সিঙ্গাপুর থেকে: স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় পৌঁছুলাম সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি এয়ারপোর্টে। মাঝখানের সোয়া চার ঘণ্টা সময় কিভাবে চলে গেলো বুঝতেই পারলাম না! রিজেন্ট এয়ারের কেবিন ক্রুদের ব্যবহার আর সেবা মুগ্ধ করলো আমিসহ পুরো ফ্লাইটের যাত্রীদের।
৪এফ এ উইন্ডো সাইটে পড়লো সিট। পাশে এসে বসলেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী আয়ুব উল্লাহ। পরিচয়ে জানতে পারলাম তিনি আমার বিশ্ববিদ্যালয়েরই বড় ভাই, ১৯৭৯ ব্যাচের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ ছাত্র বললেন, আমি সবসময়ই রিজেন্টে সিঙ্গাপুর যাতায়াত করি। কারণ ঝাঁকুনি হয় না। ঢাকা-সিঙ্গাপুর রুটে অন্য প্লেনের চেয়ে রিজেন্টের সার্ভিস ভালো।
তার কথা শেষ হওয়ার আগেই বেশ স্মার্ট একজন তরুণ এসে জানতে চাইলেন, পত্রিকা পড়বো কিনা? অনলাইনের এ যুগে পত্রিকা! তারপরও সময় কাটানোর জন্যে বললাম, দেন। অনেকগুলো পত্রিকা থেকে ভিন্ন নামের দুটি বেছে নিলাম। এর বাইরেও রয়েছে একটি করে লাইফ স্টাইল ম্যাগাজিন। এগুলো উল্টিয়ে সময় কাটানো যায় বেশ।
অক্টোবরের ১৭ তারিখে একটি বেসরকারি কোম্পানির এয়ারক্রাফটে করে কুয়ালালামপুর থেকে গিয়েছিলাম ঢাকায়। সত্যি বলতে অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। আড়াই ঘণ্টা দেরি ছাড়াও, প্লেনের ভেতরে গরম আর যন্ত্রণাদায়ক সরু সিট।
সোমবার বেলা ১২টায় ঢাকার শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর থেকে রিজেন্টের ফ্লাইটে রওনা করি সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে। লিফটে প্লেনে ওঠার সময় কেবিন ক্রুদের উষ্ণ অভ্যর্থনায় আন্তরিকতা ছিল স্পষ্ট। এরা সবাই বাংলাদেশি। অন্য এয়ারের মতো দেশ-বিদেশের মিশ্রণ করেনি। এজন্য যে কোন যাত্রীর কাছে তারা অনেক বেশি আপন। কেউ ইংরেজি না জানলেও, প্রয়োজনীয় কথা জানাতে পারেন।
১২টা বাজার মিনিট ৫ আগে যাত্রীদের সামনে এসে হাজির হন দুইজন ক্রু। জরুরি দুর্ঘটনায় কি কি করা প্রয়োজন বলা হচ্ছিল সাউন্ড সিস্টেমে। আর ওই দুই কেবিন ক্রু অক্সিজেন মাস্ক, লাইফ ভেস্ট হাতে রিহার্সেল দিয়ে দেখাচ্ছিলেন কিভাবে কি করতে হবে। এতে বুঝতে বেশ সুবিধা হয় যাত্রীদের। সবাই বেশ মনোযোগ দিয়ে বুঝে নিচ্ছিলেন করণীয়।
মাইকে ঘোষণা এলো, আকাশ মেঘমুক্ত। সোয়া ৪ ঘণ্টায় সিঙ্গাপুর পৌঁছুবে প্লেন।
ব্যস, এবার যাত্রার পালা। চারজন কেবিন ক্রু দেখে নিলেন সবাই সিট বেল্ট বেধেঁছেন কিনা! মুহুর্তের মধ্যেই চলতে শুরু করলো প্লেন। আমার গত আকাশযাত্রার অভিজ্ঞতা বলছে, এ সিটগুলো তুলনামুলক চওড়া আর আরামদায়ক। সিটের মাথায় দেয়া হয়েছে রিমুভেবল কাভার, যা পরবর্তী যাত্রীর জন্য সিট রাখবে পরিষ্কার। আর বাড়তি হিসেবে প্রতি সিটে কুশনও রয়েছে একটি করে।
