আগে শুধু ট্যুর অপারেটররা মেলার আয়োজন করতেন। এখন থেকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, ট্যুরিজম বোর্ডের নিবন্ধিত ট্যুর অপারেটর, ট্যুর গাইড, ট্রাভেল এজেন্ট অথবা স্টেকহোল্ডার, পর্যটন ব্যবসায় নিয়োজিত হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, এয়ারলাইন্স, ট্রান্সপোর্টসহ অন্যান্যরা বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের কো-অ্যাক্সিবিউটর হিসেবে বিদেশে অনুষ্ঠেয় মেলায় অংশগ্রহণের নীতিমালা আসছে।
নীতিমালায় থাকছে, আগ্রহী ট্যুর অপারেটর আগে কোনো আন্তর্জাতিক মেলায় অংশগ্রহণ করে থাকলে এর সনদ দাখিল করতে হবে। বড় শহরে অফিস ও জনবল থাকতে হবে। আগ্রহী ট্যুর অপারেটরদের ট্যাক্স আইডেনটিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) ও ট্রেড লাইসেন্স থাকতে হবে। মেলা চলাকালীন সময়ে ট্যুর অপারেটর, স্টেকহোল্ডারের আচরণ সন্তোষজনক এবং উদ্দেশ্য অর্জন না হলে অন্যকোনো মেলায় তাদের আর মনোনয়ন দেওয়া হবে না। এমনকি নিবন্ধন বাতিল করা হবে।
তবে এই নীতিমালা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে বলে বাংলানিউজকে জানায় বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। নীতিমালা হলে পযর্টন বিকাশের মেলায় ট্যুর অপারেটরদের প্রাধান্য থাকছে না। সমন্বিতভাবে বিদেশে পযর্টন মেলা অনুষ্ঠিত হবে।
ট্যুরিজম বোর্ড সূত্র জানায়, যে দেশের পর্যটন মেলায় অংশ নিলে বাংলাদেশ লাভবান হবে, সেই দেশে এসব সংস্থা অংশগ্রহণ করবে। বাংলাদেশের পর্যটন বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এমন দেশের মেলায় অংশ নিতে পারবে না সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো। এই ধারায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে কয়েকটি দেশের ১২টি স্থানে পর্যটন মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এসব মেলায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, সৌন্দর্য ও সভ্যতাকে তুলে ধরা হবে। পর্যটন সংশ্লিষ্ট সেমিনার, রোড শো ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হবে।
ভারতের কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই, কাজাখস্তানের নূর-সুলতান, ইতালির রিমিনি, জাপানের ওসাকা, ইংল্যান্ডের লন্ডন, চিনের কুমমিং, গুয়াংজু, বেইজিং, জার্মানির বার্লিন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল- এই ১২টি শহরের পর্যটন মেলায় অংশগ্রহণের পর মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করবে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। মূল্যায়ন প্রতিবেদনে যদি দেখা যায় মেলায় অংশগ্রহণ করে দেশীয় পর্যটনের বিকাশ হচ্ছে না, তাহলে পরবর্তী অর্থবছরগুলোতে দেশের পরিবর্তন আনা হবে।
ট্যুরিজম বোর্ডের উপ পরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) মোহাম্মাদ সাইফুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ট্যুরিজম বোর্ড পর্যটন বিকাশে দেশে-বিদেশে মেলার আয়োজন অথবা অংশগ্রহণ করে থাকে। এ অর্থবছরে ১২টি বিদেশি মেলায় অংশগ্রহণ করবো। এই মেলায় অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে নানা দিক নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের পর্যটনের বিকাশ হবে এ বিবেচনায় কয়েক দেশে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, বিদেশে পযর্টন মেলায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রটিও পলিসির মধ্যে থাকতে হবে। সবকিছু নীতিমালার আওতায় আনা হবে।
সাইফুল হাসান বলেন, ট্যুর অপারেটরদের পাশাপাশি আমাদের কিছু স্টেকহোল্ডার আছে, যেমন- বিমান, হোটেল, মোটেল, ট্রান্সপোর্টেশন, স্থানীয় প্রশাসন। সবকিছু মিলে মেলা পূর্ণরূপ ধারণ করবে। আমরা সবাইকে সংযুক্ত করবো। মেলায় অংশগ্রহণ করতে হলে কী কী যোগ্যতা লাগবে, বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে। বিদেশে মেলায় অংশগ্রহণকারীদের নির্বাচনের প্রক্রিয়াও থাকবে। সবকিছু নিয়েই বিদেশি ট্যুরিজম ফেয়ারে অংশ নিতে হয়। সবকিছুর জন্য একটা পলিসি দরকার। আমরা চাচ্ছি একটা যুগোপযোগী পলিসি। এটা আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। মন্ত্রণালয় আমাদের বেশ কিছু অবজারভেশন দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অবজারভেশনের ভিত্তিতে একটা সময়োপযোগী পলিসি করতে যাচ্ছি।
ট্যুরিজম বোর্ড জানায়, নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, বেসরকারি ট্যুর অপারেটরের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বৈধ ব্যবসা করার সনদ থাকতে হবে। নতুন নীতিমালার আওতায় বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সঙ্গে কো-অ্যাক্সিবিউটর হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলায় অংশগ্রহণের জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। এছাড়া দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য যোগাযোগ, আবাসন পর্যটন সুবিধাদি অন্তর্ভুক্ত করে ট্যুর আয়োজন বা পরিচালনা করতে হবে।
মেলায় অংশগ্রহণকারীদের যোগ্যতা:
আন্তর্জাতিক পযর্টন মেলায় অংশগ্রহণকারী বেসরকারি ট্যুর অপারেটর ও স্কেকহোল্ডারদের কিছু যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই যোগ্যতা পূরণ না হলে সনদ পাবে না সংশ্লিষ্টরা। মেলায় অংশগ্রহণে আগ্রহী ট্যুর অপারেটরকে ট্যুর অপারেশনের ক্ষেত্রে তিন বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। বিদেশি পর্যটকদের নিয়ে প্যাকেজ ট্যুর পরিচালনার ক্ষেত্রে এক বছরের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ব্যাংক স্টেটমেন্ট আবেদনের সঙ্গে দাখিল করতে হবে। এছাড়া বিদেশি পর্যটকদের নিয়ে ট্যুর পরিচালনার সংখ্যা ও মোট প্যাকেজের প্রমাণস্বরূপ সনদ দাখিল করতে হবে। প্যাকেজ ট্যুর থেকে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সরকারি নিয়মানুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়ার প্রমাণাদিও দাখিল করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৯
এমআইএস/টিএ