ঢাকা: গন্তব্য যশোর। অপেক্ষা করছিলাম হযরত শাহজালাল (র.) বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে।
বসেছিলাম বহির্গমন লাউঞ্জের ঠিক দক্ষিণ দিকের উত্তরমুখী চেয়ারে। এর দুই সারি পেছনেই কয়েক ফুট ফাঁকা, তার পরেই টয়লেট। কাঁধ ফিরিয়ে তাকাতেই নজরে এলো, দরজায় ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে ৩টি মপার (mopper)। টয়লেটের বাইরে থেকেই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
মনের মধ্য বিস্ময় তৈরি হয়, এমন স্থানে টয়লেট পরিষ্কারের কাজে ব্যবহৃত এসব জিনিস কি করে থাকে!
হাতে সময় থাকায় পা বাড়াই টয়লেটের দিকে। দরজা ডিঙ্গিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই হাতের বামে কয়েকটি বেসিন। বেসিনের উপর যথারীতি লিকুইড হ্যান্ড ওয়াশের জার রয়েছে। কিন্তু কোনটিতেই লিকুইড নেই। বেসিনে গড়াগড়ি খাচ্ছে কসকো সাবানের কিয়দংশ।
ভেজা হাতে সাবান নেওয়া এবং রাখার সময় পানি গিয়ে মিশেছে তাতে। আর বিন্দু বিন্দু পানি জমে সাবানগুলোকে একাকার করে তুলেছে। হ্যান্ড ওয়াশের পরিবর্তে কসকো সাবান নির্বাচনকারীকে বেশ বুদ্ধিমান বলে মনে হলো। কসকো না রেখে যদি লাইফবয় রাখতো, তাহলে কি হতো!
টয়লেটে থাকতেই ইচ্ছা জাগে ডিপারচার লাউঞ্জটি দেখার। লাউঞ্জটি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা। পূর্বদিক দিয়ে প্রবেশ করে পশ্চিম দরজা দিয়ে বেরিয়ে প্লেন ধরতে হয়। পূর্বদিকে প্রবেশ দ্বারের পাশে একটি ফাস্টফুডের দোকান। আর পুরোটাতে চেয়ার পাতানো রয়েছে মাঝে মাঝে গ্যাপ দিয়ে।
ভেতরের চেয়ার দেখে যে কারো আশি দশকের গ্রাম্য বিয়ের কথা মনে পড়ে যাবে। যখন ডেকোরেটর খুব একটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। সেই সময়ে বিয়ে বাড়িতে মেহমানদের বসার জন্য পুরো গ্রাম থেকে সংগ্রহ করে আনা হতো হরেক রকম চেয়ার। যার একটির সঙ্গে অন্যটির না সাইজে, না রঙে, না থাকত ডিজাইনে কোন মিল।
ডিপারচার লাউঞ্জের অবস্থাও ঠিক তেমনি। আলিশান সোফা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে মানধাতা আমলের সোফাও। আবার চেয়ারও রয়েছে কয়েক প্রকার। কোরিয়া থেকে আগত বিআরটিসি বাসের সেই প্লাস্টিকের চেয়ারের মতো চেয়ার যেমন রয়েছে, তেমনি গদিমোড়ানো সৌখিন চেয়ারও স্থান পেয়েছে।
টয়লেটের পাশেই রয়েছে সোফার কয়েকটি ডাবল চেয়ার। আর সেই সোফার উপর এলোমেলো ভাবে ছড়ানো বেশ কয়েকটি বিছানা। পূর্ব দিকের ফাস্ট ফুডের দোকানের পাশে নজর দিতে আবার বিস্ময়। সেখানেও দেওয়ালের সঙ্গে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে কয়েকটি মপার। একজন ক্লিনার এলেন, সেখান থেকে নিয়ে ফ্লোর মুছে দিয়ে আবার রেখে গেলেন।
একেবারে উত্তর দিকে রয়েছে দু’টি আলিশান সোফা। এখানে অবশ্য সোফা সেট বললেই সবচেয়ে যুতসই হয়। কারণ এখানে টেবিল সমেত সোফা পাতা রয়েছে। এখানে মেঝেটিতে রয়েছে ফরমিকা বসানো। কয়েকটি স্থানের ফরমিকা উঠে গিয়ে ফোকলা দাঁতের মতো জিহ্বা দেখা যাচ্ছে।
এর পাশেই দেওয়ালের সঙ্গে দাঁড়িয়ে যাত্রীদের শীতল বাতাস দিচ্ছে আলমিরার মতো একটি এয়ারকুলার। সেই এয়ারকুলারের চিপার কয়েকটি কার্টন ভাজ করে রাখা হয়েছে। যা অনেক দূর থেকে স্পষ্ট দৃশ্যমান।
চেয়ার যেমন বাহুল্য টাইপের, তেমনি এয়ারপোর্ট অফিসারদের ব্যবহৃত টেবিলগুলোর মধ্যে কোন সামঞ্জস্য নেই। একেকটি একেক রঙের। লাউঞ্জ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে শোভা পাচ্ছে ৩টি টিকিট চেকার টেবিল। এখানেও একদিকে যেমন কাঁচের সৌখিন টেবিল রয়েছে, আবার পাশেই দাঁত কেলিয়ে হাসছে মানধাতা আমলের কাঠের টেবিলও।
কাঠের টেবিলটা দেখতে খানিকটা ডায়াসের মতো। রঙ উঠে গিয়ে একেবারেই বেমানান লাগছে। একটি বেসরকারি এয়ারলাইনসের কর্মকর্তা জানালেন, টেবিল হচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের।
যেখানে সেখানে মপার রাখার বিষয়ে চিফ ক্লিনিং সুপারভাইজর আরিফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এগুলো এক কোণে রাখতে বলা হয়- কিন্তু তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে। অন্যদিকে ক্লিনার রহিমা বেগম জানান, রাখার জায়গা নেই তাই বাধ্য হয়ে চিপায় চাপায় রাখতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৬
এসআই/জেডএম