ঢাকা: ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরীর কর্মকাণ্ডের কারণেই ডুবেছে বেসরকারি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে সবকিছু এককভাবে চালিয়েও সংস্থাটির কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি তিনি।
বরং তার স্বেচ্ছাচারিতায় ইউনাইডেট এয়ারওয়েজের দেনার পরিমাণ ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
দুইদিনের ফ্লাইট বন্ধে ইউনাইটেডের যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানো নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
সোমবার এয়ারলাইন্সটির চেয়ারম্যান ও এমডি ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদের পদত্যাগ ও পরবর্তী সংকটের জের ধরে ডুবন্ত ইউনাইটেডের টিকে থাকার নতুন লড়াই শুরু হয়েছে।
ক্যাপ্টেন তাসবিরের কর্মকাণ্ড ও এয়ারলাইন্সের বিষয়ে কথা বলার জন্য বাংলানিউজের পক্ষ থেকে শনিবার ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের বর্তমান চেয়ারম্যান মাহতাবুর রহমানের সঙ্গে তার দুবাইয়ের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ততার কথা বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, তাসবিরের ক্রমাগত ব্যর্থতাই পরিচালনা পর্ষদকে ক্ষুদ্ধ করেছিল। যে কারণে পর্ষদ সদস্যদের সবাই একজোট হয়ে তাসবিরের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিলেন। এ অবস্থায় পদত্যাগ ছাড়া তার কাছে কোনো বিকল্প ছিল না।
সূত্র জানায়, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের পর্ষদ সদস্যদের সবাই বিদেশে থাকেন। এর মধ্যে তিনজন প্রবাসেই স্থায়ী। একজন আসা-যাওয়ার মধ্যেই থাকেন। তাসবির আহমেদের প্রতি বিশ্বাস থেকেই সবাই তাকে চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মতো দুটি গুরুদায়িত্ব দিয়েছিলেন।
কিন্তু তিনি এই বিশ্বাসের মর্যাদা ভুলুন্ঠিত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে এয়ারলাইন্সের ভেতর থেকেই।
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ থেকেই তিনি নিজের নামে ট্যাক (তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী) এভিয়েশন করেছেন।
একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে বিগত ৭ বছরে ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের উড়োজাহাজ সংখ্যা একটি থেকে ১১টিতে উন্নীত করেছেন।
নিজের সাফল্যের কথা তুলে ধরতে এই তথ্যটিই বারবার ব্যবহার করেছেন তিনি।
অথচ বিগত কয়েক বছরে শুধুমাত্র এয়ারলাইন্সের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষই (বেবিচক) ইউনাইটেডের কাছে ৮৪ কোটি টাকা পাবে।
এছাড়া বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দর, জ্বালানি কেনা, উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ সংস্থাসহ বিভিন্ন জায়গায় ইউনাইটেডের দেনার পরিমাণ আরো প্রায় ১০০ কোটি টাকা।
তাসবিরের ১১ উড়োজাহাজ কেনার সাফল্য পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের মন কাড়তে পারেনি। একের পর এক পুরনো উড়োজাহাজ কিনে শেয়ার বাজারের ক্ষুদ্র নিয়োগেরকারীদের প্রলোভন দেখিয়েছিলেন তাসবির।
শুধু তাই নয়, প্রচলিত আইন অনুযায়ী উড়োজাহাজ কেনার কথা থাকলেও সব নিয়ম ভেঙে জালিয়াতি করে উড়োজাহাজ কেনেন তিনি।
২০ বছরের পুরনো উড়োজাহাজ তাসবির কিনেছেন আন্তর্জাতিক দর থেকে অনেক বেশি দামে। এতে দেশ থেকে বাইরে অর্থপাচারের অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্বে।
প্রচলিত রীতিনীতি অনুযায়ী, খুচরা যন্ত্রাংশ প্রতিযোগিতামূলকভাবে প্রাপ্ত সর্বনিম্ন দরদাতার কাছ থেকে ক্রয় করা হয়ে থাকে।
এক্ষেত্রে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ দরপত্র ছাড়া শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের একক সিদ্ধান্তে উড়োজাহাজ কিনেছে।
অনিয়ম করে রাইট শেয়ারের মাধ্যমে বাজার থেকে ৪১৫ কোটি টাকা তুলে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল এয়ারলাইন্সটি।
স্টক এক্সচেঞ্চের এই নিয়ম ভঙ্গের বিষয়টি পরবর্তীতে সবাইকে সতর্ক করেছে। এ কারণে আবারো একইভাবে শেয়ার বাজার থেকে টাকা তুলতে গেলে বাধা হয়ে দাঁড়ায় খোদ এয়ারলাইন্সের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
তাসবির আহমেদ যাতে আবারো অনিয়মের মাধ্যমে শেয়ার বাজার থেকে টাকা তুলতে না পারেন সেজন্য স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করে বেবিচক।
পরিচালনা পর্ষদ এতটাই ক্ষুদ্ধ ছিল যে পর্ষদ সদস্য শাহীনুর আলম ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের বর্তমান সংকটের জন্য ক্যাপ্টেন তাসবিরকেই দায়ী করে প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্যও দিয়েছিলেন।
শাহীনুর আলম এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন পেশাদার নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ করে এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট অপারেশন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
কিন্তু তাসবির একজন বৈমানিক হওয়ায় সহকর্মী বৈমানিকেরা তাকে নিজেদের লোক মনে করতেন। তাছাড়া তার আকস্মিক পদত্যাগে এয়ারওয়েজের কোনো অর্থই কেউ তুলে তাৎক্ষণিকভাবে ফ্লাইট অপারেশন সচল রাখতে পারেননি। কারণ তাসবিরের সই ছাড়া ব্যাংক থেকে একটি টাকা তোলাও সম্ভব ছিল না।
কিন্তু ওই সময় কর্মীদের তাসবির বোঝাতে সক্ষম হন যে, তিনি না থাকাতেই সব ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সুতরাং সবকিছু স্বাভাবিক করতে পুনরায় তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
শেষ কৌশলে বিজয়ী হয়ে শুক্রবার আবারো ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। তবে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পর্ষদ সদস্য মাহতাবুর রহমানের হাতেই রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৪