ঢাকা, সোমবার, ১৮ ভাদ্র ১৪৩১, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৭ সফর ১৪৪৬

বিএনপি

কোন ফর্মুলায় ময়মনসিংহ বিএনপি’র কমিটি?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৯ ঘণ্টা, মে ৭, ২০১৭
কোন ফর্মুলায় ময়মনসিংহ বিএনপি’র কমিটি? ময়মনসিংহের বিএনপি নেতারা

ময়মনসিংহ : এক সময় ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অধ্যাপক আবুল কাশেম। এরপর রাজনীতিতে দীর্ঘ বিরতি দিয়ে ২০০৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে দলীয় কাউন্সিলে আবারো সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়ে হজ করতে চলে যান সৌদি আরবে!

কিন্তু তারপর হতাশায় যারপরনাই দলীয় রাজনীতি থেকে ছিলেন দূরে দূরে। দু’দফায় সরকার হটানোর ব্যর্থ আন্দোলনেও তার পাত্তা মেলেনি।

প্রায় ৮ বছর পর এবার ময়মনসিংহ দক্ষিণ  জেলা বিএনপি’র নতুন কমিটিতে সভাপতি পদপ্রার্থী হিসেবে এ নেতার নাম আলোচনার টেবিলে তুলেছে একটি পক্ষ।

সাংগঠনিকভাবে ‘সোজা’ হয়ে দাঁড়ানোর কঠিন চ্যালেঞ্জের সময়ে এতোদিন ‘গা বাঁচিয়ে’ দূরে থাকা নিষ্ক্রিয় এ নেতাকে নিয়ে দলের ছোট্ট একটি পক্ষের অবিরাম ‘লম্ফঝম্ফ’ নিয়ে রীতিমতো প্রশ্ন উঠেছে দলীয় পরিমণ্ডলেই। অবশ্য এ প্রশ্নের আড়ালেও রয়েছে বড় একটি ‘কিন্তু’!

দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় একটি পক্ষকে কৌশলে ‘সাইজ’ করতেই ওই পক্ষটি তাদের স্বার্থেই তাকে ‘ট্রাম্প কার্ড’ হিসেবে ব্যবহার করছেন, এমন গুঞ্জনও রয়েছে।

দক্ষিণ জেলার এ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ.কে.এম.মোশাররফ হোসেনের সৎ ছোট ভাই ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বাবলু ওরফে ক্লাসিক বাবলু। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসন থেকে দলীয় প্রার্থী হবার মধ্যে দিয়ে রাজনীতিতে তার ‘হাতেখড়ি’।

আছেন মুক্তাগাছা উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি পদেও। মাঠ রাজনীতি বিমুখ নীতির কারণেই তার সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা চেয়ারম্যান জাকারিয়া হারুনের সঙ্গেও সম্পর্ক বেশ তিক্ততার।

ভাইয়ের সুবাদে রাজনীতিতে জাকির হোসেনের উত্থান হলেও এখন নেতৃত্বে তাকেই ‘মাইনাস’ করতে ‘ছক’ কষেছেন।  

বিগত আন্দোলনের সময়ে দেশের বাইরে থাকলেও দেশে ফিরেই বিমানবন্দরে গ্রেফতার হয়ে কারাবরণের জেরে তার নামের পাশে ‘ত্যাগী’ এবং ‘সক্রিয়’ টাইটেল বসিয়ে দিয়েছেন তার বলয়ের লোকজন।

স্বল্প সময়ের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে দল তাকে অনেক মূল্যায়নের পরও তুষ্ট নন তিনি। জেলার শীর্ষ পদটিও এখন ‘বগলদাবা’ করতে চান। আর গোল বেঁধেছে এতেই, মত তৃণমূলের একাধিক দলীয় কর্মীর।

আর তাই কীনা দলের বর্ষীয়ান সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী শামসুদ্দিন আহম্মেদ ও সাবেক ছাত্র নেতা ফকরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চুকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করতে ইতোমধ্যেই হাইকমান্ডের কাছে জোর সুপারিশ করেছেন দক্ষিণের ১১ টি ইউনিটের ২৪ জন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে ১৭ নেতা।

সুপারিশ সম্পর্কিত এমন তথ্য কোতোয়ালী বিএনপি সভাপতি কামরুল ইসলাম ওয়ালিদ ও ত্রিশাল উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিনসহ পদধারী বেশ কয়েক নেতার।

