ঢাকা: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মশার উপদ্রপ বেড়ে চরমে পৌঁছেছে। এ অবস্থায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) মশার উপদ্রব ঠেকাতে বিভিন্ন ওষুধের পাশাপাশি ব্যবহার করছে ধুপ।
প্রতিবছর শীতকাল আসলেই বিমানবন্দর এলাকায় বেড়ে যায় মশার উপদ্রপ। যাত্রীদের অভিযোগ, মশার উপদ্রপের পাশাপাশি রয়েছে ট্রলির তীব্র সঙ্কটও।
বুধবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘুরে এমন চিত্রই দেখা যায়।
দেড় বছর বয়সী শিশু মেহেরিমাকে নিয়ে সপরিবারে চেন্নাই থেকে শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (ক্যানপি-১) গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন মো. আরমান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে গেলাম এখানে এসে। আমাকে মশা কামড় দিচ্ছে এটা সমস্যা না। কিন্তু আমার শিশু সন্তানকে কামড় দিচ্ছে, এতে আমার খুব কষ্ট লাগছে। এতে যদি আমার বাচ্চার কোন মশা বাহী রোগে আক্রান্ত হয় এর দায়িত্ব কে নেবে?
একই ফ্লাইটে আসা যাত্রী লিংকন জানান, বিমানবন্দরে ক্যানপি-১ এ অনেক মশা। দাঁড়িয়ে থাকতেও খুব সমস্যা হচ্ছে মশার কামড়ে।
বিমানবন্দর টার্মিনাল-২ কার পার্কিংয়ের সামনে অপেক্ষা করছিলেন চট্টগ্রাম থেকে আসা প্রান্ত বড়ুয়া। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বড় ভাই দুবাই যাবেন। তিনি করোনা টেস্ট করতে গেছেন, রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি। কার পার্কিংয়ের এখানে বসে থাকতে গিয়ে মশার কামড়ে টিকতে পারছি না। এমন অবস্থা যে মশা উড়িয়ে নিয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, টার্মিনালের প্রত্যেক গেটের সামনে ধুপ জ্বালানো হয়েছে। এ কারণে সব মশা কার পার্কিংয়ের এদিকে চলে আসছে।
বিমানবন্দর টার্মিনালে যেমন মশার সমস্যা আছে, ঠিক তেমনি টার্মিনাল বাইরেও রয়েছে মশার উপদ্রব।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে কাস্টমস সংলগ্ন এয়ারপোর্ট রেস্টুরেন্টের সামনে দেখা যায় অসংখ্য মানুষ বেঞ্চের উপরে বসে আছেন। তাদের কেউ কেউ পায়ের সামনে বা পাশে কয়েল জ্বালিয়ে রেখেছেন। তেমনি একজন জাকির হোসেন। তার ছোটভাইকে বিদায় জানাতে ফেনী থেকে এসেছেন বিমানবন্দরে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এখানে মশার যে অবস্থা কয়েল না জ্বালিয়ে কোনো উপায় আছে ? মশার কামড়ে বসে থাকতে পারছি না। যেখানে যাই সেখানেই মশা।
শাহজালাল বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন ১১০ থেকে ১২৮ টি ফ্লাইট এ বিমানবন্দরে ওঠানামা করে। এসব ফ্লাইটে প্রায় ২০ হাজার যাত্রী প্রতিদিন যাতায়াত করেন।
শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ-উল আহসান বাংলানিউজকে বলেন, মশার জন্য আমরা বসে নেই। সারা বছর মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। ঝোপ, নালা পরিষ্কার করি, মশার লার্ভা নিধন করি। সকালে লার্ভিসাইড, বিকেলে ইনসেকটিসাইড দেওয়া হয় ফগিং মেশিন দিয়ে। ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করি। টার্মিনালের প্রত্যেকটা গেটে ধুপ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিমানবন্দরের আশপাশের ৪ থেকে ৪ কিলোমিটার এলাকা থেকে মশা বেশি আসে। বিমানবন্দরের ভেতরে মশার কোনো উৎপত্তিস্থল নেই।
ট্রলির সঙ্কট: মশার উপদ্রপের পাশাপাশি বিমানবন্দর রয়েছে ট্রলি তীব্র সঙ্কট। বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে বিমানবন্দর টার্মিনালের ৬ নম্বর গেটে দেখা যায় যাত্রীদের দীর্ঘ সারি। তারা অভিযোগ করেন, ট্রলি খুঁজে পাওয়া যায় না সহজে। কখনও কখনও ট্রলি পেতে ঘণ্টা খানেকও সময় লাগছে। তার্কিশ এয়ারওয়েজের যাত্রী আবু জর ৬ নম্বর গেটের সামনে ট্রলির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তিনি বলেন, ১৫ মিনিট যাবৎ ট্রলির লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, কিন্তু কোথাও ট্রলি পাচ্ছি না। রাত ১০টা ৫৫ মিনিটে ফ্লাইট, হাতে আমার সময়ও কম।
আইয়ুব খান ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে এসেছেন, যাবেন দুবাই। ১১টা ২০ মিনিটে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটের যাত্রী তিনি। বাংলানিউজকে বলেন, ট্রলি পেতে যদি এত সময় লাগে তাহলে করোনা পরীক্ষা ও বিমানবন্দরের অন্যান্য কার্যক্রম শেষ করব কখন? আমার ফ্লাইট মিস হয়ে যেতে পারে।
এদিকে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শাহজালাল বিমানবন্দরে এখন সচল ট্রলি সংখ্যা ১৪০০। সঙ্কট নিরসনে এরই মধ্যে ২০ জন টলিম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, আরও ৫০ জন ট্রলিম্যান নিয়োগ দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ-উল আহসান বলেন, যাত্রীর চাপ যখন বেশি হয় ট্রলি নিয়ে একটু চাপ হয়। যাত্রী বেশি আসলে তখন চাপ আরও বাড়ে। নতুন করে আড়াই হাজার ট্রলি ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই বিমানবন্দরে যুক্ত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২১
এমএমআই/এমএমজেড