আকাশ পথে দীর্ঘ ভ্রমণে এমনিতেই ক্লান্ত তার মা। তারওপর বসারও কোন ব্যবস্থা নেই।
আধাঘণ্টা বাদে বাদে অল্প স্বল্প মালামাল নিয়ে আসছে একেকটি কন্টেইনার। প্রথমে জমজমের পানির কার্টুন এলেও পুরোপুরি স্বস্তি নেই। অন্য লাগেজগুলোর যে হদিস মেলেনি।
শেষতক লাগেজ বুঝে পেতে মা-ছেলেকে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে হলো কম করে হলেও আড়াই ঘণ্টা! ততক্ষণে ঘড়ির কাঁটায় বিকেল ৫টা।
ঘটনাটি শুক্রবারের (১২ মে)। বিমানবন্দরের এক্সিট পয়েন্ট দিয়ে মাকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কিশোর জারিফ বললো, লাগেজ কখন বেল্টে আসবে তার কোন ঠিক-ঠিকানা নেই। কর্মচারীরা গালগপ্প করে সময় ক্ষেপণ করেন।
চোখে-মুখে হতাশা জারিফের। লাগেজ নিয়ে এমন বিড়ম্বনা কেবল জারিফ বা তার মায়ের নয়। লাগেজ ডেলিভারি নিয়ে একই রকম হাপিত্যেশ অন্যান্য যাত্রীদেরও।
লাগেজ ব্যবস্থাপনায় এমন বেহাল দশার কোপ সবচেয়ে বেশী পড়ছে বয়স্ক আর রোগীদের ওপর। দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে ফিরে আসা অনেককেই লাগেজের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখা গেছে।
রোগী সঙ্গে নিয়ে লাগেজের অপেক্ষায় থাকা এক যাত্রীর তাই আক্ষেপ, এখানে তো ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে সুস্থ মানুষই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। রোগীর অবস্থা তো আরো খারাপ।
আন্তর্জাতিক খেতাবধারী এ বিমানবন্দরের লাগেজ ব্যবস্থা নিয়ে যারপরনাই প্রশ্ন তোলেন কুমিল্লার জসিম উদ্দিনও। সৌদি আরবের মদিনায় কর্মরত এ শ্রমিক বাংলানিউজকে বলেন, মদিনায় একটি ফ্লাইট অবতরণের ১০ মিনিটের মধ্যে ডেলিভারি শুরু হয়ে যায়।
অথচ আমাদের এ বিমানবন্দরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাগেজের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
লাগেজের অপক্ষায় যারা থাকেন তাদের জানানো হয় না কোথায় আছে এটি, জসিমের সঙ্গে পাশ থেকে তীর্যক স্বরে বলছিলেন একই ফ্লাইটে ঢাকায় আসা ওয়াহিদুল ইসলামও। তার বাড়ি ব্রাক্ষণবাড়িয়ায়।
তিনি বলেন, বেল্টের সামনে দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। দিনের পর দিন এ অবস্থা চলছে। তবুও ভোগান্তির প্রতীকার হচ্ছে না।
‘এ বিমানবন্দরে যাত্রী সেবার মানের কোন উন্নয়ন হয়নি। দুর্ভোগই তাদের নিয়তি’ বাংলানিউজের কাছে হয়রানির শিকার যাত্রীদের মতোই বললেন বিমানবন্দরে একটি মোবাইল কোম্পানির এক সিম বিক্রেতা।
তার ভাষ্যে, যারা ভাগ্যবান কেবল তারাই দ্রুত লাগেজ পেয়ে যান। অন্যদের হয়রানির শিকার হতেই হবে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণেই এমন নৈরাজ্য চলছে। প্রায় প্রতিটি ফ্লাইটেই লাগেজ ভোগান্তির চিত্র অভিন্ন।
লাগেজ ভোগান্তির চিত্র পর্যবেক্ষণে আরো দেখা গেলো, বিমানবন্দরে লাগেজের অপেক্ষায় বাবা-মা’র সঙ্গে থাকা শিশুরাও হাঁপিয়ে উঠছে। লাগেজ ফেলে রেখে বাইরে অপেক্ষমান স্বজনদের কাছেও যেতে পারছেন না যাত্রীরা।
কখন ভাগ্যে জুটবে লাগেজ এমনটি জানতেও কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। লাগেজ খোয়া যাবার শঙ্কাও অনেকের মাঝে। আবার বিলম্বে মালামাল পাওয়ায় নানাভাবেই তাদের নাস্তানাবুদও হতে হচ্ছে।
এসব বিষয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ডিউটি সিকিউরিটি অফিসারের (ডিএসও) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নিজের নাম প্রকাশ না করে তিনি বাংলাদেশ বিমানের স্টেশন ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
পরে অন্তহীন এ ভোগান্তির ব্যাপারে বাংলাদেশ বিমানের স্টেশন ম্যানেজার মাহাবুবুর রহমান মোবাইলে বাংলানিউজকে বলেন, টেকনিক্যাল কারণে লাগেজ পেতে এ বিড়ম্বনা ঘটতে পারে। তবে এটি নিয়মিত চিত্র নয়। আমরা যতটুকু সম্ভব এ ভোগান্তি কমাতে কাজ করছি। কী কারণে সরকারি ছুটির দিনে এমন বিলম্ব হয়েছে তার খোঁজ খবর নেয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৭
এমএএএম/জেডএম