সূত্রমতে, ফকরুদ্দিন বাচ্চু আন্দোলন, দমন-পীড়নের সময়ে মাঠে থেকে ক’বার গুলিবিদ্ধ হবার পাশাপাশি কারাবরণ ও দু:সময়ে বিপদগ্রস্ত দলীয় কর্মীদের পাশে থাকলেও কেন্দ্রের নির্বাহী কমিটিতে তার ঠাঁই হয়নি।

ফলে দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ এ নেতাকে জেলা কমিটিতে পুরস্কৃত করা কেন্দ্রেরই দায়িত্ব বলে মনে করেন ভালুকা পৌর বিএনপি সভাপতি আলহাজ গিয়াস উদ্দিন।  

চলমান বাস্তবতায় খোদ দলীয় পরিমণ্ডলেই প্রশ্ন উঠেছে, এবার কোন ফর্মুলায় হতে যাচ্ছে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা ও মহানগর বিএনপি’র নতুন কমিটি। এতোদিন রাজনীতি থেকে দূরে থাকা, একেবারেই নিষ্ক্রিয়, মাঠ রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ ও ব্যর্থ নেতারাই কী নেতৃত্বে আসছেন?

না কী দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় নিজেদের গড়ে তোলা, আন্দোলন-সংগ্রামে জীবনবাজি রাখা নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে এমন জল্পনাও চলছে দলের অন্দরে-বাহিরে।

জানা যায়, ২০০৯ সালের শেষের দিকে কাউন্সিলে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন এ.কে.এম.মোশাররফ হোসেন ও আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ। সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হন সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোশাররফ। কিন্তু কেন্দ্রের বদলে তিনি জেলার এ পদেই বহাল থাকতে আগ্রহী।  

তবে তার বিকল্প হিসেবে রাজনীতি থেকে অনেক আগেই হারিয়ে যাওয়া মুখ অধ্যাপক আবুল কাশেমকে সভাপতি হিসেবে বের করে আনতে গুলশানে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন ছোট ভাই জাকির হোসেন বাবলু, বিতর্কিত ভূমি ব্যবসায়ী মোর্শেদ আলমের নেতৃত্বাধীন একটি সিন্ডিকেট। তাদের সঙ্গে রয়েছেন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের গুটিকয়েক নেতা।

তলে তলে তাকে নিয়ে নিজের বলয়ের এমন কুটকৌশল ফাঁস হয়ে যাওয়ায় ক্ষোভের অনলে পুড়ছেন তিনি। এ বিষয়ে কৌশলে সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ.কে.এম.মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন অধ্যাপক আবুল কাশেম রাজনীতিতে ছিলেন না। হাইকমান্ড তাকে সভাপতি পদে আনবে বলে আমার মনে হয় না। অন্তত কেন্দ্র আমাকে এ সম্পর্কে কোন তথ্য দেয়নি।

নিজের ছোট ভাই’র সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সভাপতি পদে আছি। বাবলুকে উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি করেছি। ওর আর পদের দরকার নেই।

তবে অভিযোগের বিষয়ে ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বাবলু’র সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সূত্রমতে, দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ এবার মহানগর বিএনপি’র সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন।

নরম-গরম স্টাইলে দু’দফা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া, দলীয় কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্কের সেতুবন্ধন রচনা করা নব্বই দশকের মাঠ কাঁপানো এ ছাত্র নেতা আশাবাদী আন্দোলন-সংগ্রামে তার ভূমিকা মূল্যায়ন করবে দলীয় হাইকমান্ড।

এ পদে আবারো প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান শহর বিএনপি’র সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম। দীর্ঘ সময় পদে থেকেও শহর বিএনপি’র পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও ওয়ার্ড কমিটি সচল করতে না পারার ব্যর্থতা রয়েছে তার এ আগ্রহের বিপরীতে।

আর সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হিসেবে বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলী, দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক এ.কে.এম.মাহাবুবুল আলম, সাবেক ছাত্র নেতা অ্যাডভোকেট মাসুদ তানভীর তান্না’র নাম আলোচনায় রয়েছে।

কোন ফর্মুলায় দক্ষিণ জেলা ও মহানগর বিএনপি’র নতুন কমিটি হচ্ছে এ প্রশ্নের জবাবে দলটির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বাংলানিউজকে বলেন, আন্দোলন-সংগ্রামের ভূমিকা মূল্যায়ন করেই নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হবে। প্রার্থীদের সবাই ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করেছেন। তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, মে ৭, ২০১৭
এমএএএম/জেডএম

 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।