এভাবেই আমদানি করা কোটি কোটি টাকার পণ্য বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে। অথচ চালের ফুটো মেরামত করার সামান্য গরজটুকুও কারো নেই।
এই দৃশ্যটা (ভিডিও দেখুন) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আমদানি কার্গো ভিলেজের গুদামের। বৃষ্টি হলেই হাঁটু সমান পানি জমে যায় সেখানে।
বিমানের দায়িত্বহীনতা ও গাফিলতির জন্য এভাবে যেন গুদামে রাখা কোটি কোটি টাকার পণ্য নষ্ট না হয়, সেজন্য ব্যবসায়ীরা বারবার বিমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছেন। কিন্তু তাদের শত আবেদনেও টনক নড়েনি বিমানের। কোনোভাবেই পণ্য-সুরক্ষার ব্যাপারে মনোযোগী হচ্ছে না বিমান। এর ফলে কোটি কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হয়ে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা।
জানা যায়, শাহজালাল বিমানবন্দরে কার্গো বিমান এবং যাত্রীবাহী উভয় বিমানেই পণ্য আসে। তবে কার্গো বিমানে আসা পণ্য সরাসরি আমদানি কার্গোর বে’তে (খোলা জায়গায়) নামানো হয়। এরপর বিমানের লোডাররা পণ্যগুলো গুদামের নির্দিষ্ট স্থানে সাজিয়ে রাখেন।
এছাড়া নিয়ম অনুযায়ী কোনো এয়ারলাইন্স’র ফ্লাইট অবতরণ করার ৬ ঘণ্টার মধ্যে ওই ফ্লাইটের মালামাল কার্গো গোডাউন,ওয়্যারহাউস কিংবা ক্যানোপি এলাকায় পৌঁছাতে হবে। আর এই সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের কাছে মালামালের এয়ারওয়ে বিল দিতে হবে। সিঅ্যান্ডএফ কর্তৃপক্ষ এই বিলের কপি নিয়ে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স নিয়ে বিমানের কার্গো কর্তৃপক্ষকে দিলে তারা মালামাল ডেলিভারি দেবে। কিন্তু এটিও অনুসরণ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, বিমানের গুদামে পণ্য রাখার জন্য এন্ট্রি ফি বাবদ প্রতি কেজিতে সাড়ে ৩ টাকা দিতে হয়। তবে বিমানের গুদাম থেকে প্রথম ৪দিনের মধ্যে পণ্য খালাস নিলে শুধু এন্ট্রি ফি চার্জ দিয়েই পণ্য ছাড় করা সম্ভব। এরপর থেকে বিমানের গুদামে প্রথম ১০দিন প্রতি ইউনিট ( ১ ইউনিট ৫০কেজি) ২৫ টাকা ও পরের ১৫ দিন প্রতি ইউনিট ৩৫ টাকা ও এরপর থেকে প্রতিদিন প্রতি ইউনিটে ১০০ টাকা হারে গুদাম-চার্জ দিতে হয়।
জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিমান মন্ত্রণালয়ের সচিব এস এম গোলাম ফারুক সরেজমিনে বিমানের গুদাম পরিদর্শনে যান। তখন তিনি বৃষ্টির পানি গুদামে অঝোর ধারায় পড়তে দেখে বিস্মিত হন। তাৎক্ষণিক তিনি বিমানের চেয়ারম্যান, সিইও ও সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তাদের বিষয়টির সমাধানে জরুরি তাগিদ দেন। কিন্তু এরপর গুদামে পানি পড়া বন্ধের কোনো ব্যবস্থায় নেয়নি বিমান। ফলে বৃষ্টি হলেই নষ্ট হচ্ছে গুদামে থাকা শত শত কোটি টাকার পণ্য। পণ্য নষ্ট হলেও বিমানের নেই কোনো মাথা ব্যথা।
বাংলাদেশ বিমান গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের আওতায় এয়ারলাইন্স ও যাত্রীদের লাগেজসহ বিভিন্ন সেবা ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের আওতায় ব্যবসায়ীদের আমদানি-রফতানিতে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ১৯৬৯ সালের দ্য কাস্টমস অ্যাক্ট-এর ১২ ধারা অনুযায়ী এসব সেবা দিতে লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক। অথচ ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বিমানের কোনো লাইসেন্স ছিলো না। বর্তমানে লাইসেন্স থাকলেও লাইসেন্সের শর্ত মানতে পারবে না বলে কাস্টমসকে চিঠি দিয়েছে বিমান।
কাস্টমস জানিয়ে দিয়েছে ব্যবসা করতে হলে অবশ্যই লাইসেন্সের শর্ত মানতে হবে। নইলে বন্ড লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
অন্যদিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আমদানি কার্গো ভিলেজের গুদাম থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রায় ১১ হাজার পিস মোবাইল ফোন চুরি হলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিমান।
গুদামে পণ্য নষ্ট হওয়ার বিষয়ে মেমার্স সিনথিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো.শাহজাহান বাংলানিউজকে বলেন, বিমানের গুদামের টিনের শেডে ৪টি বড় বড় ছিদ্র রয়েছে। বৃষ্টি হলেই ঐসব ছিদ্র দিয়ে অঝোরে পানি পড়তে থাকে। কখনো কখনো হাঁটু সমান পানি জমে যায়। এর ফলে গুদামে রাখা পণ্য পানিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে। এমনকি তার নিজেরও প্রায় কোটি টাকার গার্মেন্টস কাপড় বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। বিষয়টি বিমানকে জানালেও কোনো লাভ হয়নি। এছাড়া কার্গো গোডাউন, ওয়্যারহাউস ও ক্যানোপি থেকে রানওয়ে পর্যন্ত অবহেলা আর অযত্নে আমদানিকৃত পণ্য বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এ.এম.মোসাদ্দিক আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ব্যস্ততার অজুহাতে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বাংলাদেশ সময়:০৮৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০১৭
এসজে/জেএম