ঢাকা: হ্যালো পার্টি, জিনের বাদশা, মাস্টার ইন অল পীর সন্নাসী- এমন নানা প্রতারকচক্র সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থ। লটারিতে টাকা পাওয়ার প্রলোভন, এক মিনিটে রোগ সারানো কিংবা স্বজনের দুর্ঘটনা দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এছাড়াও পিনকোড চুরি করে নেওয়া হচ্ছে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) টাকা।
মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস নিয়ে মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) রাজধানীতে এক সেমিনারে এমনই তথ্য তুলে ধরেছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (ইকোনমিক ক্রাইম) অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক শাহ আলম।
বিগত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে শাহ আলম জানান, কোনো প্রতারকচক্র প্রথমে একজনকে টার্গেট করে তার মোবাইল তার পিনকোড চুরি করে। অনেক ক্ষেত্রে মনে রাখার জন্য গ্রাহক সহজ ডিজিট ব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে ৩০ শতাংশই সফল হয় প্রতারকচক্র।
তিনি বলেন, ‘‘অপরাধীদের কর্মকৌশল যদি না বুঝি তাহলে হবে না, তারা তিন মিনিটের অপারেশনের জন্য তিন মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নেয়। অথচ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অপরাধগুলোর মাত্র এক শতাংশ প্রকাশ হচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রমাণ অর্থাৎ প্রেরক ও প্রাপকের মোবাইল নম্বর সংরক্ষণের কথা থাকলেও তা রাখা হয় না। এতে অপরাধ আরও বেশি হচ্ছে। ’’
২০১৪ সালের একটি প্রতিবেদন তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে গ্রামের সংখ্যার থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্টের সংখ্যা বেশি। শতকরা ৭৫ শতাংশ ছবি একই রকমের ব্যবহার করা হয় যেগুলো ভুয়া। অনৈতিকভাবে ১৮ হাজার নয়শ’ কোটি টাকার লেনদেন হয়। ’’
ওই সময়ে নামকাওয়াস্তে একেকটা সিম একেকজনের হাতে চলে যাচ্ছিলো জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ফলে এই গ্রুপগুলোকে কীভাবে ধরবো, কীভাবে আইনের আওতায় নিয়ে আসবো- তা সম্ভব ছিল না। অবশ্য এখন বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের পর এই সুযোগ আর নেই। ’’
ইরানে মানবপাচারে জন্য অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের কাজে ১১৫টি সিম ব্যবহার করা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ইরান, তুরস্ক ও দুবাইয়ে টিম পাঠিয়ে মানব পাচার চক্রকে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ’’
প্রবাসীদের জিম্মি করে হুন্ডি ব্যবসাসহ প্রতারণার নানা তথ্য তুলে ধরেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অপরাধ সংক্রান্ত অভিযোগ জানাতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, শর্ট কোডের মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর পরামর্শ দেন তিনি।
সেমিনারে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, ‘‘বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের পর যে ডাটাবেজ তা এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারে। ’’
এজন্য বিটিআরসি, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং মোবাইল অপারেটরদের চুক্তি করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।
‘‘বাংলাদেশে আর্থিক অন্তর্ভূক্তি: সুযোগ, বিপত্তি ও ডিএফএসে ভবিষৎ করণীয়’’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করেছিল টেলিযোগাযোগ বিটের সংবাদকর্মীদের সংগঠন টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি)।
এমএফএস খাতে নতুন নীতিমালা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সার্ভিস বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর প্রজ্ঞা পারমিতা সাহা। একই সঙ্গে মার্কেট বৃদ্ধির সাথে সাথে সম্ভাবনা কিভাবে কাজে লাগানো সেভাবে এগিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের উপদেষ্টা অসীম দাশ গুপ্ত বলেন, ‘‘এ সার্ভিসটাকে কিভাবে আরো আধুনিক করা যায় সে বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে। ’’
গ্রামীণফোনের সিনিয়র স্পেশালিষ্ট (ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস) রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘‘ডিএফএসএর মাধ্যমে ব্যাংকিংসেবার বাইরে থাকা জনসংখ্যার জন্য ঋণদান, সঞ্চয়পত্র, মার্চেন্ট পেমেন্ট এমনকি বিমা সুবিধাও দেয়া সম্ভব। ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা জনসংখ্যার জন্য বাংলাদেশে এ ধরনের সেবা সম্প্রসারণের প্রয়োজন রয়েছে। ’’
রবি’র ডিজিটাল সার্ভিসের প্রধান মানজুর রহমান বলেন, ‘‘ভবিষ্যতের মার্কেটের অবস্থা কি হবে সে চিন্তা করেই নীতিমালা করা উচিৎ। এখাতে নতুন নতুন উদ্ভাবনী থাকতে হবে। ’’
বিটিআরসি’র মহাপরিচালক কর্নেল মোহাম্মদ জুলফিকার, গ্রামীণফোনের চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার মাহমুদ হোসেন, বাংলালিংকের এমএফএস ডিরেক্টর আসিফ আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
টিআরএনবি সভাপতি রাশেদ মেহদীর সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৪ ঘণ্টা, ৩০ আগস্ট, ২০১৬
এমআইএইচ/জেএম