীন ইকোছড়ি ইন, শৈল সুবর্ণ হোটেলে রাত্রিযাপন করতে পারেন। এখানে সিঙ্গেল রুমের ভাড়া পড়বে ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা। ডাবল রুম ভাড়া পড়বে ৮০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা। তাছাড়া শহরেও আরো বেশ কিছু হোটেল রয়েছে। যেমন, হোটেল জিরান, নিলয়, ফোর স্টার, লবিয়তে সহনীয় ভাড়ায় থাকা যায়।
হোটেলের নাম এবং ফোন নাম্বার
পর্যটন মোটেল ০৩৭১-৬২০৮৪, হোটেল শৈলসূবর্ণা ০৩৭১-৬১৪৩৬, হোটেল জিরান ০১৫৫৩৭৫৯১২৩, হোটেল লবিয়ত ০৩৭১-৬১২২০, হোটেল থ্রি-স্টার ০১৮২০৭০১৭৭৬, ফোর স্টার ০৩৭১-৬২২৪০, হোটেল চেঙ্গী ০৩৭১-৬১২৫৪।
কিভাবে ঘুরবেন
শহরেই চাঁদের গাড়ি, কার, মাইক্রোবাস পাওয়া যায়। দরদাম করে ঘুরে আসতে পারেন পর্যটন এলাকাগুলো।
প্রয়োজনীয় কিছু ফোন নাম্বার
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সদর থানা- ০১৭৩০৩৩৬১৫৫ ,ওসি দিঘীনালা থানা- ০১৭৫৫৫৫১১৪৬, ওসি লক্ষীছড়ি থানা- ০১৭৫৫৫৫১১৫২, ওসি মহালছড়ি থানা- ০১৭৫৫৫৫১১৪৭, ওসি পানছড়ি থানা- ০১৭৫৫৫৫১১৪৮, ওসি সদর থানা- ০১৭৩০৩৩৬১৫৫, ওসি গুইমারা থানা- ০১৭৫৫৫৫১১৫৩, ওসি মানিকছড়ি থানা- ০১৭৫৫৫৫১১৫১, ওসি রামগড় থানা- ০১৭৫৫৫৫১১৪৯।
বাংলাদেশ সময়: ০০২৮ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৪