দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ পাওয়ার পর রোববার (২২ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে কাদের বলছিলেন, চলতি বছরের মার্চে জীবন-মৃত্যুর এক কঠিন সন্ধিক্ষণে আমি ছিলাম। আমি ফিরে আসবো, এটা কেউ ভাবেননি।
‘আমি গত দু’তিন মাস সম্মেলনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের অনেকগুলো জেলার সম্মেলন, কোথাও কোথাও প্রতিনিধি সম্মেলনে যোগ দিয়েছি। পর পর চারদিন চার জেলায় কনফারেন্সে আমি অংশ নিয়েছি। ’
দলের সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, মৎস্যজীবী লীগসহ ছয়টি সংগঠন এবং মহানগর আওয়ামী লীগের যে সম্মেলন সেখানেও দ্বিতীয় অধিবেশনটা আমি পরিচালনা করেছি এবং নেত্রীর নির্দেশে কমিটি ঘোষণা করেছি। আমি সারাদিন কর্মব্যস্ত ছিলাম। বিজয় দিবস, বুদ্ধিজীবী দিবস একেবারে প্রোগ্রামে ঠাসাঠাসি ছিল। মাঝে মাঝে আমার ভয় হতো, যদি না কোনো সমস্যা হয়। আল্লাহর রহমতে আমার কোনো অসুবিধা হয়নি এবং আগামী মাসের মাঝামাঝি চেকআপ করাতে আবার সিঙ্গাপুরে যাবো। আপনাদের সবার দোয়ায় ভালো আছি।
সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে চলতি বছরের মার্চে হার্টের বাইপাস সার্জারি শেষে দেশে ফিরেন কাদের। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তাকে আবারো দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং চ্যালেঞ্জিং। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা আমার ওপর আস্থা রেখেছেন এবং যে আস্থা নিয়ে তিনি আমাকে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত করেছেন, সেই আস্থার আমানত রক্ষা করার জন্য, সে আস্থার মর্যাদা রক্ষা করার জন্য সর্বাত্মকভাবে আমার ঘাম-শ্রম নিয়োগ করব।
এবারের সম্মেলন অনেক সুশৃঙ্খল হয়েছে জানিয়ে কাদের বলেন, বিরোধীদলের অনেকই সম্মেলনে উপস্থিত ছিল। বিএনপি আসলে সবাই ভালো মনে করতো। রাজনীতির জন্যও শুভ খবর বয়ে আনতো। বিএনপি অভিনন্দন জানিয়েছে। এটা গণতন্ত্র চর্চারও অংশ।
ঘোষিত কমিটিতে কোনো চমক আছে কিনা, প্রশ্নে কাদের বলেন, আমি তো আগের মানুষ, চমক নই।
সরকারের সামনের দিনগুলো নিয়ে কাদের বলেন, অনেকগুলো কাজ আমাদের সামনে আছে, অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নির্বাচনের আগে আমাদের নেত্রী যে ওয়াদা করেছিলেন, তার বাস্তবায়ন করতে হবে। সেজন্য আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী ও স্মার্টার করতে হবে। তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠনকে সাজাতে হবে। মুজিববর্ষের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন সমাপ্ত করার ব্যাপারে আমাদের সভাপতি নির্দেশ দিয়েছেন। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমাদের টিমওয়ার্ক গড়ে তুলবো। ডিভিশনাল পর্যায়ে যে টিম আছে সেই টিমকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। বিতর্কিত ব্যক্তি কমিটিগুলোতে যাতে স্থান না পায়, সেদিকে দৃষ্টি রেখে আমাদের নেত্রী অনুমোদন দেবেন।
সড়কমন্ত্রী বলেন, আমাদের যে বিশাল উন্নয়নযজ্ঞ চলছে, পদ্মাসেতুর প্রায় অর্ধেক স্প্যান বসে গেছে, মেট্রোরেল এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজও অনেক দূর এগিয়ে গেছে। কয়েক মাসের মধ্যে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে চালু করতে যাচ্ছি, প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। ঢাকা-এলেঙ্গা ফোর লেনও উদ্বোধনের কাছাকাছি এসে গেছে। এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত টেন্ডারের কাজ শেষ, আটটি প্যাকেজে টাঙ্গাইল থেকে রংপুর পর্যন্ত ফোর লেনের কাজও শুরু হচ্ছে। এ কাজগুলো মনিটর করতে হবে। আমি নিজে প্রজেক্টগুলো দেখি এবং নির্দেশনা দেই। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমার একটা চ্যালেঞ্জ আছে। সড়ক পরিবহন আইনের বাস্তবায়নও আছে।
‘আমার একটা সুবিধা আছে, আমার অ্যাডভান্টেজ হচ্ছে আমি রাস্তা দেখতে গিয়ে আওয়ামী লীগ দেখি, আওয়ামী লীগ দেখতে গিয়ে রাস্তা দেখি। রাস্তা দিয়েই তো আমাকে যেতে হয়। রাস্তায় যেতে রাস্তার সমস্যাগুলো দেখেছি এবং ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে বসে নির্দেশনা দিয়েছি। ’
সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ শক্তি একেবারে নির্মূল হয়ে গেছে, আপাতত চুপচাপ আছে, সারফেইসে কোনো অ্যাকটিভিটিজ লক্ষণীয় নয় বলেই তা শেষ হয়ে গেছে- এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। হতে পারে তারা দুর্বল হয়ে গেছে, কিন্তু তারা এখনও সক্রিয় আছে। এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
শেখ পরিবারের জয়, পুতুল বা ববি কমিটিতে আসতে পারে কিনা- প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা নিজেরাই আসতে সম্মত নয়। শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল, ববি, রুপন্তি- এরা কেউই; তাদের পরিবারের সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত আমি যতটা জানি এবারকার নেতৃত্বেও তারা আসবেন- এমন কোনো ইঙ্গিত আমি পাইনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৯
এমআইএইচ/এসএ