জানা গেছে, ঘন কুয়াশার কারণে গত মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে ফ্লাইট বিপর্যয় ঘটতে থাকে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।
এ সময় বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের প্রায় দশ হাজার যাত্রী আটকা পড়ে বিমানবন্দরে।
সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের এ সকল যাত্রীদের প্রথমে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টা ৪৫ মিনিটের এসভি-৮০৩ ফ্লাইটে জেদ্দার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ার কথা ছিলো। কিন্তু ঘন কুয়াশার কারণে বাতিল হয় তাদের ফ্লাইট। পরে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে ফ্লাইটের পরবর্তী সময় নির্ধারণ করা হয় বুধবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল ৮টায়।
কিন্তু এ যাত্রীদের সারারাত বিমানবন্দরে বসিয়ে রেখে সকাল ৮টায় সৌদিয়া কর্তৃপক্ষ আবারো ফ্লাইট শিডিউল বুধবার দিবাগত রাত ১টা ৪৫ মিনিটে নির্ধারণ করে তাদের হোটেলে পাঠিয়ে দেন। পরবর্তীতে বুধবার রাত ৯টায় তাদেরকে আবারো বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু এদিনও রাত দুইটা থেকে ঘন কুয়াশা শুরু হওয়ায় ফ্লাইটটি ঢাকা ছাড়তে পারেনি। ফলে এদিনও এ সকল যাত্রীদের রাত পার হয় বিমানবন্দরে অপেক্ষায় থেকে।
কিন্তু বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে প্লেন চলাচল স্বাভাবিক হলেও ফ্লাইট পরিচালনা করতে অপারগতা প্রকাশ করেছে সৌদিয়া কর্তৃপক্ষ। সৌদিয়ার পক্ষ থেকে সন্ধ্যা ছয় টায় ফ্লাইটের সময় দিয়ে গত মঙ্গলবার থেকে অপেক্ষায় থাকা এসব যাত্রীদের আবারো হোটেলে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে।
এদিকে গত মঙ্গলবারের যাত্রীরা এখনও ঢাকা ছাড়তে না পারলেও বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টা ৪৫ মিনিটের ফ্লাইট কুয়াশার আশংকায় এগিয়ে দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে আনা হয়েছে। আর এতেই বেঁকে বসেছেন গত মঙ্গলবারের যাত্রীরা।
এ সকল যাত্রীদের দাবি, আমরা গত তিনদিন থেকে বিমানবন্দরে ভোগান্তির মধ্যে আছি। বাচ্চাদের নিয়ে ঠিকমতো খাওয়া নাই, ঘুম নাই, এভাবে থাকা যায় না। এছাড়া অনেকেই আছেন ওমরাহ হজ পালন করতে যাচ্ছেন। তারা এহরাম বাধা। আমরা আগের যাত্রী আমাদেরকে না নিয়ে তারা পরের যাত্রীদের ফ্লাইট এগিয়ে নিয়ে যাবে এটা হতে দেয়া হবে না।
এ বিষয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পুলিশের ডিউটি অফিসার সিনিয়র এএসপি জিয়াউল হক বাংলানিউজকে বলেন, সৌদিয়ার তিন শতাধিক যাত্রী গত তিনদিন থেকে ভোগান্তির মধ্যে আছেন। কিন্তু সৌদিয়া কর্তৃপক্ষের কোন মাথাব্যথা নেই। এ যাত্রীদের মধ্যে অনেকেই আছেন ওমরাহ পালন করতে যাচ্ছেন। তারা এহরাম বাধা এজন্য না পারছেন খুলতে না পারছেন এভাবে থাকতে। মহিলারাও বাচ্চাদের নিয়ে অনেক সমস্যার মধ্যে আছেন।
জিয়াউল হক বলেন, যাত্রীরা এখন উত্তেজিত হয়ে উঠছেন। আমি পরিস্থিতি সামাল দিতে সৌদিয়ার সাথে কথা বলতে গেলে তারা কোনো ভ্রুক্ষেপ করেনি। তারা বিভিন্ন সমস্যা দেখাচ্ছে। এখন বিমানবন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব আসলে যাত্রীরা তার সাথে দেখা করবে। আমরা তাদেরকে অনেক বুঝিয়ে শান্ত রেখেছি।
জানতে চাইলে সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের অপারেশন ম্যানেজার রেজা বাংলানিউজকে বলেন, কুয়াশার কারণে ক্রুরা রাত তিনটা পর্যন্ত অপেক্ষা করে হোটেলে গেছে। এই ফ্লাইটটি জেদ্দা থেকে এসে ঢাকায় নামতে না পেরে কলকাতায় ল্যান্ড করেছে। পরে জেদ্দা থেকে আরেকটি এয়ারক্রাফট এসে যাত্রীদের নিয়ে রাত ১১টার পরে ঢাকায় ল্যান্ড করে। তখন থেকেই তারা অপেক্ষায় ছিলো। কিন্তু ভিজিবিলিটি পুয়োর থাকায় আর যেতে পারেনি। তাদেরও বিশ্রামের প্রয়োজন আছে। আমাদেরকে আগে সেফটির বিষয়টি দেখতে হবে।
এ সময় তিনি কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এয়ারপোর্টের টাওয়ার বিল্ডিং এ একটা বডি আছে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি আর একটা আছে সরকারের আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়া অফিস বলে যে ভিজিবিলিটি ১ হাজার মিটার আর টাওয়ার বলে ভিজিবিলিটি ৫শ’ মিটার আমরা যাবো কোথায়? টাওয়ারের ডিক্লারেশন না পেলে আমা এয়ারক্রাফ্ট বের করতে পারি না।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৭
আরআই