ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্যাংকিং

কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তথ্য দিতে মাস্টারকার্ডের আপত্তি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৭
কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তথ্য দিতে মাস্টারকার্ডের আপত্তি বাংলাদেশ ব্যাংক ও মাস্টারকার্ডের লোগো

ঢাকা: লেনদেনের সঠিক চিত্র তুলে ধরা ও সঠিক প্লাটফর্ম ব্যবহারে ব্যাংকিংখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে আপত্তি মাস্টারকার্ডের। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই উদ্যোগকে মাস্টারকার্ড শিল্পের অগ্রগতির পথে বাধা বলে মনে করছে। ন্যাশনাল পেমেন্টে সুইচ বাংলাদেশের মাধ্যমে লেনদেন নিরাপদ নয় বলেও দাবি করছে মাস্টারকার্ড।

দেশের টাকা বাইরে চলে যাওয়া রোধ করা, গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ এবং অভ্যন্তরীণ আন্ত:ব্যাংক লেনদেন খরচ কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট চলতি বছরের ২৪ আগস্ট একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
 
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ইস্যুকৃত সব কার্ডের অভ্যন্তরীণ আন্ত:ব্যাংক লেনদেন ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ (এনপিএসবি) এর মাধ্যমে পরিচালনা করতে হবে।

চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
 
এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে বাংলাদেশে ভিসা মাস্টারকার্ডসহ অনলাইন লেনদেনের যাবতীয় কার্যক্রম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এনপিএসবির মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। বর্তমানে মাস্টারকার্ডের লেনদেন এনপিএসবির আওতার বাইরে রয়েছে। দেশে বর্তমানে ৮০ লাখ মানুষ ডেবিট কার্ড, ২০ লাখ মানুষ ক্রেডিটকার্ড ব্যবহার করেন। তবে মাস্টারকার্ড ব্রান্ডেড কার্ড কি পরিমাণ আছে তার সঠিক তথ্য চাইলেও দিতে রাজি হয়নি মাস্টারকার্ড।
 
বাংলাদেশে প্রথম মাস্টারকার্ড ব্র্যান্ডেড প্লাস্টিক কার্ড ১৯৯৭ সালে চালু হলেও  ২০১৩ সালে বাংলাদেশে অফিস খুলে কার্যক্রম শুরু করে তারা। এরপর গত চার বছরে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাণিজ্যিক ব্যাংককে অংশীদার হিসেবে পেয়েছে মাস্টারকার্ড।  
 বাংলাদেশে যাত্রার শুরুর চার বছর পার হলেও কতো সংখ্যক  গ্রাহকের কার্ডে কত টাকার লেনদেন হয়েছে তার কোনো তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে নেই। সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সব ধরনের লেনদেনের হিসাব কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিলেও মাস্টারকার্ড কখনোই তা দেয়নি।
 
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন কার্যকর হলে মাস্টারকার্ডের সব ধরনের লেনদেনের তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চলে যাবে। একারণে ওই প্রজ্ঞাপনে আপত্তি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক ই-পেমেন্ট কোম্পানি মাস্টারকার্ড।  

তারা বলছে, ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ (এনপিএসবি) দ্য পেমেন্ট কার্ড ইন্ডাস্ট্রি ডাটা সিকিউরিটি স্ট্যান্ডার্ড (পিসিআই ডিএসএস) সার্টিফাইড নয়। অনলাইন লেনদেনের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট চ্যানেলের ওপর এ ধরনের নির্ভরতা সাইবার হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারে।
 
মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বিকাশ বর্মা স্বাক্ষরিত এক আবেদনে বলা হয়েছে, ওই প্রজ্ঞাপন মেনে অনলাইন লেনদেন করা ঝুঁকিপূর্ণ হবে। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক যে সিস্টেমে লেনদেন করতে বলছে সেটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নয়। ফলে ওই চ্যানেলে লেনদেন করাও নিরাপদ নয়। ব্যাংকিংখাতে কার্ডশিল্পের অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করবে বলেও উল্লেখ করেছে মাস্টারকার্ড।
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক লীলা রশিদ জানান, কার্ডের মাধ্যমে দেশের লেনদেনের সঠিক চিত্র তুলে ধরা এবং সঠিক প্লাটফর্ম ব্যবহার হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ ও নীতি নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এনপিএসবির লেনদেন হলে দেশে লেনদেনের সঠিক চিত্র তুলে ধরা এবং সংশ্লিষ্ট তথ্য সহজেই মনিটরিং করা যাবে।
 
লীলা রশিদ আরও বলেন, এনপিএসবি ব্যতীত অন্যকোন চ্যানেলে লেনদেন করা হলে রেমিটেন্স বহি:মুখী হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। যা অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনটি নতুন প্রযুক্তি সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে কোন বাধা সৃষ্টি করবে না।
 
পিসিআই ডিএসএস  সাটিফাইডের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, এনপিএসবি-এর নিরাপত্তা জোরদারে পিসিআই ডিএসএস কর্তৃক স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
 
এবিষয়ে জানতে চাইলে মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার (বাংলাদেশ) সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বাংলানিউজকে বলেন, অন্যান্য দেশে পেমেন্ট সিস্টেম গেটওয়ে ব্যাংকিংখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার বাইরে কারও কাছে থাকে। বাংলাদেশে এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে। সুতরাং নিয়ন্ত্রক সংস্থা আমাদের প্রতিযোগী। আমরা চাই একটি লেভেল প্লেইং ফিল্ড এবং লেনদেন গেটওয়ে নির্ধারণের বিষয়টি ব্যাংকগুলোর উপর ছেড়ে দিতে।
 
লেনদেনের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানানোর বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের কাছে কখনো এসব তথ্য চায়নি। নতুন এই প্রজ্ঞাপনটি জারি করার পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। আমরা কিছু কিছু তথ্য সরবরাহ করেছি।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর: ১৩,২০১৭
এসই/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।