জেট ফুয়েলের (প্লেনে ব্যবহারের জ্বালানি) মূল্যের লাগাম ধরবে কে? তিন মাসে জেট ফুয়েলের মূল্য বেড়েছে প্রতি লিটারে ২৫ টাকা আর ১৮ মাসে জেট ফুয়েলের মূল্য বেড়েছে প্রায় ১২০ শতাংশ। ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের মূল্য ছিল ৪৬ টাকা সেখানে ২০২২ সালের এপ্রিলে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের মূল্য ১০০ টাকা।
এয়ারলাইন্সগুলো কী জেট ফুয়েলের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ভাড়া সমন্বয় করতে পারে সেটি কি সম্ভব? জেট ফুয়েলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধি করলে যাত্রী সংখ্যার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যখন আন্তর্জাতিক বাজারে জেট ফুয়েলের মূল্য বৃদ্ধি পায় তখন দেশীয় বাজারে জেট ফুয়েলের মূল্য বৃদ্ধি পায় আবার বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন তাদের পূর্বের আর্থিক ক্ষতিকে পুষিয়ে নিতেও অনেক সময় জেট ফুয়েলের দামের সমন্বয় করে থাকে যা সরাসরি এয়ারলাইন্স ব্যবসার ওপর প্রভাব পড়ে।
গত দু’বছর সারাবিশ্বে করোনা মহামারির প্রভাবে অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম ব্যবসায়ের কী প্রভাব পড়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ আছে বিআইডিএসের গবেষণায় দেখা যায় করোনায় পর্যটন খাতে ক্ষতি ৬০ হাজার কোটি টাকা। এই ক্ষতির প্রায় ৪০ শতাংশই পরিবহনে। অ্যাভিয়েশন ও পর্যটন খাতে বিভিন্ন দেশ সরাসরি প্রণোদনা দিয়ে করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করেছে। সেখানে বাংলাদেশ অ্যাভিয়েশনের বিপরীত চিত্রই দেখতে পেয়েছি। যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধি।
করোনাকালীন সময়ে দেখা গেছে, বিমান বন্দর উন্নয়নের জন্য উন্নয়ন ফি সঙ্গে নিরাপত্তার জন্য নিরাপত্তা ফিও নির্ধারণ করেছে। আর জেট ফুয়েলের দাম দেড় বছরে ১৫ বার বেড়েছে। অ্যাভিয়েশন ব্যবসাকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে।
যেকোনো ব্যবসাকে গতিশীল রাখতে আকাশ পথের গতিশীলতা বজায় রাখা খুবই জরুরি। যা আমরা গত দু’বছর করোনাকালীন সময়ে অনুভব করেছি। বর্তমান জেট ফুয়েলের মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে যাত্রীদের ভাড়া নির্ধারণে সরাসরি প্রভাব পড়ছে। ফলে অ্যাভিয়েশন ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। যেকোনো রুটের অপারেশন খরচের ৪০ শতাংশই হচ্ছে জেট ফুয়েলের খরচ। আয় ব্যয়ের মধ্যে ব্যাপক তারতম্য দেখা যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় অ্যাভিয়েশন সেক্টরের নানাবিধ সূচকেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের এয়ারলাইন্সগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এর আগে ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বিশ্বজুড়ে জেট ফুয়েলের অতিরিক্ত দাম বাড়ার ফলে বেশ কয়েকটি দেশীয় এয়ারলাইন্স যাত্রা শুরু করার কিছু দিনের মধ্যেই অপারেশন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় জেট ফুয়েলের অগ্নিমূল্য যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, অ্যাভিয়েশন খাত চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর অ্যাভিয়েশন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানো পর্যটন খাত মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হবে।
সঠিকভাবে পরিস্থিতি উপলব্ধি করে ভবিষ্যতে অ্যাভিয়েশন খাতকে সুরক্ষিত রাখতে জেট ফুয়েলের মূল্য নির্ধারণের সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২২
এসআইএস