গত ২৫ অক্টোবর হঠাৎ দেখলেন তার সঙ্গে থাকা ব্যাগটি আর নেই। ব্যাগে পাসপোর্ট, ডলার, ২৮ টি ডেভিট কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ সব হারিয়ে তখন দিশেহারা তিনি।
রাজু আহমেদ দিপু জীবনে এই প্রথম এমন অপ্রীতিকর সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি। আরও ৫ বছর আগে এভাবে আরেকটি পাসপোর্ট হারিয়ে কত বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়লো। এই সিঙ্গাপুরে ১০০ বারের বেশি এসেছেন রাজু। এমন হয়নি কখনও।
হারিয়ে যাওয়া ৩টি পাসপোর্টে গত ৫ বছরে ৭২টি দেশ ভ্রমণের স্মৃতি। বিভিন্ন ব্যাংকের ২৮ টি ভিসা, মাস্টার, অ্যামেক্স, ইউনিয়ন পে কার্ড, ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ৮ হাজার ডলারসহ অতি গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ডকুমেন্ট ছিলো।
দিশেহারা অবস্থায় এদিক ওদিক ছোটাছুটি করেও পাচ্ছেন না হারিয়ে যাওয়া ব্যাগ। আইটিবির ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ কাউন্টারে যোগাযোগ করেও ব্যাগ ফিরে পেতে ব্যর্থ হলেন। সেখানের ‘সেন্ট্রাল অ্যানান্সমেন্ট’ থেকে বার বার খবরটা প্রচার করেও লাভ হয়নি।
প্রায় সব হারা অবস্থায় কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না দিপু। সিঙ্গাপুরের সে দেশীয় এক ব্যবসায়ী বন্ধুকে ফোন দেন। ওই বন্ধু এসেও ব্যাগের কুল কিনারা বের করতে পারলেন না। এর মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে তিন দিনের ট্রাভেল ট্রেড শো। গত ২৫ অক্টোবর থেকে চলছিলো ট্রেডশো।
এরপর ট্রেড শো’র অফিসিয়াল পার্টনার ‘সিঙ্গাপুরের মেরিনা সেন্ডস বে’ হোটেল সিকিউরিটি টিম তাকে স্পট পরিদর্শন করে। তারা দিপুর ৩৬০ ডিগ্রি ছবি তুলে সিসি ক্যামেরায় খুঁজতে থাকে। কিন্তু প্রযুক্তি মাধ্যমের এ চেষ্টাও ব্যর্থ। ২ ঘন্টা চেষ্টার পর তারাও অসহায়ত্ব জানায়। ওই রাতেই সিঙ্গাপুর পুলিশ স্টেশনে গিয়ে তিনি সব বলেন।
দিপু বাংলানিউজকে জানান, ‘এখানের নিয়মে কোনো কিছু হারালে তার অনুসন্ধান-তদন্ত হয় না কিন্তু কারও নামে অভিযোগ দিলে তারা পদক্ষেপ নেন। ’
এ অবস্থায় কেবল পাসপোর্ট ফিরে পেতে পুলিশের বিশেষ সহযোগিতা চান দিপু। পুলিশও সিসি ক্যামেরায় চেক করে দেখে। লাভ হয় না। দিপুকে পুলিশ সান্তনা দিলেও তা উদ্ধারে ব্যর্থ হয়।
সব আশারই যখন গুঁড়েবালি… তখন একটি মেইল এসে ঢুকলো দিপুর ই-মেইলে। ‘মিলান’ নামে একজন ইমেইলে যে বার্তা পাঠিয়েছেন তা দেখে যেন জীবনে একটু পানি পেলেন দিপু। ওই ই-মেইলে ইউরোপের দেশ ক্রোয়েশিয়া থেকে আসা মিলান জানিয়েছেন তিনি ব্যাগটি খুঁজে পেয়েছেন এবং ফেরত দিতে চান।
২৭ অক্টোবর মিলানের কাছে ব্যাগ ফেরত পান দিপু। ক্রোয়েশিয়ার মিলানের কাছে কৃতজ্ঞ দিপু বলেন, ‘আমি হয়তো তার প্রতিদান দিতে পারবো না কিন্তু এগুলো না পেলে আমার অনেক ক্ষতি হয়ে যেতো। ’
দেশের পর দেশ ঘুরে বেড়ানো প্রায় নেশার মতো রাজু আহমেদ দিপুর কাছে। নিজে পর্যটন বিকাশ ও সম্ভাবনা নিয়ে ভাবেন। জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাবেক সহ কোষাধ্যক্ষ তিনি। ঘুরে বেড়ানোর নেশায় শুধু গত ৫ বছরে ৩ পাসপোর্টে ৭২টি দেশে শত শত বার ঘুরে বেড়িয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৭
এসএ/বিএস