তবে সহায়তার পরিমাণ কী হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে মন্ত্রী জানান। সংস্থাটির একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্ব ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বার্ষিক সম্মেলনের প্রথম দিন বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা এবং দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যানেট ডিক্সনের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। স্থানীয় সময় বুধবার (১১ অক্টোবর) এই বৈঠক হয়।
বৈঠক শেষে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আমরা কোনো নির্দিষ্ট সহায়তার বিষয়ে বলিনি। শুধু প্রস্তাব করা হয়েছে। আশা করছি তারা যেটুকু পারবেন তার সর্বোচ্চটা দেবেন।
রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ৪০ কোটি ডলার পেতে পারে
বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (আইডিএ) নতুন তহবিল গঠন করেছে। যার নাম ‘রিফিউজি ফান্ড’। সারাবিশ্বের দুস্থ ও শরণার্থীদের কল্যাণে এই অর্থ কাজে দেবে। আকার প্রায় ২০০ কোটি ডলার। যেকোনো দেশ প্রয়োজনে সেখান থেকে সুদসহ তিন বছর মেয়াদী সর্বোচ্চ ৪০ কোটি ডলার ঋণ নিতে পারে। তাছাড়া এখান থেকে বিশ্ব ব্যাংক অনুদান হিসেবেও দিতে পারে। বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান চিমিয়াও ফান গত সেপ্টেম্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে তহবিলটির বিষয়ে নজরে আনেন। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের সেখান থেকে সাহায্য করা যেতে পারে।
মুহিত আশা করেন বিভিন্ন দেশের মতো বিশ্ব ব্যাংকও রোহিঙ্গা কল্যাণে এগিয়ে এসে কাজ করবে। তাতে কোনো শর্ত থাকবে না।
বাংলাদেশ প্রশংসা পাচ্ছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, তাদের আশ্রয় দেওয়ায় সব দেশের মতো বিশ্ব ব্যাংক কর্তৃপক্ষও বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। তারা পাশে থাকতে চায়।
এদিকে বিশ্ব ব্যাংকের এক বিবৃতিতে বলা হয়, লাখ লাখ রোহিঙ্গার ভরণপোষণে বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তা চেয়েছে এবং বিশ্ব ব্যাংক এই সংকটে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিশুদ্ধ পানি, টয়লেট এবং সড়ক অবকাঠামোর মতো বিষয়ে সহায়তা করা যেতে পারে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বলছে, সহিংসতার জেরে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় সোয়া পাঁচ লাখ। তবে বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা সাড়ে ছয় লাখ ছাড়িয়েছে। দিন দিন রোহিঙ্গা স্রোত কোনো মতেই থামছে না। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। সহিংসতায় প্রাণ গেছে তিন হাজারের বেশি মানুষের। বেসরকারিভাবে এই সংখ্যা দশ হাজার পার করেছে মধ্য সেপ্টেম্বরেই। কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদল সেখানে কাজ করার সুযোগ না পাওয়ায় নতুন তথ্য জানা যাচ্ছে না।
ঘটনার শুরু গত ২৪ আগস্ট দিনগত রাতে রাখাইনে যখন পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এর জেরে ‘অভিযানের’ নামে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। ফলে লাখ লাখ মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য চলে আসছেন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিগত দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে দেশটির উত্তর-পূর্ব রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। সহিংসতার শিকার হয়ে গত বছরের অক্টোবরেও প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৭
আইএ