ঢাকা: কূটনৈতিক কোরের নিষ্ক্রিয়তার কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছে বিএনপির বিদেশনীতি। আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে যোগাযোগও অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে।
ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশি মিশন, দূতাবাস বা হাইকমিশনের কর্তাব্যক্তি তো বটেই, বাংলাদেশ সফরে আসা বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান এমনকি মন্ত্রীরাও সাক্ষাৎ করছেন না বিএনপি'র চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে।
সর্বশেষ বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী জাবের আল মুবারক-আল হামাদ-আল সাবাহ ও যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালও বিএনপি প্রধানের সঙ্গে দেখা করেননি।
তবে এর দায় নিতে রাজি নন বিএনপির কূটনৈতিক কোরের সদস্যরা। তারা বলছেন, বিদেশি ডেলিগেটদের পেছনে পেছনে ঘুরে সৌজন্য বৈঠকের ব্যবস্থা করা তাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে না।
বিষয়টি নিয়ে দলটির কূটনৈতিক কোরের সদস্য রিয়াজ রহমান, ড. আব্দুল মঈন খান, ড. এম ওসমান ফারুককে ফোন করলে রিসিভ করেননি তারা।
তবে কূটনৈতিক কোরের আরেক সদস্য সাবিহ উদ্দীন আহমেদ রোববার (০৮ মে) বাংলানিউজকে বলেন, কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী জাবের আল মুবারক-আল হামাদ-আল সাবাহ ও যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালকে জিজ্ঞেস করুন, কেন তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করলেন না। আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন?
সূত্রমতে, বিএনপির কূটনৈতিক কোরের নিষ্ক্রিয়তা, যোগাযোগ ও সমন্বয়হীনতার কারণে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর ঢাকা সফরও ঝুলে আছে।
দশম জাতীয় সংসদ (০৫ জানুয়ারি ২০১৪) নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে এই অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর মধ্যস্ততায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি এক টেবিলে বসে।
সে সময় আওয়ামী লীগের কাছ থেকে মৌখক প্রতিশ্রুতি মেলে, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন করলেও দ্রুত আরেকটি নির্বাচনের আয়োজন করবে তারা।
কিন্তু অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে বাংলাদেশ সফরে এনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আরেকটি বৈঠক ও দ্রুত নির্বাচনের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার কাজটিও করতে পারছে না বিএনপি।
কারো কারো মতে, কূটনৈতিক কোরের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে বিদেশি ডেলিগেট আনতে পারেনি বিএনপি। কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুই জন ও যুক্তরাজ্য থেকে দুই জন ডেলিগেট বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলে যোগ দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিএনপির কূটনৈতিক কোরের দায়িত্বে যারা আছেন তাদের ‘নাক উচো’ ভাবই আন্তর্জাতিক মহলের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে বিএনপিকে।
অভিযোগ রয়েছে, বিদেশি মিশনগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ, কোনো সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের বাংলাদেশ সফরের আগে সে দেশের পররাষ্ট্র দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করার কাজটি মোটের উপর করতে চান না কূটনৈতিক কোরের সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, রিয়াজ রহমান, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ ও ড. ওসমান ফারুক।
দলের বেশিরভাগ নেতা মনে করেন, অতীতে এই জায়গায় দায়িত্বপালন করা শমসের মবিন চৌধুরী দল ত্যাগ করার পরই আন্তর্জাতিক মহলের কাছে গুরুত্ব হারায় বিএনপি।
অভিজ্ঞ এই কূটনীতিকের জোর প্রচেষ্টার ফলেই অতীতে বাংলাদেশ সফরে আসা সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা সিডিউল এবং প্রটোকলের বাইরে গিয়েও সরকার এমনকি সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
এছাড়া দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০১৪ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে খালেদা জিয়ার বাসায় গিয়ে বৈঠক করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালও।
কিন্তু এরপর দুইদফা বাংলাদেশ সফরে এলেও ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রভাবশালীমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি।
বিএনপির ‘পরমবন্ধু’ মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিধর দেশ কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী জাবের আল মুবারক-আল হামাদ-আল সাবাহ সম্প্রতি বাংলাদেশে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেননি।
সন্ত্রাস দমনে যৌথভাবে কাজ করার মিশন নিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসা এসব বিশ্বনেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা না করার পেছনে বিশেষ কোনো কারণ আছে কিনা? জানতে চাইলে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন বিএনপির কূটনৈতিক কোরের অন্যতম সদস্য সাবিহ উদ্দিন আহমেদ।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘একটা সৌজন্য বৈঠকের (কার্টিসি কলঅন) জন্য আমি কি তাদের পেছনে পেছনে ঘুরবো?’
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৩ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১৬
এজেড/এমএ