ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

বিএনপির সঙ্গে কোনো সমস্যার সমাধান করবে না ভারত

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০১ ঘণ্টা, মে ৭, ২০১৭
বিএনপির সঙ্গে কোনো সমস্যার সমাধান করবে না ভারত মেজর অব. হাফিজ উদ্দিন। ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল

মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম। সাবেক পানি সম্পদ মন্ত্রী। ছয় বারের সংসদ সদস্য। বর্তমানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান।পানি সম্পদ মন্ত্রী থাকা অবস্থায় ভারতের সঙ্গে ৫৪ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছেন তিনি। যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে পানির ন্যায্য হিস্যার জন্য ভারত সরকারের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে বাকযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন বার বার। শুধু পানি নয়, ভারতের সঙ্গে অমিমাংসিত অনেক বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন। অভিজ্ঞতা থেকে মনে করেন, বিএনপির সঙ্গে কোনো সমস্যার সমাধান করবে না ভারত।

সম্প্রতি বনানীর বাসায় তার একান্ত স্বাক্ষাৎকার নেন বাংলানিউজের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট আসাদ জামান। ছবি তুলেছেন বাংলানিউজের সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট দেলোয়ার হোসেন বাদল

নিচে সাক্ষাতকারের দ্বিতীয় কিস্তির চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।

বাংলানিউজ: আওয়ামী লীগের হাতে ছিটমহল সমস্যার সমাধান ও সমুদ্রসীমা জয় হয়েছে। সুতরাং জনগণ তো বিশ্বাস করতেই পারে, তিস্তা সমস্যার সমাধান আওয়ামী লীগের হাতেই হবে….

মেজর (অব.) হাফিজ: ছিটমহল তো ১৯৫৪ সালের চুক্তি। তারা (ভারত) দেরি করেছে। বাংলাদেশের সব সরকারই তাদের চাপ দিয়েছে। অবশেষে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এসে তারা এটা করেছে। এটা তো আগেরই চুক্তি। আর সমুদ্র সীমার ব্যাপারে তারা (আওয়ামী লীগ) যে সিদ্ধান্ত এনেছে, সেটার কৃতিত্ব সব সরকারই দাবি করে। সমুদ্র জরিপের জন্য বিএনপি সরকারের আমলে জাহাজ কেনা হয়েছে।

বিএনপি এলে তিস্তা সমস্যার আংশিক সমাধান হবে

বাংলানিউজ: তার মানে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিস্তা চুক্তি হবে না?
 
মেজর (অব.) হাফিজ: হলেও দুর্বল চুক্তি হবে। অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনে একটা মাত্র ভালো চুক্তি আছে, যেটা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। ১৯৭৭ সালে করা ওই চুক্তিতে গ্যারান্টি ক্লজ আছে। বাংলাদেশ কতটুকু পানি পাবে তার নিশ্চয়তা আছে। পরবর্তী সময় শেখ হাসিনা ও এরশাদের আমলে যে চুক্তি হয়েছে, সেগুলোর কোনোটাতেই গ্যারান্টি ক্লজ নেই।  

বাংলানিউজ: বিএনপি বরাবরই বলে থাকে, ভারতকে সব কিছু দিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। যদি একটু ব্যাখা করেন- ভারতকে কী কী দিলো তারা?

মেজর (অব.) হাফিজ: যেমন ট্রানজিট দিয়েছে। তিতাস নদী বন্ধ করে তাদের গাড়ি যাওয়ার রাস্তা করে দেওয়া হয়েছে। তার বিনিময়ে তো আমরা কিছু পাইনি। এটার বিনিময়ে আমরা বিদ্যুৎ পেতে পারতাম। দীর্ঘদিন ধরে তারা নৌপথ ট্রানজিট পাচ্ছে। সেখানে মাশুল পাওয়ার কথা-আমরা পাইনি। মেজর (অব.) হাফিজ  উদ্দিন।  ছবি: বাদল

তারপর উত্তর ভারতের স্বাধীনতাকামী নেতাদের আমরা হ্যান্ডওভার দিচ্ছি। তার বিনিময়েও তো কিছু পেতে পারতাম। পানি পেতে পারতাম, বিদ্যুৎ পেতে পারতাম, টিপাইমুখ বাঁধের ব্যাপারে একটা প্রতিশ্রুতি পেতে পারতাম-তারা এটা নির্মাণ করবে না।

বাংলানিউজ: পানি পাওয়ার জন্য এখন আমাদের করণীয় কী?

মেজর (অব.) হাফিজ: ভারতের সঙ্গে আমাদের স্বার্থ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তবে আমাদের প্রধান সমস্যা পানি। পানি দিয়ে দিলেই তাদের সঙ্গে আমাদের আর কোনো সমস্যা থাকে না। আর এই পানি পেতে গেলে অবিলম্বে জাতিসংঘের ১৯৯৭ কনভেনশনে স্বাক্ষর করা দরকার। তার পর দরকষাকষি চলুক।

বাংলানিউজ: এতে কী লাভ হবে?

মেজর (অব.) হাফিজ: ভারত আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তাদের একটা ক্লিন ইমেজ দেখাতে চায়। তারা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্য পদ পেতে চায়। সুতরাং তারা প্রতিবেশীর উপর অত্যাচার করে- আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই বিষয়টি জানাজানি হলে, তাদের উপর চাপ সৃষ্টি হবে। তারা বাধ্য হবে পানি দিতে।

বাংলানিউজ: স্বাধীনতার পর সব চেয়ে বেশি সময় ধরে বিএনপি ক্ষমতায় ছিলো। ভারতের সঙ্গে অমিমাংসিত কোনো সমস্যার সমাধান হয়েছে বিএনপির আমলে?

মেজর (অব.) হাফিজ: আমাদের সময় হয়নি, হবেও না। ভারত বিএনপির সঙ্গে কোনো সমস্যার সমাধান করবে না। কারণ, বিএনপি কোনো অন্যায্য চুক্তি মানবে না। বিএনপি জনগণের স্বার্থ রক্ষার জন্য স্বচেষ্ট। ভারত তাদের পেশি শক্তি দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতে চায়। এ জন্য এদের সঙ্গে কোনো চুক্তি হবে না।

বাংলানিউজ: বিজেপি ভারতের ক্ষমতায় আসার পর বিএনপির মধ্যে উল্লসিতভাব লক্ষ্য করা গেছে…..

মেজর (অব.) হাফিজ: নিম্ন স্তরের কর্মীদের মধ্যে দেখা যেতে পারে। যারা ভারতের সঙ্গে ডিল করেছে; দেশ চালিয়েছে তাদের মধ্যে উল্লসিতভাব আসার কথা না। কারণ, তারা জানে ভারতের মনোভাব কী। আরেকটি বিষয় হলো ভারত নেতাদের মধ্যে দেশপ্রেম আছে। তারা জাতীয় স্বার্থের ব্যাপারে এক থাকে। বাংলাদেশের নেতাদের মতো না।
চলবে ....

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘণ্টা, মে ৭, ২০১৭
এজেড/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।