ঢাকা: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার প্রধান আসামি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থনে আদালতে যাচ্ছেন। রোববার (১৭ এপ্রিল) সকালেই আদালতে হাজির হওয়ার কথা রয়েছে তার।
বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া সকালে বাংলানিউজকে এ কথা জানিয়েছেন। এর আগে, শনিবারও তিনি বলেছিলেন, সকাল সাড়ে ১০টায় নির্ধারিত সময়েই আদালতে হাজির হবেন খালেদা জিয়া।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলা দু’টির বিচারিক কার্যক্রম চলছে রাজধানীর বকশিবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের অস্থায়ী আদালতে।
গত ৭ এপ্রিল জামিনে থাকা তিন আসামির আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন ধার্য থাকলেও খালেদা জিয়া হাজির না হয়ে আইনজীবীদের দিয়ে সময়ের আবেদন জানান। এ আবেদন মঞ্জুর করে ১৭ এপ্রিল দিন পুনর্নির্ধারণ করে তাকে হাজির থাকার আদেশ দেন আদালত।
ওইদিন জামিনে থাকা অন্য দুই আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে বক্তব্য দেন। তারা কোনো সাফাই সাক্ষী দেবেন না এবং পরে লিখিত বক্তব্য দেবেন বলেও জানান।
গত ৩১ মার্চ ৩২তম ও শেষ সাক্ষী তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর রশিদকে আসামিপক্ষের জেরার মধ্য দিয়ে শেষ হয় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা।
অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদকে আসামিপক্ষের জেরা চলছে। অসমাপ্ত জেরা ও নতুন সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণের দিনও ধার্য রয়েছে রোববার।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় মোট আসামি চারজন। অন্য আসামি খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামি মোট ছয়জন। খালেদা ছাড়া অন্য পাঁচজন হচ্ছেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান। আসামিদের মধ্যে ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক, বাকিরা জামিনে আছেন।
২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করা হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।
অন্যদিকে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।
দুই মামলারই বাদী হলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।
জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।
২০১৪ সালের ১৯ মার্চ এ দুই দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ঢাকা তৃতীয় ও বিশেষ জজ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়।
খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে চার্জ গঠন করা হয় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর আট আসামির বিরুদ্ধেও।
২০১৪ সালের ৭ মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন মামলা দু’টির বিচারিক কার্যক্রম ঢাকার মেট্রোপলিটন দায়রা জজ আদালত ভবনের পরিবর্তে ঢাকা মহানগরের বকশীবাজার এলাকার কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালত ভবনে চালানোর আদেশ জারি করে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৬
এমআই/এইচএ/এএসআর
**আত্মপক্ষ সমর্থনে আদালতে যাচ্ছেন খালেদা, কড়া নিরাপত্তার চাদর