ঢাকা: ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে লাটে উঠিয়েছেন ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী। শেয়ার বাজার থেকে তোলা ৪শ’কোটি টাকারও হিসাব নেই।
সবকিছুই চূড়ান্ত পর্যায়ে। সরকারের দেনা-পাওনা না মিটিয়ে, বড় ধরনের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আর পুঁজিবাজারের অর্থ তুলে নিয়ে বহাল তবিয়তেই আছেন ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের অন্যতম সত্ত্বাধিকারী তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী। শুধু তা-ই নয়, লেবেল পাল্টে নতুন করে আবারও একই ধরনের ব্যবসায় নামছেন তিনি।
সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন, কি করে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি, বাংলাদেশ এই ব্যক্তিটিকে আবারও এয়ারলাইন্সের অনুমোদন দিচ্ছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সরকারের একটি মিত্র দলের খণ্ডিত অংশের সংসদ সদস্য এই কোম্পানির সামনে থাকছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হয়ে। আর নামটি তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরীর সংক্ষেপ –টিএসি হলেও তিনি থাকছেন উপদেষ্টা হয়ে।
সংশ্লিষ্টরা বিরক্ত। তারা বলছেন, নতুন বোতলে পুরনো মদ, পাবলিক খাবে না।
সরকারের মিত্র দলের ওই এমপিকেই বড় ভরসার স্থল হিসেবে পাচ্ছেন তাসবিরুল। তাতে ক্ষতির মুখে পড়ছে সরকার নিজেই।
কেউ কেউ বলছেন, ইউনাইটেড তার ছারপোকা আর তেলাপোকার ইমেজ থেকে বের হতে পারেনি। একই ব্যবস্থাপনা কিংবা মালিকানায় নতুন কিছু হলে তার সার্ভিসও একই রকম হবে।
এ বছরের গোড়ার দিকে ৩ ফেব্রুয়ারি বিনা নোটিশে সার্ভিস বন্ধ করে দেয় ইউনাইটেড এয়ার।
তাতে সম্ভাব্য যাত্রীরা হাফ ছেড়ে বাঁচলেও আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটের কয়েক হাজার যাত্রী বিপাকে পড়েন। অগ্রিম টিকিট কেটে রাখা এই যাত্রীরা প্রতিদিন ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও সিলেটসহ বিভিন্ন বিমানবন্দরে গিয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হন।
বন্ধ করার বিষয়টি নিজেদের ওয়েবসাইটে দেওয়ারও প্রয়োজন বোধ করেনি এ প্রতিষ্ঠানটি। অনেকেই তাদের এ আচরণকে তখন ‘দায়িত্বজ্ঞানহীনতার’ পরিচয় বলে মত দেন।
মিডিয়ায় খবর ছিল- পরিচালকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও অর্থ সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠানটির ১১টি এয়ারক্র্যাফটই গ্রাউন্ডেড রয়েছে। মূল অফিস ছাড়াও বেশির ভাগ শাখা অফিস বন্ধ। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
এ অবস্থায় দুশ্চিন্তায় পড়ে যান সংস্থাটির শেয়ার ক্রয়কারী হাজার হাজার ব্যক্তি। বিপাকে পড়ে ঋণ দেওয়া দুটি ব্যাংকও। সে সময় খবর বের হয় আইপিও এবং রাইট শেয়ার বাবদ দু’দফায় পুঁজিবাজার থেকে ৪১৫ কোটি টাকা তুলে নেয় কোম্পানিটি।
সেই থেকে চুপ থাকলেও হঠাৎ করে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে খবর বের হলো- পূঁজিবাজার থেকে আরও ৬শ’ ২৪ কোটি টাকা তুলে নিচ্ছে ইউনাইটেড এয়ার’। তখনই জানা যায় আবার নড়েচড়ে বসছেন তাসবিরুল।
অবশ্য ততদিনে বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের বোনাস না দেওয়ায় কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পড়ে। আস্থাহীনতায় শেয়ারবাজারে এর শেয়ারের ফেসভ্যালু ১০ টাকা থেকে কমে ৪-৫ টাকায় নেমে যায়। শেয়ার ভুগতে থাকে ক্রেতা সংকটে। এতে বিনিয়োগকারীরা এ কোম্পানিতে বিনিয়োগের অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়েই শঙ্কায় পড়েন।
তাদের সেই শঙ্কাকে বাস্তবে রূপ দিয়ে ইউনাইটেড তার নামটি মুছে এবার ট্যাক এয়ার নামে বাজারে আসছে।
সূত্র জানায়, একটি পাকিস্তানি কোম্পানিসহ ছয়টি বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে টাকা সংগ্রহের কাজ করছেন ইউনাইটেড এয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী।
এমডি তাসবিরুল আগেই বাংলানিউজকে বলেছিলেন, অর্থ সংকটের কারণে সব ফ্লাইট ও কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। টাকা সংগ্রহ হলে দ্রুত কার্যক্রম শুরু করা যাবে।
প্রশ্ন উঠেছে, আগেই নানাভাবে দুর্নাম কুড়ানো, সরকারের কয়েকশ কোটি টাকা পাওনা, আর শেয়ারবাজারের লগ্নিকারীদের কয়েক শ’ কোটি টাকা অনিশ্চয়তায় রেখে কি ব্যবসাই করতে পারবেন এই তাসবিরুল।
অনেকে বলছেন, যারা শুরুটাই একটি অন্যায় পথে তার ভবিষ্যত কতটা ভালো হবে তা প্রশ্নবিদ্ধই থেকে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরীর কাছে তার মোবাইল ফোনে চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। পরে দায়িত্বশীল সূত্র জানায় তিনি বিদেশে রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৬
এমএমকে/এএ