ঢাকা: মহা ধুমধামে দলের ষষ্ঠ কাউন্সিলের পর বিশ্রাম নিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আর দলের নেতারা রয়েছেন অপেক্ষায়-কবে নাগাদ কমিটি গঠন হবে।
ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে কমিটি গঠনের কাজ কিছুই হবে না, তা আগে থেকেই জানতেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
তারপরও কারো কারো ধারণা ছিল, মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নাম কাউন্সিল থেকেই ঘোষণা করবেন খালেদা জিয়া। সম্ভব হলে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিও ঘোষণা করতে পারেন তিনি।
কিন্তু কাউন্সিলের ১২ দিন আগে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে কণ্ঠভোটে নির্বাচিত করে নেওয়া ছাড়া আর কিছুই হয়নি বিএনপির কাউন্সিলে।
সারা দেশ থেকে আসা হাজার তিনেক কাউন্সিলর খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে কণ্ঠভোটে নির্বাচিত করে বাকি দায়িত্ব দলের চেয়ারপারসনের ওপর ছেড়ে দিয়ে ফিরে গেছেন যার যার ঠিকানায়।
এদিকে শনিবার (১৯ মার্চ) কাউন্সিলের পর গুলশানে নিজ বাসভবন ‘ফিরোজা’য় পুরোপুরি বিশ্রামে আছেন খালেদা জিয়া। মাঠে নেমে কাজ না করলেও পুরো কাউন্সিলের সব কিছু দেখ-ভালের দায়িত্ব পালন তাকেই করতে হয়েছে।
ফলে কাউন্সিল প্রস্তুতিপর্বের দিনগুলোতে প্রচণ্ড মানসিক চাপে ছিলেন তিনি। তাই কাউন্সিল শেষে আপাতত বিশ্রাম নিচ্ছেন বিএনপি প্রধান। তবে কাউন্সিলে যোগ দিতে আসা চার বিদেশি ডেলিগেটের সঙ্গে রোববার (২০ মার্চ) নিজ বাসায় সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন খালেদা জিয়া।
কিন্তু খালেদা জিয়া বিশ্রামে থাকলেও দলে পদপ্রত্যাশী নেতারা স্বস্তিতে নেই। তারা অপেক্ষায় আছেন, কবে কখন খালেদা জিয়া একেক করে নাম ঘোষণা করবেন এবং কমিটিতে কাঙ্ক্ষিত পদ পাবেন তারা।
রোববার (২০ মার্চ) ও সোমবার (২১ মার্চ) বিএনপির ডজন খানেক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলের পদপ্রত্যাশী নেতারা অনবরত শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, খোঁজ-খবর নিচ্ছেন কাউন্সিল পরবর্তী কমিটি গঠনের।
কিন্তু দায়িত্বশীল কোনো নেতাই কমিটি গঠনের ব্যাপারে দলের নেতা-কর্মীদের পরিষ্কার কিছু জানাতে পারছেন না। শুধু বলছেন অপেক্ষায় থাকতে-ধৈর্য ধরতে!
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দলের মহাসচিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটি ঘোষণা করতে পারেন খালেদা জিয়া। বাকি কমিটিগুলো গঠনে অন্তত দেড় মাস সময় লাগবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান বাংলানিউজকে বলেন, ম্যাডাম মাঠে নেমে কাজ না করলেও কাউন্সিলের সব কাজ তিনিই মনিটর করেছেন, আমাদের যুক্তি-পরামর্শ দিয়েছেন, কাউন্সিল শেষ পর্যন্ত ঠিকঠাক মত হবে কি না-তা নিয়েও তিনি চিন্তিত ছিলেন। কাউন্সিল মোটামুটি ঠিক-ঠাক মত হয়েছে, এখন তিনি বিশ্রামে আছেন। কয়েক দিনের মধ্যেই হয়তো একেক করে কমিটিগুলো দিয়ে দেবেন।
তবে কবে নাগাদ খালেদা জিয়া কমিটি ঘোষণা করবেন- সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো দিন-তারিখ বিএনপির নেতারা জানেন না। বরং দলে নিজের জায়গা কোথায় হবে, সেটি নিয়েই চিন্তিত তারা।
সূত্রমতে, দলের উপদেষ্টা, স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম-মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদকমণ্ডলী ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হতে আগ্রহী নেতারা খালেদা জিয়ার আশ-পাশে থাকা কর্মকর্তা ও নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। শেষবারের মত চেষ্টা চালাচ্ছেন খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠজনদের দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত পদটি নিশ্চিত করতে।
কিন্তু কাউন্সিলের পর গত দুই দিনে কোনো পর্যায়ের নেতা বা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেননি খালেদা জিয়া। এমনকি বিদেশি ডেলিগেটদের সৌজন্য সাক্ষাতের সময় রোববার (২০ মার্চ) খালেদা জিয়ার বাসায় যাওয়া ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দুই উপদেষ্টা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও রিয়াজ রহমান এবং কাউন্সিলের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ কমিটির আহ্বায়ক শফিক রেহমানের সঙ্গে কমিটি গঠন নিয়ে কোনো আলোচনা করেননি।
সূত্রমতে, ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম কাউন্সিলের পর যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে বিভিন্ন কমিটির নাম ঘোষণা করেছিলেন খালেদা জিয়া, এবারও একই প্রক্রিয়ায় কমিটি ঘোষণা করবেন তিনি। আর এ জন্য নেতাদের অপেক্ষা করতে হবে আরো কিছু দিন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাউন্সিলের জন্য গঠিত আপ্যায়ন উপ কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, নতুন কিছু হবে না। গতবার যা হয়েছে, এবারও তাই হবে। কাউন্সিলররা ম্যাডামের ওপর আস্থা রেখেছেন। ম্যাডাম ধাপে ধাপে কমিটি ঘোষণা করবেন। যোগ্য নেতারা নেতৃত্ব পাবেন। আপাতত তিনি বিশ্রামে আছেন। কয়েকদিন পরেই হয়তো কমিটি দেওয়া শুরু করবেন।
বাংলাদেশ সয়: ০৭৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৬
এজেড/জেডএম