ঢাকা: অবশেষে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের লোকসানি ঢাকা-রোম-ঢাকা রুটের ফ্লাইট। আগামী ৬ এপ্রিল শেষবারের মতো এ রুটে উড়বে বিমানের উড়োজাহাজ।
বাংলানিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা-রোম রুটে প্রতি ফ্লাইটে বিমানের লোকসান ছিল এক কোটি টাকা। ফ্লাইট প্রতি কেবিন ফ্যাক্টর (পুরো উড়োজাহাজের মোট আসনের শতকরা হিসেব) ছিল সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ। বিমান চলাচল ব্যবসায় কেবিন ফ্যাক্টর ৭৫ শতাংশ যাত্রী না হলে ওই ফ্লাইটে কোনোভাবেই লাভ করা সম্ভব নয়। অথচ রোম রুটে দিনের পর দিন বিমানের কেবিন ফ্যাক্টর অর্ধেকও ছিল না।
নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাইল হেউড বিমানে যোগ দেওয়ার পরেই লোকসানি রুটগুলো বন্ধের উদ্যোগ নেন। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা-রোম ফ্লাইট বন্ধ করা হচ্ছে।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-রোম রুটে সপ্তাহে দু’টি ফ্লাইট চালিয়ে থাকে বিমান। ৬ এপ্রিলের পর ঢাকা-রোমের ফ্লাইট দু’টিকে ঢাকা-জেদ্দা রুটে নিয়ে যাওয়া হবে। এটি বিমানের একটি লাভজনক রুট। এ দু’টি ফ্লাইট যুক্ত হলে জেদ্দা রুটের ফ্লাইট সংখ্যা ৫টি থেকে ৭টিতে উন্নীত হবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা-রোম ফ্লাইট কখনোই লাভজনক ছিল না। অথচ বছরের পর বছর ধরে এ রুটে ফ্লাইট চলেছে। ইতালি প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষার কথা বলে বিমানের সুবিধাভোগী এক শ্রেণীর কর্মকর্তারা নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনার পক্ষে কাজ করে আসছিলেন।
২০১৩ সালের মার্চে কেভিন স্টিল বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগদানের পর মাঝে কিছুদিন বন্ধ থাকা রোম ফ্লাইট এবং একই সঙ্গে ৮ বছর ধরে বন্ধ থাকা ফ্রাঙ্কফুর্ট রুটও চালু করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। তখন বিমানের পরিচালনা পর্ষদ থেকে লোকসানি এ দু’টি রুট চালুর বিরোধিতা করা হয়েছিল।
কিন্তু কেভিন স্টিল কারো মতামতই আমলে নেননি। ঢাকা-রোম ও ঢাকা-ফ্রাঙ্কফুর্ট চালুর পাশাপাশি ঢাকা-মিলান রুটও চালু করেছিলেন তিনি।
ঢাক-ঢোল পিটিয়ে প্রচারণা চালিয়ে এসব রুট চালুর পরেও যাত্রী ছিল না বেশিরভাগ ফ্লাইটে। বিশেষ করে প্রতি ফ্লাইটে ঢাকা-ফ্রাঙ্কফুর্ট রুটে ২৫/৩০ জনের বেশি যাত্রী মিলতো না। ঢাকা-ফ্রাঙ্কফুর্ট রুটের সর্বশেষ ফ্লাইটেও যাত্রী ছিলেন মাত্র ২৯ জন। বিমানের একজন কর্মকর্তা বলেন, ৪১৯ আসনের বিশাল বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজে যদি ২৯ জন যাত্রী নিয়ে চলাচল করে তাহলে কিভাবে লাভ করা সম্ভব?
চলতি বছরের জানুয়ারিতে এয়ারলাইন্সের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাইল হেউড যোগদানের পর তিনি বিমানের পরিচালনা পর্ষদকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, এ ধরনের লোকসানি রুট চালু রেখে বিমানকে কখনোই লাভজনক করা সম্ভব নয়। তিনি অনতিবিলম্বে ঢাকা-রোম রুট বন্ধের পক্ষে মতামত দেন। এরপর বিষয়টি বিমানের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম পরিচালনা পর্ষদে তোলা হয়। পর্ষদ লাভ-লোকসানের সব বিস্তারিত তথ্য নিয়ে পুনরায় এ প্রস্তাব পর্ষদ সভায় তোলার কথা বলে। এরপর পর্ষদ এ রুট বন্ধের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়।
ঢাকা-রোম রুট বন্ধের বিরুদ্ধে তৎপরতা
বিষয়টি জানাজানির পরেই শুরু হয় বিমানের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ইতালি প্রবাসীদের তৎপরতা। প্রবাসীদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে এ রুট বন্ধের তীব্র বিরোধিতা করেন। এরপর তারা বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ও পরবর্তীতে বিমানের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) জামাল উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে দেখা করেন। বিমানের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাইল হেউড প্রতিনিধি দলকে সঙ্গে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় দিয়ে বিষয়টি বোঝাতে সক্ষম হন।
এর কিছুদিন পর ইতালি প্রবাসী আরেকটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী ও বিমানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। এবারও প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এক ঘণ্টার বেশি সভা করেন বিমানের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এ সময় বিমানের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বিমান একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি। বিমানের লোকসান হলে সে অর্থ সরকার দেবে না। তাছাড়া জ্বালানি তেল কেনা বাবদ বিমানকে অনেক টাকা ট্যাক্স ও ভ্যাট দিতে হয়। প্রতিনিধি দল বিষয়টি বোঝার পর এর বিরোধিতা থেকে সরে আসেন। অন্যদিকে বিমানও তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে।
এ বিষয়ে বিমানের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিমানকে লোকসান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে লোকসানি রুটগুলো চালু রাখার কোনো অবকাশ নেই। তাই বিমান এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৫