বাহরাইন: প্রায় সাত বছর পর বাহরাইনের ‘বাংলাদেশ স্কুল’ নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছালো স্কুল কমিটি, দূতাবাস ও স্থানীয় কমিউনিটি। ১৯৯৪ সালে স্কুলটির গঠন প্রক্রিয়া শুরু হলেও বাহরাইনের বাংলাদেশ স্কুলের আনুষ্ঠানিক পাঠদান ও কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৬ সালে।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রচেষ্টায় শিক্ষার্থীদের কলরবে দারুণ জমে ওঠে বিদেশের মাটিতে বাংলার আলোর বাতিঘর। বছর-বছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে বিদ্যালয়ে স্থান সংকুলান না হওয়ায় প্রবাসীরা স্কুলের নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য বাহরাইন সরকারের নিকট একটি জমির জন্য আবেদন করেন। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাহরাইনের রাজা কিং হামাদ বিন ঈসা আল খালিফা ২০০৫ সালে আ’আলীতে বাংলাদেশ স্কুলের জন্য কয়েক কোটি টাকা মূল্যের ১৮৩ শতাংশ জমি দান করেন।
পরবর্তীতে ২০১০ সালে ঘটনাচক্রে স্কুলের স্পন্সর বাংলাদেশ ক্লাব বন্ধ হয়ে গেলে নানা আইনি জটিলতা, কমিউনিটি নেতাদের দ্বিধাবিভক্তি ও তৎকালীন রাষ্ট্রদূতের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে ৭ বছর চেষ্টা করেও স্কুলের লাইসেন্স ফিরে পাওয়া সম্ভব হয়নি।
মেজর জেনারেল কে এম মমিনুর রহমান ২০১৪ সালের জুলাইতে বাহরাইনের রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগদানের পর পরই স্কুলের পরিচালনা কমিটি, অভিভাবক ও কমিউনিটি নেতাদের নিয়ে দফায়-দফায় বৈঠক করে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কমিউনিটি নেতাদের দ্বিধাবিভক্তির কারণে এ বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে নির্দিষ্ট সময়ের পরেও লাইসেন্স উদ্ধার না হলে, যে কোনো সময়ে বন্ধ হয়ে যাবে স্কুলের কার্যক্রম, হুমকির মুখে পড়বে ১১শ’ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ, হাতছাড়া হয়ে যাবে মহামূল্যবান জমি। এ পরিস্থিতিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে আবার মুঠোফোনে বার্তা দিয়ে শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) স্হানীয় সময় সাড়ে সাতটায় ফের বৈঠকে ডাকেন রাষ্ট্রদূত। তার আবেদনে সাড়া দিয়ে স্কুল পরিচালনা কমিটি, অভিভাবক ও বিশিষ্টজনেরা দূতাবাস চত্বরে উপস্থিত হন।
বৈঠকের শুরুতে স্কুলের লাইসেন্স পুনঃউদ্ধারের বিষয়ে প্রারম্ভিক আলোচনা করেন রাষ্ট্রদূত। পরে ইউনাইটেড ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর শাফকাত আনোয়ার, ইউনিভার্সিটি অফ বাহরাইনের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক, বাংলাদেশ সমাজের সভাপতি ফজলুল করিম বাবলু, সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি প্রকৌশলী মো.নুরুন নবী, বাহরাইন আওয়ামী লীগ এর উপদেষ্টা প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদকে মঞ্চে ডেকে সবার সম্মতিক্রমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দেন রাষ্ট্রদূত।
এ বিষয়ে সরাসরি সিদ্ধান্তে অংশ না দিয়ে তাদের ওপর সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব দিয়ে রাষ্ট্রদূত দূতাবাসের মিনিস্টার মেহেদী হাসান ও সচিব (শ্রম) মহিদুল ইসলামকে নিয়ে মঞ্চের সামনে অতিথির আসনে গিয়ে বসেন।
এরপর ৫ পরিচালক সকল অভিভাবকের সিদ্ধান্তক্রমে অতিসত্ত্বর স্কুলের লাইসেন্স পুনঃউদ্ধার ও মহামূল্যবান ভূমিটি বাঁচানোর জন্য বাহরাইনের প্রচলিত আইন অনুযায়ী একটি কোম্পানি গঠনের মাধ্যমে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে উপস্থিত সকল অভিভাবক এবং বিশিষ্টজনদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আইনুল হককে স্কুলের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার দায়িত্ব অর্পণ করা হয় এবং লাইসেন্স পাবার পর স্কুলের অভিভাবক কাউন্সিল,বোর্ড অব ডিরেক্টর এবং স্কুল প্রশাসন মিলিতভাবে স্কুলের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ।
কমিটির এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানান উপস্থিত সকল অভিভাবক ও বিশিষ্টজনেরা ।
বৈঠকে উপস্হিত থাকা আবু সাঈদ,জাবেদ হোসেন সুমন ও মিজানুর রহমান নামে তিন অভিভাবক বাংলানিউজকে জানান-সরকারের তরফ থেকে জমি পেয়েও ঐক্যমতের কারণে ৭ বছরে আমরা স্কুল ভবন তৈরি করতে পারিনি,এটা বাংলাদেশিদের জন্য লজ্জার বিষয়, আজকে এতদিন পর আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত পৌঁছেছি ,তবে খুব দ্রুত আমরা এর বাস্তবায়ন চাই ।
বাংলাদেশ স্কুলের সাবেক চেয়ারম্যান কেফায়েত উল্লাহ মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, বাহরাইনের বাংলাদেশ কমিউনিটি সঠিক সময়ে নির্ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এবার প্রবাসের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে বাংলার বিদ্যাপীঠ।
বাংলাদেশ স্কুলের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, এতো দিনের অমীমাংসিত বিষয়ে আমরা এখন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি। অনেকদিন পরে হলেও বাংলাদেশিরা প্রমাণ করেছে জাতীয় ইস্যুতে তারা সর্বদা ঐক্যবদ্ধ।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৬
আরআই