ঢাকা: একযোগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চাকরি ছাড়লেন ১০ প্রকৌশলী। এরা সবাই বিমানের প্রকৌশল বিভাগের চাকরি ছেড়ে কাতার এয়ারওয়েজে যোগ দিয়েছেন।
স্বল্প বেতন, পদোন্নতি না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে এসব প্রকৌশলী বিমানের মায়া ত্যাগ করে পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশি এয়ারলাইন্সে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে করে বিমানের প্রকৌশল শাখা ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সদ্য চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়া এসব প্রকৌশলীর সবাই বিমানের গুরুত্বপূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণ শাখার প্রকৌশলী। বেসিক লাইসেন্সধারী এসব প্রকৌশলীই মূলত রাষ্ট্রীয় পতাতাকাবাহী এয়ারলাইন্সের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর এর রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করতেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর ফলে বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ শাখা দুর্বল হয়ে গেল। কেননা একটি উড়োজাহাজে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে এরাই অতি দ্রুততার সঙ্গে কাজটি সম্পন্ন করতেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এসব প্রকৌশলী বিমানে যে বেতন পেতেন তার চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি বেতনে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। বিমান ছেড়ে যাওয়া অধিকাংশ প্রকৌশলীর বেতন ছিল সর্বসাকূল্যে ৩০ হাজার টাকা (ওভারটাইমসহ)। আর কাতার এয়ারওয়েজে এদের প্রত্যেকের বেতন তিন লাখ টাকা করে।
বিমানের প্রকৌশল শাখার এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বাংলানিউজককে বলেন, সঠিক সময়ে এসব প্রকৌশলীর বেতন ভাতা বৃদ্ধি ও পদোন্নতি হলে কেউই বিদেশি এয়ারলাইন্সে যেতেন না। কারণ যত টাকাই বেশি দেওয়া হোক না কেন বিমানের প্রতি প্রত্যেকেরই আলাদা একটি ভালোবাসা রয়েছে। এর আগেও বিমানের কোনো কোনো সিনিয়র প্রকৌশলী এ ধরনের সুযোগ পেয়েও শুধু বিমানের মায়ায় দেশ ত্যাগ করেননি। কিন্তু পরবর্তীতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এমনকি চাকরিচ্যুত হয়ে বিদায় নিয়েছেন।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, বিমানের বেতন বৃদ্ধি না হওয়া, সময়মতো পদোন্নতি না হওয়ার নজির নতুন নয়। যে কারণে এর আগে গত ১০ বছরে ৫০ থেকে ৬০ জন প্রকৌশলী বিভিন্ন বিদেশি এয়ারলাইন্সে চলে গিয়েছেন।
বিমানের এক প্রকৌশলী বলেন, যারা বিমান ছেড়ে চলে গেলেন তাদের প্রত্যেকের পেছনে সরকারের অনেক বিনিয়োগ করতে হয়েছে। সরকারি বিনিয়োগের ফলেই আজ সে একজন সনদধারী প্রকৌশলী। কিন্তু এদের ধরে না রাখার ব্যর্থতাও বিমানের।
বিমানের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ১০ প্রকৌশলী যাতে বিমান ছেড়ে যেতে না পারেন সেজন্য রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সের প্রকৌশল শাখা তাদের ছাড়পত্র দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এক পর্যায়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে সবাই তাদের পক্ষে রায় পান। পরবর্তীতে সবাই এক সঙ্গেই চাকরি ছেড়ে দোহা ভিত্তিক কাতার এয়ারে যোগ দেন।
বিমানের বক্তব্য
বিমানের প্রকৌশল ও সম্ভার বিভাগের পরিচালক আসাদুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বাংলানিউজক তিনি বলেন, এদের ধরে রাখার অনেক চেষ্টাই করেছি। এরা চলে যেতে পারেন জেনে অনেকেরই বেতন বাড়িয়েছি, পদোন্নতি দিয়েছি। তারপরও চলে গেলে কি করার রয়েছে। তবে আগামীতে বেতন-ভাতা আরো বাড়ানোর প্রস্তাব ও পদোন্নতির বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বিমান নতুন নীতিমালা পাস করেছে। এতে প্রকৌশলীদের বিদেশে যাওয়া বন্ধ হবে বলে আমার বিশ্বাস।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৬ নভেম্বর ১৮,২০১৪