এমডি আর চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে দিনের পর দিন ধরনা দিয়েও নিজের দুর্দশার কথা তুলে ধরার সুযোগ পাননি আলী আশরাফ। প্রতীকার পাননি পর্ষদ সদস্যদের কাছে চিঠি দিয়েও।
অথচ দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর ধরে আকাশে উড়ছেন আশরাফ। বিমানের অন্যতম সফল পাইলট ধরা হয় তাকে। এটিপি থেকে বোয়িং ট্রিপল সেভেন-সব ধরনের প্লেনই তার হাতের তালুর মতোই চেনা। কোনো দুর্ঘটনাও নেই তার ১৯ হাজার ঘণ্টা ফ্লায়িং রেকর্ডে। ক্যাপ্টেন আলী আশরাফ তাই বিমানজুড়েই শ্রদ্ধার এক নাম।
প্রবল ঝড়ের সঙ্গে লড়ে ডিসি-১০ নিয়ে আটলান্টিক পাড়ি দেয়ার মতো দুঃসাহসিক সফলতাও আছে তার। পাইলটদের সংগঠন বাপার প্রেসিডেন্টও ছিলেন তিনি। তাই ৫৭ বছর বয়সে চাকরি শেষ হবার পরও বিমানের স্বার্থেই তাকে আবার ডেকে নিয়ে দেওয়া হয়েছিলো চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ। তারপর আরো ২৭০ ঘণ্টা আকাশে উড়েছেন তিনি।
সব কিছুই ঠিকঠাকই চলছিলো। হঠাৎ একদিন বাসায় পুলিশ গিয়ে জানালো, তার নামে ওয়ারেন্ট আছে। সিএমএম কোর্টে তার বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনারের মামলা করেছে খোদ বিমান।
টানা ৬ মাস বেতন-ভাতা বাকি রেখে উল্টো চেক ডিজঅনারের মামলা করার কারণ জানতে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরেই দৌড়ঝাঁপ শুরু হয় ক্যাপ্টেন আশরাফের। কিন্তু কোথাও প্রতীকার না পেয়ে সিদ্ধান্ত নেন, নিজেও মামলা করবেন আদালতে।
নিজের করুণ কাহিনী তুলে ধরে বাংলানিউজকে আলী আশরাফ বলেন, এপিটি, এফ-২৮, এয়ারবাস, ডিসি-১০, বোয়িং ৭৭৭ কি না চালিয়েছি? সরকারি বয়স অনুযায়ী ৫৭ বছর চাকরি করার পর পাইলট ঘাটতি থাকায় বিমানই ডেকে নিয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয় ৭৭৭ চালানোর জন্য। ওই নিয়োগের শর্ত হিসেবে নিজের খরচেই সিঙ্গাপুর গিয়ে সিমুলেটর ট্রেনিং পাস করে এসে ডিউটি করতে থাকি। ২৭০ ঘণ্টা টানা কৃতিত্বের সঙ্গে ফ্লাইও করলাম। তারপর যখন ছয় মাসের মাথায় নিয়মানুযায়ী আবশ্যক রিকারেন্ট সিমুলেটর ট্রেনিং করতে গেলাম- তখন থেকেই বিমান আমার সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ শুরু করলো।
আলী আশরাফ বলেন, আমাকে নিজের টাকায় ট্রেনিং করতে বলেন ইনসট্রাক্টর আমিনুল ইসলাম- যার বাবা ছিলেন কুড়িগ্রামের শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান। তাকে মদদ দিলেন সোনা চোরাচালানী হিসেবে চিহ্নিত জামায়াত-বিএনপি সমর্থিত পাইলটরা।
আলী আশরাফের বক্তব্য, চাকরির শর্ত অনুযায়ী নিজের টাকায় সিঙ্গাপুরে গিয়ে সিমুলেটর(বোয়িং ৭৭৭ চালানোর জন্য বাধ্যতামুলক ট্রেনিং) ট্রেনিং করে আসতে চুক্তির শর্ত অনুযায়ীই বিমানের টাকা নেন তিনি। বিনিময়ে বিমান তার কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকার ব্ল্যাঙ্ক চেক লিখিয়ে নেয়। কিন্তু তিনি ইনিশিয়াল সিমুলেটরে ফেল করলে বা বছর শেষ হওয়ার আগে চাকরি ছেড়ে দিলেই কেবল বিমান কর্তৃপক্ষের ওই চেক ব্যাংকে জমা দেওয়ার কথা। কিন্তু কোনো শর্ত ভঙ্গ না হলেও বিমান ঠিকই চোখ পাল্টে বিপদে ফেলে তাকে।
আলী আশরাফ বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই ব্যাংকে চেক জমা দিয়ে বড় ধরনের অন্যায় করেছে বিমান। আমার বিরুদ্ধে বিমানের পক্ষে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা করেছেন সহকারী ব্যবস্থাপক মোস্তফা মিয়ানদাদ মেহেদী। জারি হয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা। সেই মামলায় জামিন নেওয়ার পরও প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হচ্ছে বিমানের পক্ষ থেকে। এরই মধ্যে ১৬ লাখ টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে বেতন থেকে। তাই বেতন দেয়নি ৬ মাস।
এ প্রসঙ্গে নাম না প্রকাশের শর্তে বিমানের একজন পরিচালক বাংলানিউজকে বলেন, বাপার বর্তমান নেতারা চান না আলী আশরাফ খানের মতো টপ মোস্ট সিনিয়র কোনো পাইলট বিমানে চুক্তিভিত্তিক চাকরি করুক। তিনি বাপার সভাপতি থাকাকালে ২০১০ সালে বিএনপি- জামায়াত সমর্থিত পাইলটরা ধর্মঘট ডেকে বিমান অচল করে দিয়েছিলো। তখন ছিল হজের মওসুম। হজকে জিম্মি রেখে যারা পাইলট ধর্মঘটে অংশ নেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন আলী আশরাফ খান। বিষয়টি তখন প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত গড়ায় তখন। ওই গ্রুপটিই এখন প্রতিশোধ নিচ্ছে।
বিমানের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল মো. ইনামুল বারী বলেন, মাস তিনেক আগে আলী আশরাফ খান আমার কাছে এসেছিলেন। বেতন ভাতাদি নিয়ে কি একটা ঝামেলা হয়েছিল। এটা এতোদিনে মিটমাট হয়ে যাওয়ার কথা। হয়নি কেন তা খতিয়ে দেখতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০২ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৭
জেডএম/