ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

ভিশন ২০৩০ নিয়ে যতো দ্বিধা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪০ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৭
ভিশন ২০৩০ নিয়ে যতো দ্বিধা খালেদা জিয়া ও বিএনপির লোগো

ঢাকা: বহুল উচ্চারিত ও আলোচিত  ভিশন ২০৩০ খোদ বিএনপি মহলেই সৃষ্টি করেছে দ্বিধা। দলের বুদ্ধিজীবী ও তৃণমূল পর্যায়ে এ নিয়ে পরিলক্ষিত হয়েছে বিরূপ্র প্রতিক্রিয়া। বিষয়টির উৎপত্তি ও প্রণয়ন সম্পর্কে বলতে গেলে কেউই কিছু পরিষ্কারভাবে জানেন না।

বিএনপি মহলে অনুসন্ধানের পর জানা যায়, একটি বিশেষ টিম অতি সন্তর্পনে কাজটি করেছে। এ কার্যক্রমে দলের গুটিকয় নেতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মাত্র একজন বুদ্ধিজীবী, যিনি একদা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে অবসর নিয়েছেন।

১/১১-এর সময় এই বুদ্ধিজীবী ছিলেন ফৌজি শাসক জেনারেল মইনের সার্বক্ষণিক ছায়াসঙ্গী। জেনারেলের গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব করেছিলেন তিনি এবং জেনারেলকে একজন ‘ভালো ও যোগ্য সামরিক শাসক’ হিসাবে প্রমাণ করতে অসংখ্য টিভি টক শো ও সেমিনারে মুখে ফেনা তুলে বক্তব্যও রেখেছিলেন।

‘নোয়াখালী বাড়ি হওয়ার কারণে তার সাত খুন মাফ হয়ে গেছে’,  ক্ষোভের সঙ্গে জানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিএনপিপন্থি তরুণ শিক্ষক বলেন, ‘ত্যাগী ও পরীক্ষিতরা নয়, এসব দুধের মাছিরাই এখন বিএনপি চালাচ্ছে। এদের প্রণীত পরিকল্পনার প্রতি দলের নেতা-কর্মীরা আস্থাশীল হবে বলে আমার মনে হয় না। ’

ভিশন ২০৩০ সম্পর্কে বেশ কয়েকজন বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে যোগযোগ করে বিশেষ কিছুই জানা যায়নি। ‘বিষয়টি দলীয় বা বুদ্ধিজীবী ফোরামে আলোচনা হয়নি। আপনারা যতটুকু জানেন, আমরাও তাই জানি। ’ নিজের অজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি সমর্থক সাদা দলের একজন নেতা।

বিএনপি আমলে সরকারের বিভিন্ন পদে ছিলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন একজন প্রবীণ শিক্ষক ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘কোন কর্মসূচি প্রণয়নের একটি প্রক্রিয়া আছে। সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতেই সেটা করতে হয়। গোপনে প্রস্তুত করে চাপিয়ে দেওয়া হলে তা ফলপ্রসূ হওয়ার কোনো কারণ নেই। ’

নয়া পল্টনে নিয়মিত আসা-যাওয়া করেন, বিএনপির মাঝারি পর্যায়ের এমন কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপকালেও ভিশন ২০৩০ সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কিছুই জানা যায়নি। ‘আমরাও শুনছি। কিন্তু কিছুই জানি না। ’ বলেন একজন।

তিনি আরো বলেন, ‘আমি বিষয়টি নিয়ে মোটেও আশাবাদী নই। এই মুহূর্তে বিএনপির কি প্রয়োজন তেমন রাজনৈতিক দিক-নিদের্শনার বদলে এক যুগ পরের ২০৩০ সালের স্বপ্ন হাজির করা কোনো কাজের কাজ হতে পারে না। ’

দুঃখের সঙ্গে আরেক জন বলেন, ‘দলের নেতা-কর্মীরা যখন মামলায় আক্রান্ত ও জেলে আটক, তখন অ্যাকশন প্ল্যানের বদলে অ্যাকাডেমিক প্রবন্ধ দিয়ে কি হবে? এইসব করে দলকে আরো স্থবির এবং দলের জনশক্তিকে দিকভ্রান্ত করা হচ্ছে। ’

বিএনপি আমলে রাষ্ট্রদূত ও উপাচার্য ছিলেন, এমন দুইজন বিশিষ্টজন এ প্রসঙ্গে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে মন্তব্য করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের একজন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা জানি না, হঠাৎ করে কার কথায় এসব মুখ-ভরা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও প্রকাশ করা হচ্ছে। এটি করার যথেষ্ট উপযুক্ত সময় এখন কিনা সেটাও বিবেচনা করতে হবে। বর্তমান বিএনপি’র সেই শক্তি ও সামর্থ্য আছে কিনা, সেটাও ভাবতে হবে। বাস্তবতার বাইরে পরিকল্পনা দিলে সেটা অর্থহীন বলে সবার কাছে মনে হবে। ভঙ্গুর দলটিকে গোছানো ও বিশৃঙ্খল সংগঠনটিকে সাজানোই যখন জরুরি কাজ ছিল, তখন এক-গাদা উচ্চাভিলাষী প্রতিশ্রুতির চক্করে সবাইকে ঠেলে দেওয়ার কারণ সম্পর্কে আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না। ’

অপর এক বিশিষ্টজনের মতে, ‘দলকে যারা মাঠে যাওয়ার বদলে ঘরে আটকে রাখতে চায়, এসবের পেছনে সেই স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর হাত আছে। ’

বিএনপি’র নানা পর্যায়ে কথা বলেও হতাশার সুর শোনা গেছে। রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র একজন নেতার সঙ্গে টেলিফোনে যোগযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘এই ভিশন ২০৩০ গণতান্ত্রিকভাবে দলের সর্বস্তরের মতামতের ভিত্তিতে করা হয়নি। দলনেত্রী বিগত কাউন্সিলে ভিশনের কথা বলেছিলেন। কিন্তু কোনো উপ-কমিটি গঠন করেন নি বা দলের নেতা-কর্মীদের মতামতও সংগ্রহ করা হয়নি। গুটিকতক বিতর্কিত মানুষের হাতে একটি বড় দলের ভিশন তৈরি হতে পারে না। হলেও সেটা দলের জন্য কার্যকর কোনো কিছু হবে না। দলের নেতা-কর্মীদের অভিমতের প্রতিফলনহীন পরিকল্পনা একটি কাগুজে বাঘ ছাড়া আর কিছুই হবে না। ’

তিনি স্পষ্টতই মনে করেন, ‘এইসব ফিরিস্তি দলের গতিশীলতা বাড়ানোর বদলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে। কারণ নেতা-কর্মীদেরকে এ ব্যাপারে কোনোই পূর্ব-ধারণা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। ভিশনের অনেক কথাই সাধারণ নেতা-কর্মীদের কাছে বোধগম্য নয়। ’

বিএনপির স্থবির রাজনীতিতে ভিশন ২০৩০ চমক ও আশাবাদ জাগাবে বলে মনে করা হলেও দলের ভেতরের এমন দ্বিধাগ্রস্ত মনোভাবের উপস্থিতি থাকায় তা সম্ভব হবে বলে মোটেও আশা করছেন না রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। আগেভাগে যথেষ্ট হোমওয়ার্ক ও পূর্ব-প্রস্তুতি না নেওয়ার আলামত ভিশনের গোড়াতেই পরিলক্ষিত হওয়ায় এর ভবিষ্যত কার্যকারিতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ প্রকাশ করছেন রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।