ঢাকা: দিনটা শেষেই দেখা মিলবে নতুন বছরের নতুন সূর্যের। নতুন বছরে পদার্পণে সুখস্মৃতিগুলো সঙ্গে রাখলেও সবাই ভুলে যেতে চাইবেন দুঃসহ স্মৃতিগুলো।
গত হওয়ার শেষ দরোজায় পৌঁছা ২০১৪ সালের বিয়োজন খাতায় সবচেয়ে বেশি দুঃস্বাপ্নিক হয়ে থাকবে উড়োজাহাজের গল্প। একেবারে বছর অন্তেও আরেকটি দুর্ঘটনার গল্প লিখতে হলো উড়োজাহাজ নিয়ে।
মার্চে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের যাত্রীবাহী এমএইচ৩৭০ ফ্লাইট নিখোঁজ হওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বছরের উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার দুঃখজনক অধ্যায়। আর বছরের একেবারে শেষ লগ্নে এয়ার এশিয়ার একটি যাত্রীবাহী ফ্লাইট নিখোঁজ হওয়ার মধ্য দিয়ে বন্ধ হলো বছরের এ দুঃখজনক অধ্যায়ের। যদিও শেষ পর্যন্ত প্লেনটির ‘ধ্বংসাবশেষ’ ও যাত্রীদের মরদেহ পাওয়ার কথা জানায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য চলতি বছরের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার খবর তুলে ধরা হচ্ছে এই আয়োজনে।
এয়ার এশিয়া কিউজেড ৮৫০১: ইন্দোনেশিয়ার সুরাবায়া থেকে ১৬২ আরোহী নিয়ে সিঙ্গাপুরগামী এয়ার এশিয়ার উড়োজাহাজটি ২৮ ডিসেম্বর নিখোঁজ হয়। স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ২০ মিনিটে সুরাবায়া থেকে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে উড়াল দেয় প্লেনটি। এটি সকাল ৭টা ২৪ মিনিটের পর সংশ্লিষ্ট এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে। ৭ ক্রু ও ১৫৫ যাত্রী সহ মোট ১৬২ জন আরোহী ছিলেন। এদের মধ্যে ২ পাইলট, ৫ ক্রু ছাড়া ১৪৯ জন যাত্রীই ইন্দোনেশিয়ান। এখন পর্যন্ত উড়োজাহাজটির কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
এমএইচ ৩৭০: ৮ মার্চ মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে চীনের বেইজিং যাওয়ার পথে দক্ষিণ ভারত মহাসাগরে হঠাৎ রাডার থেকে হারিয়ে যায় মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের এমএইচ৩৭০ ফ্লাইটটি। এতে ১২ জন ক্রুসহ মোট ২৩৯ জন যাত্রী ছিলেন। দীর্ঘ দশ মাস পেরুলেও প্লেনটির কোনো হদিস এখনও পাওয়া যায়নি। এটি উড়োজাহাজ শিল্পখাতের ১৭তম বড় দুর্ঘটনা।
এমএইচ ১৭: এমএইচ৩৭০’র দুঃখ না ভুলতে আবারও মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সকে ভাসতে হয় শোকের সাগরে। ১৭ জুলাই নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টার্ডাম থেকে কুয়ালালামপুর যাওয়ার পথে ২৯৮ যাত্রী নিয়ে বিধ্বস্ত হয় এই এয়ারলাইন্সের এমএইচ১৭ ফ্লাইটটি। এ ঘটনায় প্লেনের সব যাত্রীই নিহত হন। বলা হয়, মাটি থেকে ছোঁড়া ‘বিইউকে’ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে উড়োজাহাজটিকে ‘ভূপাতিত’ করা হয়।
এয়ার আলজেরিয়া: এমএইচ১৭ এর দুর্ঘটনার এক সপ্তাহ পর অর্থাৎ ২৪ জুলাই এয়ার আলজেরিয়ার একটি ফ্লাইট উড্ডয়নের এক ঘণ্টার মাথায় রাডার থেকে হারিয়ে যায়। পরে মালির উত্তরাঞ্চলে এক মরুভূমিতে প্লেনটির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। ১১৬ আরোহী নিয়ে বুরকিনা ফাসো থেকে আলজেরিয়া যাওয়ার পথে প্লেনটি বিধ্বস্ত হয়ে সবাই নিহত হন।
ট্রান্সএশিয়ান এয়ারওয়েজ: হ্যারিকেনের হাত থেকে রক্ষায় জরুরি অবতরণ করতে গিয়ে একটি বাড়ির ওপর ধসে পড়ে ট্রান্সএশিয়ান এয়ারওয়েজের একটি উড়োজাহাজ। ২৩ জুলাইয়ের ওই ঘটনায় উড়োজাহাজটির ৫৮ যাত্রীর ৪৭ জনই নিহত হন।
সেপাহান এয়ারলাইন্স: ইরানের অভ্যন্তরীন তেহরান-তাবাস রুটে চলাচলকারী সেপাহান এয়ারলাইন্সের যাত্রীবাহী একটি প্লেন উড্ডয়নের পর ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। পরে প্লেনটি একটি আবাসিক ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হলে এর ৪৮ যাত্রীর ৩৯ জনই নিহত হন। ২০১৪ সালের ১০ আগস্ট দুর্ঘটনাটি ঘটে।
এছাড়া, বছরব্যাপী বিভিন্ন এয়ারফোর্স ও ব্যক্তিগত প্লেন দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকজন নিহত হন।
প্লেন ভ্রমণ ও এ সংক্রান্ত নিরাপত্তার এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭২ সালে প্লেন দুর্ঘটনায় এ যাবতকালের সর্বাধিক দুই হাজার চারশ’ ২৯ জন মানুষ নিহত হন। ২০১৪ সালে এ সংখ্যা কমে এক হাজারের নিচে (৭৬১) দাঁড়িয়েছে।
এক চিত্রে দেখা যায়, ১৯৮৫ সালে প্লেন দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় দুই হাজার তিনশ’ ৩১ জনে। এরপর ধীরে ধীরে বিশ্বব্যাপী প্লেন দুর্ঘটনা ও নিহতের সংখ্যা কমতে থাকে।
এয়ারলাইন্স ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে ‘নিরাপদ’ বছরটি ছিল ১৯৪৫ সাল। ওই বছর প্লেন দুর্ঘটনায় ২৬৫ জন নিহত হন।
১৯৪৯ ও ১৯৭২ সালে সবচেয়ে বেশি ৫৫টি করে প্লেন দুর্ঘটনা ঘটে। আর ১৯৪৬ সালের পর ২০১২ সালে সবচেয়ে কম ১১টি প্লেন দুর্ঘটনা ঘটে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৩ সালে প্রতি ১০ লাখে ০.২৪টি প্লেন দুর্ঘটনা ঘটেছে, অর্থাৎ প্রতি দশ লাখে এ সংখ্যা একটিরও কম।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৪