ঢাকা: জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় মূল্যবোধের স্লোগান তুলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিশেষ ‘সুবিধা’ পেয়ে আসা বিএনপির সঙ্গে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না!
কওমী মাদ্রাসা ভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের দূরত্ব কমার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যাচ্ছে বিএনপির দূরত্ব। ফলে, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে পাওয়া সমর্থন ও সহযোগিতা দিন দিন সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে বিএনপির জন্য।
বিষয়টি নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব দুঃচিন্তায় পড়লেও কৌশলগত কারণে এ ব্যাপারে সভা-সমাবেশ, সেমিনার, আলোচনা সভা ও ঘরোয়া বৈঠকে কেউ কোনো কথা বলছেন না।
এমনকি হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সরকারের প্রকাশ্য ঘনিষ্ঠতা নিয়েও কথা বলছেন না বিএনপি নেতারা। বরং এক সময়ের ‘পরম বন্ধু’ হেফাজতসহ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে তলে তলে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে!
সূত্রমতে, তিন বছর আগে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা হেফাজতে ইসলামের ‘ব্যাপক জনসমর্থন’ কাজে লাগিয়ে সেই সময় সরকারের ভিত কাঁপিয়ে দিতে চেয়েছিল বিএনপি। প্রাথমিক অবস্থায় এ কাজে তারা কিছুটা সফলও হয়েছিল।
কিন্তু ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর একটু একটু করে দৃশ্যপট বদলাতে শুরু করে। জোটে থাকা শরিক দলগুলোর ব্যাপারে বিএনপির উদাসীন ভাব ও উগ্রবাদ দমনে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে বিএনপির সঙ্গে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার কৌশল নেয় ধর্মভিত্তিক দলগুলো।
চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে বেরিয়ে যায় ২০ দলীয় জোটের তৃতীয় বৃহত্তর দল ইসলামী ঐক্যজোট।
সূত্রমতে, কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক রাজনৈতিক এ দলটির সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার আগেই আহমেদ শফি নেতৃত্বাধীন হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব তৈরি হয়।
বিএনপির বেশিরভাগ নেতা মনে করেন, শাপলা চত্বরের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা থেকে আত্মরক্ষা ও সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের ফলে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে বিএনপির।
২০১৫ সালের বছর ১১ এপ্রিল এক সমাবেশে হেফাজতের আমির আহমেদ শফি বলেন, আওয়ামী লীগ, সরকার ও ছাত্রলীগ আমাদের শত্রু নয়, বন্ধু। তার এই বক্তব্যের পরই মূলত, বিএনপির সঙ্গে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর ফাটলের সূচনা হয় বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
কারণ, কওমী মাদ্রাসা কেন্দ্রিক গড়ে ওঠা ইসলামিক দলগুলোর মূল নিয়ন্ত্রক হচ্ছে আহমেদ শফি নেতৃত্বাধীন হেফাজতে ইসলাম। ধর্মভিত্তিক ছোট ছোট রাজনৈতিক দলের বেশিরভাগ শীর্ষ নেতাই হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত।
সূত্রমতে, সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকবে কিনা-? এ ইস্যুতে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো সম্প্রতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে আশায় বুক বাঁধে বিএনপি। এই সুযোগে হেফাজতে ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে সচেষ্ট হয় তারা।
কিন্তু আদালতের রায়ে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল থাকায় সে সুযোগও হাতছাড়া হয় বিএনপির।
এর কয়েকদিন পর ব্যক্তিগত জীবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধর্মপালন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে হেফাজতের আমির আহমেদ শফি বলেন, হাসিনা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। তাহজুত নামাজও আদায় করেন। তিনি আস্তিক। আমরাও আস্তিক। তার সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। আমাদের বিরোধ নাস্তিকদের সঙ্গে।
প্রধানমন্ত্রীও নববর্ষের অনুষ্ঠানে সাফ জানিয়ে দেন, প্রগতিশীলতা ও মত প্রকাশের নামে ধর্মের ওপর আঘাত মেনে নেওয়া যাবে না।
মূলত হেফাজতের আমির আহমেদ শফি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বক্তব্যের পর বিএনপি নেতারা ধরেই নিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই মুহূর্তে চমৎকার সম্পর্ক বিরাজ করছে। এ অবস্থায় অদূর ভবিষ্যতে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে বিশেষ কোনো সুবিধা পাওয়া যাবে না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বিশেষ কোনো দল, গোষ্ঠী বা সংগঠনের সমর্থন-সহযোগিতার ওপর বিএনপি নির্ভরশীল নয়। বিএনপির মূল শক্তি হলো জনগণ।
শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে দলের প্রতিনিধি হয়ে যোগ দেওয়া বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের যৌক্তিক দাবির প্রতি আমাদের সমর্থন ছিল এবং থাকবে। আশা করি জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে মাঠে নামলে অতীতের মতো ভবিষ্যতেও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির পাশে এসে দাঁড়াবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০২ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৬
এজেড/পিসি