রোদঝলমলে আকাশে উড়লো রিজেন্ট। যখন সরল তলে চলা শুরু করলো, সিটবেল্ট খুললো যাত্রীরা। যাত্রা মাত্র সোয়া ৪ ঘণ্টার। এক ঘণ্টা পরেই হাসিমুখে খাবার সার্ভ শুরু করলো ক্রুরা। এর আগেও দেখেছি, বেশ ভোজন হয় রিজেন্টে।
লাঞ্চ হিসেবে দেয়া হয়েছে- ফ্রাইড রাইস, চয়েজ অনুযায়ী চিকেন বা বিফ, কাস্টার্ড, ফিরনি। ভেজিটেবলতো রয়েছেই। আরো রয়েছে বন রুটি আর বাটার। মিনারেল ওয়াটারের বোতল আর চয়েজ অনুযায়ী কোক বা স্প্রাইট।
একটু পরে চায়ের ট্রলি নিয়ে এলো ক্রুরা। তারা জিজ্ঞাসা করলেন, চা’তে চিনি হবে কি পরিমাণ! আবার চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেককেই দ্বিতীয়বারের মতো দেয়া হলো পানির বোতল আর কোল্ড ড্রিংকস। আহা! গত ভ্রমণে কত কষ্টই না পেয়েছিলাম তেষ্টায়।
খাওয়ার পর কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্রেসহ খাবারের খালি প্যাকেট আর বোতল নিয়ে গেলো ক্রুরা।
দেখতে দেখতে সাড়ে ৩ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলো। জানালার ফাঁক দিয়ে নিচের পাম গাছের বাগান বলছিল, নিশ্চয়ই মালয়েশিয়ার জোহরবারুর আকাশ সীমানায় আছি। ক্রু শাওন বললেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যার নির্দেশনা অনুযায়ী ‘কুইক একটিং ইনসেক্টি সাইড স্প্রে’ দেয়া হবে এয়ারক্রাফটের ভেতরে। যার কোন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।
তবে এটা বলেও সতর্ক করে দিলেন, যাদের কন্টাক্ট লেন্স রয়েছে তারা যেনো কিছুক্ষণের জন্য চোখ বন্ধ করে রাখেন। এছাড়াও যাদের শ্বাসজনিত সমস্যা রয়েছে তারা যেনো কিছু সময় নাকে হাত দিয়ে রাখেন। বোঝা গেলো কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের ব্যাপারে সত্যি বেশ সচেতন। স্প্রে দেয়া হলো প্লেনে।
এরই মধ্যে আবারো এসে ক্রু জানতে চাইলেন, চা বা কফি চলবে নাকি? এমনভাবে জানতে চাইলেন যে, এক কাপ চা না চেয়ে পারলাম না।
১৫ মিনিটের মধ্যেই ঘোষণা এলো, আধা ঘণ্টার মধ্যেই প্লেন রানওয়ে ছোবে। ক্রুরা এসে আবারো সবাইকে সহযোগিতা করলেন সিট বেল্ট বাঁধতে।
এরপর জোহরবারুর আকাশে ঘুরতে ঘুরতে সিঙ্গাপুরের আকাশ পৌছেই প্লেন ল্যান্ড করলো হালকা ঝাঁকুনি দিয়ে। ঘোষণা এলো, ‘সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি এয়ারপোর্টে স্বাগতম, এখন স্থানীয় সময় বিকাল ৬টা ১৫ মিনিট। বাইরের তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ’
ক্রুদের হাসি মাখা মুখের ‘ধন্যবাদ’ সঙ্গে নিয়ে বের হলাম রিজেন্ট এয়ারওয়েজ থেকে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৪