মানামা: বাহরাইনের রাজধানী মানামার সালমানীয়া মেডিকেল কমপ্লেক্স হাসপাতাল মর্গে সাড়ে ৩ বছর ধরে পড়ে আছে আরও এক হতভাগ্য বাংলাদেশির মরদেহ। সম্প্রতি হিমাগারে রফিকুল ইসলাম নামে একজনের মরদেহের খবর পাওয়ার রেশ কাটতে না কাটতেই এই মরদেহের খোঁজ পাওয়া গেলো।
দুতাবাস ও মর্গ সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ১০ মে থেকে মর্গে সফিউল্লাহ নামে একজনের মরদেহ সংরক্ষিত আছে। মরদেহের সঙ্গে একটি পাসপোর্টের ফটোকপি পাওয়া গেছে-যার নম্বর এম-০২২৯১৫৩।
পাসপোর্টে বর্ণিত তথ্য অনুযায়ী মৃতের নাম সফিউল্লাহ। পিতা-রুহুল আমিন। গ্রাম-ফুলছোয়া। ডাকঘর-বাকিলা। থানা–হাজীগঞ্জ। জেলা-চাঁদপুর।
তবে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রম) মহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, লাশের সঙ্গে থাকা পাসপোর্টের ফটোকপিতে হাতে লেখা একটি বাংলাদেশি মোবাইল নাম্বার পাওয়া যায়। দূতাবাস থেকে ওই নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে টেলিফোনধারীই নিজেকে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের ফুলছোয়া গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে সফিউল্লাহ বলে দাবি করেন। তিনি মৃতব্যক্তিকে তার বড় ভাই মোহাম্মদউল্লাহ বলে দাবি করেন। তিনি আরও জানান-তার বড়ভাই দীর্ঘ দিন ধরে বাহরাইনে বসবাস করছিলেন। ২০১১ সালের ১০ মে তার মৃত্যু হয়।
মহিদুল ইসলাম বলেন, মোহাম্মদউল্লাহ অবৈধভাবে বাহরাইনে বসবাস করছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি ছোট ভাই এর পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টের ফটোকপি বহন করছিলেন। তাই তার পরিচয় শফিউল্লাহ নামেই লিপিবদ্ধ হয়। মরদেহটি দীর্ঘ দিন মর্গে থাকায় এটি এখন দেশে পাঠানোর মতো অবস্থায় নেই।
মূলত চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার ৭ নং বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের ব্রাক্ষণছোঁয়া গ্রামের হাজি বাড়ির রফিকুল ইসলামের লাশ নিয়ে সম্প্রতি মিডিয়ায় আলোচনার প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে বাহরাইনস্থ বাংলাদেশ দুতাবাস।
এ ব্যপারে বাহরাইনের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল কে এম মমিনুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, রফিকুল ইসলামের (শাহ আলমের) লাশের অবস্হান নির্ণয় করতে গিয়ে মর্গে এ পর্যন্ত যতগুলো পুরনো লাশ ছিল সবগুলোর তথ্য খুঁজতে গিয়ে আমরা সফিউল্লাহর লাশটির খোঁজ পাই। তবে রফিকুল ইসলাম বা শাহ আলম নামে কোন লাশ পাওয়া যায় নি।
তিনি বলেন, সফিউল্লা অনেক বছর ধরে বাহরাইনে ছিলেন, তিনি অবিবাহিত ছিলেন। মা বাবাও ছিলেন না। তার কোনো আত্মীয়-স্বজনও লাশ দেশে নেয়ার ব্যাপারেও আগ্রহ দেখায়নি।
মৃতের ভাইয়ের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমার ভাই টাইটেল পাশ মওলানা ছিলেন। আমাদের পরিবার অত্যন্ত গরীব। আমি নিজে ঢাকায় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করি। আমাদের ৪ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে তিনি বড় ছিলেন। পরিবারের জায়গা জমি বিক্রি করে তিনি ২৫ বছর আগে বাহরাইন যান, তার মালিক অন্ধ ছিল। তাকে ঠিক মত বেতন দিত না। তিনি পরিবারের জন্য মাঝেমধ্যে সামান্য টাকা পয়সা দিতেন । এতো বছর পর তার লাশ দেশে আনার মত সামর্থও আমাদের নাই। তাই লাশ ওখানে দাফন করলে আমাদের কোন আপত্তি নাই।
বাহরাইনে প্রচুর সংখ্যক অবৈধ শ্রমিক থাকায় তারা অসুস্থ হলে বা কোন দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে গেলে সৃষ্টি হয় সমস্যা। এক্ষেত্রে চিকিৎসাধীন অবস্হায় ওই ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে পোহাতে হয় অন্যরকম বিড়ম্বনা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৪