ঢাকা: ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ১৯ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঘাটতি ১১ হাজার ৭৭৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২২ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রভিশন হলো ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি। ব্যাংকের মুনাফা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত হারে দীর্ঘমেয়াদী কোনো বিনিয়োগ না করে ব্যাংকে সংরক্ষণ করতে হয়। যা গ্রাহকের আমানতের রক্ষা কবজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। খেলাপি ঋণের ধরন ভেদে প্রভিশন রাখা হয়। যে ব্যাংকের যত খেলাপি ঋণ, সে ব্যাংককে তত বেশি প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। যেসব ব্যাংকের মুনাফা নেই সেগুলো প্রভিশন সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়।
খেলাপি ঋণ হলো তিন প্রকার। ১) সাব স্ট্যান্ডার্ড (এসএস) বা প্রাথমিক মানের খেলাপি ঋণ; ২) ডাউট ফুল (ডিএফ) বা মধ্যম মানের খেলাপি ঋণ; এবং ৩) ব্যাড এন্ড লস (বিএল) বা মন্দ মানের ঋণ। খেলাপি ঋণের ধরন ভেদে ২৫ শতাংশ, ৫০ শতাংশ এবং ১০০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোকে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অগ্রণী ব্যাংকের মোট ১৩ হাজার ৫৪৬ কোটি খেলাপি ঋণের বিপরীতে ৮ হাজার ৯৪৮ কোটি প্রভিশন সংরক্ষণ প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ব্যাংকটি ৪ হাজার ৫২৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা সমন্বয়ের পর প্রভিশন ঘাটতি রয়ে গেছে ৪ হাজার ৪২২ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
আর ৯৭১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা সমন্বয়ের পর বেসিক ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৪ হাজার ৫৩৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। ১ হাজার ৬৩২ কোটি ৮৩ লাখ সমন্বয়ের পর রূপালী ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ২ হাজার ৮১৪ কোট ৬১ লাখ টাকা। ১ হাজার ৯০১ কোটি ৩৬ টাকা সমন্বয়ের পর বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি মাত্র ৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলোর এ প্রভিশন ঘাটতি স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ৫০ বছরে খেলাপি ঋণের বিপরীতে বেড়েছে। তবে গত এক বছরে উল্লেখ্যযোগ্য হারে বাড়েনি; বেড়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে। একটি বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার কারণে বেড়েছে প্রভিশন ঘাটতিও।
তবে এর বিপরীত চিত্রও আছে। খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংক অতিরিক্ত প্রভিশন সংরক্ষণেও সমর্থ হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে সোনালী, জনতা ও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। ব্যাংক তিনটির অতিরিক্ত প্রভিশন সংরক্ষণের পরিমাণ ৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সরকারি ব্যাংকগুলোর যে খেলাপি ঋণ তা স্বাধীনতার পর ৫০ বছরের স্থিতি। নানা কারণে এমনটা হয়েছে। সরকারি কাজের পাশাপাশি নানা কাজে ঋণ বিতরণ করা হয়। একই কথা প্রযোজ্য প্রভিশন ঘাটতির ক্ষেত্রেও।
বেসরকারি খাতের বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের প্রভিশন সমন্বয়ের পরও ঘাটতি রয়েছে ৩৪৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা। সমন্বয়ের পর মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ১৭১ কোটি ১৬ লাখ টাকা। ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৬ হাজার ৬১৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা। ব্যাংকটি প্রভিশন প্রভিশন রাখতে পেরেছে ২ হাজার ১০ কোটি ৮ লাখ টাকা।
বেসরকারি খাতে বাড়তি প্রভিশন রাখতে পেরেছে ইসলামী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংকসহ ১৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংক।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার প্রভাবে প্রভিশন ঘাটতিও বেড়েছে। ঋণ ব্যবস্থাপনায় ত্রুটির কারণে খেলাপি বেড়েছে সঙ্গে বেড়েছে প্রভিশন ঘাটতিও।
এ অবস্থায় খেলাপি ঋণ ও প্রভিশন ঘাটতি রোধে সুশাসন প্রতিষ্ঠার তাগিদ দিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, দেশে খেলাপি ঋণ যে কারণে বেড়েছে তা হলো- ঋণ দেওয়ার সময় প্রয়োজনীয় আইন-কানুন অনুসরণ না করা এবং খেলাপি হয়ে পড়া গ্রাহকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় অন্যরা ঋণ ফেরত দিচ্ছে না। আবার নতুন করে ঋণ নিয়ে একই কাজ করছে। এর ফলে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ছেই।
খেলাপি ঋণ বাড়ায় বেশি পরিমাণে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। যে সব ব্যাংকের সক্ষমতায় টান পড়েছে সেগুলো আনুপাতিক হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারছে না। এতে বাড়ছে প্রভিশন ঘাটতি, ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে আমানতকারীদের স্বার্থের। ফলে ব্যাংকের ভাল গ্রাহক তথা ভাল ব্যবসায়ীরা ঋণ পাচ্ছে না। নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পুরো ব্যাংকিং খাতেই।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩
জেডএ/এমএমজেড