ঢাকা: বিএনপির নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী সরকারের হাতেই রয়েছেন বলে দাবি করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।
সোমবার (১৮ এপ্রিল) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ দাবি করেন।
ফোরামের সভাপতি এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ-সম্পাদক মোহন মিয়ার সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির বিদায়ী স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিদায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। এছাড়াও অতিথি ছিলেন ছাত্রদল সভাপতি রাজিব আহসান।
সভার প্রধান বক্তা রিজভী বলেন, টিপাইমুখ বাঁধ বন্ধের আন্দোলনের মূল নায়ক ছিলেন ইলিয়াস আলী। এজন্য সরকার তাকে চরম ভয় পেতো। তাই তাকে সাদা পোশাকে ডিবি পরিচয়ে বাসা থেকে তুলে নেয় সরকার বাহিনী। এটা শেখ হাসিনার নির্দেশেই হয়েছে। তিনিই জানেন ইলিয়াস আলী এখন কোথায় আছে? তিনি চাইলে যেকোনো সময় ইলিয়াস আলীকে ফেরানো সম্ভব।
ইলিয়াস আলীর খোঁজ দাবিতে আন্দোলন হঠাৎ বন্ধ হওয়ার সমালোচনা করে রিজভী বলেন, তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে হরতালসহ বিএনপির কঠোর আন্দোলন চলছিলো। এর ফলে দেশ-বিদেশে সব জায়গা থেকেই সরকারের ওপর চাপ আসছিলো। কিন্তু সেসময় পুলিশ আমাকে গ্রেফতারের পর আন্দোলন থেমে গেলো। নেতাদের কাছে আজও আমার প্রশ্ন, কেন আন্দোলন থেমে গেলো। যদি আন্দোলন থেমে না যেতো, তবে আমরা তাকে ফিরে পেতামই। এই থেমে যাওয়া বিএনপির আন্দোলন এখন ক্রমান্বয়ে এসিকক্ষে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
সাংবাদিক শফিক রেহমানের গ্রেফতারের প্রতিবাদে তিনি বলেন, তিনি আগা-গোড়া একজন সাংবাদিক। তিনি গোলাপ ফুল ভালোবাসেন। সবাইকে ফুল উপহার দেন। আমাদের ক্লাসিক সিনেমা দেখান। বিনা দোষে ৭০ বছর বয়সীকে এই মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিদেশে পড়াশোনা করে বিশেষ শিক্ষিত প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীয় ওয়াজেদ জয়ও তাকে অপমান করেছেন। এতেই বোঝা যায় দেশের কোনো মানুষ নিরাপদ নয়, পুরো দেশ নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। এই সরকার জনগণকে ত্যাগ করেছে। তনু হত্যা, ব্যাংকে টাকা চুরিসহ রাষ্ট্রের কাঠামো বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
রিজভী বলেন, শফিক রেহমানের গ্রেফতার বিএনপির প্রতি নয়, বুদ্ধিজীবী ও স্বাধীন মত প্রকাশকারীদের এই বার্তা দিচ্ছে, সরকারের বিরুদ্ধে কোনো সমালোচনা করা যাবে না। সমালোচনা করলেই শফিক রেহমানের মতো আসিফ নজরুল, মাহফুজউল্লাহ, নুরুল কবিরদেরও গ্রেফতার করা হবে। সরকারের বিষয়ে যেন কেউ আর এক পা না এগোয়। কেউ এক পা এগোলে তারও এই দশা হবে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ইলিয়াস আছেন নাকি নেই, আমরা কেউ বলতে পারবো না। এটা জানেন একমাত্র স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ইলিয়াস আলীকে কতদূরে রেখেছেন, মাটির নিচে নাকি উপরে রেখেছেন, তা তিনিই কেবল জানেন। সরকার তাকে চরমভাবে ভয় পেতো বিধায় নিখোঁজ করা হয়েছে। একদিন আমাদেরও এই দশা হবে।
দলের আন্দোলনের ব্যাপারে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সারাদেশের মানুষ ইলিয়াস আলীকে ভালোবাসলেও সিলেটের কিছু লোক তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতো। ছাত্রজীবনে করেছে, এখনো করছে, ফলে বিএনপির আন্দোলনটা হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেছে। কেন বন্ধ হলো, এটা নিয়ে দলের কাছে আমারও প্রশ্ন।
তিনি বলেন, ইলিয়াস পতাকার নেতা নয়, রাজপথের নেতা ছিলেন। তাই তিনি জাতীয় নেতা হয়েছেন। এখন আন্দোলন করে নেতা হয়েছেন এমন সংখ্যা দলে কমে গেছে। আমরা রাজনৈতিক পদ খুঁজি, কিন্তু আন্দোলনের নেতা খুঁজে পাই না।
আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, কর্তৃত্ববাদী সরকার ইলিয়াস আলীকে ভয় পেতো, তাই তাকে নিখোঁজ করেছে। তার আন্দোলনকে থামাতে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে।
দেশের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। সেজন্য রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হবে। এই সরকার পেছনের দরজা দিয়ে পালাবে। আমরা যদি সঠিকভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে আঘাত করতে পারি তাহলে জয় হবেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্ট, এপ্রিল ১৮, ২০১৬/আপডেট ১৭১০ ঘণ্টা
এমআই/এএনজি/এইচএ/