ঢাকা: ‘সারাবিশ্বে শেফ পেশাটি অনেক আগেই প্রতিষ্ঠিত। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ রয়েছে পিছিয়ে।
ঢাকার পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিনের চিফ শেফ শুভব্রত মৈত্র্য শেফ পেশার সম্ভাবনা সম্পর্কে এভাবেই নিজের মতামত ব্যক্ত করেন বাংলানিউজের কাছে। সম্প্রতি ওয়েস্টিন হোটেলে বাংলানিউজের সঙ্গে এক আড্ডায় মেতেছিলেন তরুণ এই শেফ।
মাত্রই ৩০ এর কোটায় পা দিয়েছেন কলকাতার ছেলে শুভব্রত মৈত্র্য। আর এই অল্প বয়সেই ওয়েস্টিন হোটেলের মতো আন্তর্জাতিক হোটেল চেইনের চিফ শেফের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।
কঠোর পরিশ্রম, একাগ্রতা, অবিচল লক্ষ্যই এই তরুণ শেফকে ক্যারিয়ারে এত দ্রুত প্রতিষ্ঠিত করেছে। মুম্বাইয়ের হোটেল তাজসহ ভারতের একাধিক পাঁচতারকা হোটেলে কাজ করেছেন শুভব্রত মৈত্র্য।
অল্প বয়স অথচ দীর্ঘ এই ক্যারিয়ারে তার চোখ খুঁজছিল নতুন কিছু। ভারতে তো অনেক হলো। এবার দেশের গন্ডি পেরুনো উচিত। আবেদন করলেন ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলের চিফ শেফ পদে। ডাক পেলেন। নতুন কিছু করার নেশায় ছুটে এলেন বাংলাদেশে। ১২ বছরের অভিজ্ঞতা ঢেলে এখন হোটেলের ১১২ জন শেফের বিশাল এক কর্মী বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে।
একাধারে ভারতীয়, থাই, চাইনিজ, সমসাময়িক ইউরোপীয়ান ও ইতালিয়ান খাবার তৈরিতে পারদর্শী বাঙালি শেফ মৈত্র্য বলেন, হোটেলের রেস্টুরেন্টে ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো থাকবে। এর সঙ্গে উপস্থাপন ও স্বাদে নতুনত্ব আনতে হবে।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ২৫টি আইটেমের মধ্যে ১০টি নতুন আইটেম ঢুকিয়ে দিন। এরপর দেখেন অতিথি এখান থেকে ঠিকই কয়েকটি খাবার পছন্দ করছেন। পুরনো আইটেমের মধ্যে যেটি কম খাচ্ছে সেটি বাদ দিন। এভাবে আস্তে আস্তে পুরনো আইটেমগুলো তালিকা থেকে সরিয়ে ফেলুন। তাছাড়া নতুন যে অতিথি আসবে সে নতুন কোনো আইটেম ঠিকই খুঁজবে।
অতিথিদের নিত্য নতুন খাবারের স্বাদ দিতে ওয়েস্টিন প্রতি মাসেই একটি করে ফুড ফেস্টিভ্যাল আয়োজন করে বলেও জানান তিনি।
ছোট বেলা থেকেই রান্নার প্রতি একটি আলাদা ভালোলাগা কাজ করতো শুভব্রতের। বিশেষ করে পাশের বাড়ির বৌদিদের আচার বানানো দেখে সেটিকে একটু ভিন্নভাবে তৈরি করার মধ্য দিয়েই শুরুটা তার। চাকরিজীবী মা-বাবার একমাত্র সন্তান হওয়ায় মাকে সাহায্য করতেন। সেখান থেকে রান্নাঘরে আসা-যাওয়া। মা যখন বাসায় থাকতেন না তখন সখ করে রান্নাও করতেন। এভাবে আস্তে আস্তে রান্নার জগতে প্রবেশ।
দ্বাদশ ক্লাসে থাকতেই নিজের শেফ গুণকে আবিষ্কার করলেন তরুণ মৈত্র্য। বেশিরভাগ বাবা-মা যখন সন্তানকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানানোর স্বপ্নে বিভোর, তখন ওদিকে পা মাড়াননি তিনি। পেশা হিসেবে বেছে নিতে সংকল্পবদ্ধ হলেন সৃষ্টিশীল কোনো কাজকে।
পূর্ব পুরুষের বাড়ি রংপুরে। তবে মৈত্র্যের জন্ম ও বেড়ে ওঠা দুটোই কলকাতাতেই। ভারতের নাম করা পাঁচতারকা হোটেল কাজের অভিজ্ঞতা ঢেলে দিয়ে দিনরাত কাজ করছেন নতুন কর্মস্থলে। গত মে মাসে যোগ দিয়েছেন ওয়েস্টিনে। আর এই অল্প সময়েই অতিথি ও সহকর্মীদের মন জয় করে নিয়েছেন তার রান্নার দক্ষতা দিয়ে।
ওয়েস্টিনে যোগ দিয়ে সকাল থেকে মধ্য রাত অবধি কাজ করেন এই তরুণ শেফ। কাজে তার কোনো ক্লান্তি নেই। তাই তো তার কাছে কোনো শেফকে আসতে হয় না, নিজেই এক ফ্লোর থেকে আরেক ফ্লোরে ছুটে যান সহকর্মী শেফদের কাছে। যে যখনই কোনো সমস্যায় পড়ছেন পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। হাতে কলমে বুঝিয়ে দিচ্ছেন তা। নিজের রান্না কৌশল শুধু নিজের মধ্যেই না রেখে অন্যের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ায় বিশ্বাসী তিনি।
তরুণ শেফ মৈত্র্য মনে করেন, এই পেশাটি হবে সারাক্ষণের জন্য। সব সময়ই এটি নিয়ে চিন্তা করতে হবে। নিত্য নতুন কি আইটেম করা যায় তা কাজ করতে হবে।
শুভব্রত মৈত্র্য বলেন, ইলিশ মাছ, ভাপা ইলিশ, লাউ চিংড়ি, দুধ লাউসহ সত্যিকার বাংলাদেশি অনেক খাবার হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এসব খাবারকে আবার নতুনভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে তরুণদের মাঝে জনপ্রিয় করতে হবে।
মৈত্র্যের মতে, অতিথিকে নতুন কিছু খাওয়াতে ঝুঁকি নিতেই হবে। অতিথি যে খাবার খেতে চান সেটি যেমন তাকে দিতে হবে, সেই সঙ্গে নতুন নতুন খাবারের প্রতি তাকে আকর্ষণ করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৪