ঢাকা: কাকতালীয় হলেও দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতৃত্ব এখন উত্তরবঙ্গের হাতে। দলটির চেয়ারপারসন, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, মহাসচিব ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদে আসীন নেতারা যথাক্রমে দিনাজপুর, বগুড়া, ঠাকুরগাঁও ও কুড়িগ্রামের সন্তান।
এছাড়া যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মনোনীত আরো চার নেতা উত্তরবঙ্গের জেলা চাপাইনবাবগঞ্জ, রংপুর, নাটোর ও লালমনিরহাটের লোক।
অর্থাৎ চেয়ারপারসন, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, মহাসচিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, ২ জন যুগ্ম মহাসচিব ও ২ জন সাংগঠনিক সম্পাদকসহ এ পর্যন্ত ঘোষিত ২০টি পদের মধ্যে অন্তত ৮টি পদেই রয়েছে উত্তরবঙ্গের আধিপত্য।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান গোপালগঞ্জকে যেমন আওয়ামী লীগের পিতৃস্থান বলা হয়, ঠিক তেমনি এরপর থেকে উত্তরবঙ্গকে বলা হতে পারে বিএনপির পিতৃস্থান!
পৈত্রিক ভিটা ফেনির ফুলগাজী হলেও খালেদা জিয়া জন্মস্থান সূত্রে দিনাজপুরের লোক। দেশ বিভাগের আগে ১৯৪৫ সালে দিনাজপুর জেলার জলপাইগুড়িতে তার জন্ম।
১৯৪৭ সালে দেশভাগ হলে জলপাইগুড়ি ছেড়ে খালেদা জিয়ার বাবা ইস্কান্দার মজুমদার দিনাজপুর শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দিনাজপুরেই কেটেছে খালেদা জিয়ার।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন খালেদা জিয়া। গত ১৯ মার্চ দলটির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে পুনরায় দলের চেয়াপারসন নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চর্চা না থাকা এবং গঠনতান্ত্রিকভাবে দলের সকল ক্ষমতা চেয়াপারসনের ওপর ন্যস্ত থাকায় খালেদা জিয়ার হাতেই নিয়ন্ত্রিত হয় বিএনপির ভাগ্য।
তারেক রহমানের পৈত্রিক ভিটা উত্তরবঙ্গের জেলা বগুড়ায়। গত দেড় দশক ধরে বিএনপির রাজনীতি অনেকটা তার হাতেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।
২০০২ সালে তারেক রহমান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মনোনিত হন। ২০০৯ সালের কাউন্সিলে তাকে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়। গত ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে ফের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মনোনীত হয়েছেন তিনি।
খালেদা জিয়ার পর বিএনপির দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি তারেক রহমান। লন্ডনে বসেই দল নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। দলে তার একচ্ছত্র আধিপত্য। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের অন্যতম রোল মডেল তারেক রহমান জন্মসূত্রে উত্তরবঙ্গেরই লোক।
জিয়া পরিবারের হাতেই থাকবে বিএনপির নেতৃত্ব- আপাতত এ বাস্তবতা মেনেই দলটির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে হয় সবাইকে। খালেদা জিয়া-তারেক রহমান বর্তমান থাকা অবস্থায় চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে অন্য কারো যাওয়ার সুযোগ একেবারেই ক্ষীণ।
সুতরাং খালেদা-তারেক যতোদিন রাজনীতিতে আছেন ততোদিন বিএনপির এক ও দুই নম্বর পদ উত্তরবঙ্গের হাতেই থাকার কথা।
তবে মহাসচিব ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদ দেশের অন্য অঞ্চলে যাওয়ার সুযোগ ছিল। এবারের কাউন্সিলের আগে মহাসচিব পদে কুমিল্লার ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও যশোরের তরিকুল ইসলামের নাম আলোচনায় ছিল।
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদে নোয়াখালীর মো. শাহজাহান, ঢাকার আমান উল্লাহ আমান ও মুন্সীগঞ্জের ড. আসাদুজ্জামান রিপনের নাম আলোচনায় ছিল।
শেষ পর্যন্ত সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মহাসচিব হিসেবে মনোনীত হন উত্তরবঙ্গের সীমান্ত জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আর সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে মনোনীত হয়েছেন উত্তরবঙ্গের আরেক সীমান্ত জেলা কুড়িগ্রামের রুহুল কবির রিজভী।
খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পর সাংগঠনিক দিক দিয়ে তারা দু’জনই বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তাদের মধ্যে যুগ্ম মহাসচিব পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে এ পদে নজরুল ইসলাম খান, আব্দুল্লাহ আল নোমান, মির্জা আব্বাসের মতো হাইপ্রোফাইল নেতারা দায়িত্ব পালন করেছেন।
শনিবার (০৯ এপ্রিল) ঘোষিত ৭ যুগ্ম মহাসচিবের মধ্যে ১টি পেয়েছেন উত্তরবঙ্গের চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার হারুনুর রশিদ, আরেকটি পেয়েছেন রংপুরের হাবীব উন নবী খান সোহেল। অর্থাৎ ৭টির মধ্যে দু’টিই গেছে উত্তরবঙ্গে।
এছাড়া নাটোরের রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ও লালমনিরহাটের আসাদুল হাবিব দুলু বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপির রাজনীতিতে কোনো আঞ্চলিক ইজম নেই। যোগ্য লোক যে এলাকারই হোন, তিনি দায়িত্ব পাবেন এবং দলের জন্য কাজ করবেন। নেতৃত্ব বণ্টনের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো অঞ্চল বা এলাকাকে প্রাধান্য দেওয়া হয় না। যেটা হয়েছে, সেটা কাকতালীয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৬
এজেড/এএসআর