ইউএস বাংলার ফ্লাইট ঘুরে: খুব বেশি দিন হয়নি দেশের আকাশে পাখা মেলেছে ইউএস বাংলার এয়ারক্রাফটগুলো। অল্প সময়েই দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে দেশীয় এ এয়ারলাইন্সটি।
অল্প সময়ে এ সাফল্যের মূলমন্ত্র হিসেবে যাত্রীদের প্রতি আন্তরিক ব্যবহার ও শিডিউল মিস না করে ঠিক সময়ে প্লেন ছাড়ার সামর্থ্যের কথাই উল্লেখ করলেন ইউএস বাংলার শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ারপোর্ট সার্ভিস ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) উত্তরবঙ্গের পথে যাত্রা। অফিসের অ্যাসাইনমেন্ট। প্রাথমিক গন্তব্য আকাশপথে সৈয়দপুর, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের সকাল নয়টা ৪৫ মিনিটের ফ্লাইট। যাত্রা শুরু হয় যথা সময়েই।
এর আগে অভ্যন্তরীণ লাউঞ্জের ফ্রন্ট ডেস্কেই দেখা মেলে এয়ারপোর্ট সার্ভিস ম্যানেজার মাহবুবুর রহমানের। যাত্রীদের স্বাগত জানাচ্ছিলেন তিনি। সেখানেই কথা হলো এয়ারলাইন্স জগতের পোড়খাওয়া এ কর্মকর্তার সঙ্গে। তিন দশকেরও বেশি সময়ের পেশাগত অভিজ্ঞতা তার।
জিজ্ঞেস করলাম ‘বাজার কেমন’। উত্তর দিলেন, ‘হাউজফুল’। হাউজফুলের মানে জিজ্ঞেস করতেই জানালেন, সৈয়দপুরে যে ফ্লাইটে যাচ্ছি সেই ড্যাশ-৮ কিউ ৪০০ প্লেনটির ৭৮টি আসনের সবগুলোই পরিপূর্ণ। যাত্রী চাহিদা দিনদিন বাড়ছেই। ২০১৪ সালের অক্টোবরে যাত্রা শুরুর সময়ে সপ্তাহে মাত্র তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করলেও এখন তাদের ফ্লাইট প্রতিদিনই, তাও দু’টি করে। শতকরা ৮০ শতাংশ সিট থাকে যাত্রী বোঝাই।
এছাড়া উৎসব ও সরকারি বিভিন্ন দিবসের কারণে লম্বা ছুটির ফাঁদ তৈরি হলে প্রয়োজনে সৈয়দপুর রুটেই দিনে চালানো হয় চারটি ফ্লাইট।
এতো যাত্রী হওয়ার কারণ কি জানতে চাইলে তিনি জানান, সৈয়দপুর বিমানবন্দরের বাণিজ্যিক গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ার কথা।
পাশাপাশি যাত্রীদের প্রতি আন্তরিক সেবাপরায়ণতা ও সঠিক সময়ে ফ্লাইট ছাড়ার বিষয়টি উল্লেখ করলেন তিনি।
তার কথার সত্যতাও মিললো। লাউঞ্জ থেকে প্লেনের দরজা পর্যন্ত পৌঁছাতে পেলাম তাদের কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার স্পর্শ। আর সময়ানুবর্তিতার কথা না বললেই নয়। প্লেন ছাড়ার সময় নয়টা ৪৫ মিনিট হলেও প্লেনের দরজা বন্ধ হলো নয়টা ৪০ মিনিটেই। এরপর কাঁটায় কাঁটায় নয়টা ৪৫ মিনিটে চাকা গড়াতে শুরু করলো। প্লেনের প্রতিটি সিটই ছিলো যাত্রী বোঝাই। এয়ার স্টুর্য়াডের কাছে শুনলাম প্লেনের মোট ৭৮টি সিটই ‘ফুল’।
ঢাকা থেকে সৈয়দপুর আর কতটুকুই বা পথ। কিন্তু এই ৪৫ মিনিটের স্বল্পস্থায়ী যাত্রাপথেও দফায় দফায় যাত্রীদের প্রয়োজনে সাড়া দিয়ে যাচ্ছিলেন এয়ার হোস্টেস ও স্টুয়ার্ডরা। সঙ্গে নাস্তা ও পানি পরিবেশন তো রয়েছেই। যাত্রীদের সবার সিটে গিয়ে সিট বেল্ট বাঁধা আছে কি না তা চেক করার পাশাপাশি বয়স্ক লোক কিংবা অনভিজ্ঞতার কারণে যারা সিটবেল্ট বাঁধতে পারেননি আন্তরিকতার সঙ্গে হাসিমুখেই তাদের সিট বেল্ট বেঁধে দিচ্ছিলেন তারা।
সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েই যাত্রীসেবার পাট চুকোয়নি এয়ারলাইন্সটি। সৈয়দপুর মূলত নীলফামারী জেলার একটি উপজেলা। এই বিমানবন্দর ব্যবহারকারী অনেক যাত্রীই রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁওসহ পাশ্ববর্তী জেলার। এসব জেলাগামী যাত্রীদের জন্য রয়েছে ইউএস বাংলার নিজস্ব এয়ারকন্ডিশন্ড বাস। সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে রংপুর, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুরে যেতে ইচ্ছুক ইউএস বাংলার যাত্রীরা এসব বাসে করে কম খরচেই সহজে পৌঁছে যেতে পারেন নিজ নিজ গন্তব্যে।
যাত্রা শুরুর আগে কথা হচ্ছিলো সার্ভিস ম্যানেজার মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে। সে সময় তিনি গর্বভরে বলেছিলেন, অভ্যন্তরীণ রুটে যেখানে ফ্লাইট ক্যানসেল নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা, সেখানে ইউএস বাংলার ফ্লাইট ক্যানসেলের কোনো রেকর্ড নেই। প্লেনের ত্রুটির কারণে যাত্রা বিলম্বিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা গেলে প্রয়োজনে চাটার্ড প্লেনে যাত্রীদের সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো নিশ্চিত করে ইউএস বাংলা।
‘ইউএস বাংলা কখনও টাইমিং মিস করে না’ এয়ারলাইন্সটির সাফল্যের মূল মন্ত্র হিসেবে এটাকেই উল্লেখ করলেন তিনিও।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৬
আরআই/এএ
** ফাঁকা হচ্ছে ঢাকা, চাপ আকাশপথেও